1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপের ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য একটি সতর্কবার্তা

৮ জুলাই ২০২০

ইউরোপে ইহুদি ও মুসলিমদের ওপর চাপ বাড়ছে৷ এর কারণ কয়েকটি আইন যা এখন লুক্সেমবুর্গে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস (ইসিজে) খুঁটিয়ে দেখছে৷ ডয়চে ভেলের ক্রিস্টোফ স্ট্র্যাকের মতে, ইউরোপে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে৷

Großbritannien Halal-Fleisch-Metzgerei in London
ছবি: picture alliance/empics/D. Lipinski

ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালত ইসিজে আগামী বুধবার লুক্সেমবুর্গে একটি মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে৷ তা হল, ইউরোপীয় পরিচয়- ধর্মের স্বাধীনতা৷ এদিকে, জার্মানিতে ইহুদি ও মুসলিমরা তাদের অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে, এমনকি ইউরোপে তাদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানও ঝুঁকির মুখে৷

এই যেমন কেস সি ৩৩৬/১৯-তে অচেতন না করে পশু কুরবানির ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷ এভাবে পশু কুরবানি বেলজিয়ামে ২০১৯ সাল থেকে নিষিদ্ধ, প্রথমে ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চলে এবং পরে ওয়ালোনিয়াতেও৷ বেলজিয়ামে নিষিদ্ধের এই আইনি প্রক্রিয়া শেষ হবার পর সেখানকার সাংবিধানিক আদালত একে ইসিজেতে পাঠিয়েছে যেন তারা ইইউ চার্টারে যে মৌলিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না যাচাই করে৷ লুক্সেমবুর্গে শুনানি চলছে৷এ ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে, ইউনরোপের ন্যায়বিচার আদালত ধর্মীয় স্বাধীনতাকে অধিক গুরুত্ব দেয় কি না৷

তাহলে কি ধর্ম স্বাগত নয়?

আগে কখনো ইউরোপের রাব্বীদের (ইহুদি ধর্মগুরু) সমাবেশ ও মুসলিম বিশ্ব লীগ এমন সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একসঙ্গে কথা বলেনি৷ এই প্রথম একটি চিঠিতে একসঙ্গে রাব্বীদের প্রধান নেতা পিনচাস গোল্ডস্মিডট ও মুসলিম বিশ্ব লীগের মহাসচিব শেখ মোহাম্মেদ আল-ইসা মতামত দেন৷ দু'জনই মনে করেন, এক্ষেত্রে তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ক্ষু্ণ্ণ হচ্ছে৷

‘‘যদি বেলিজিয়ামের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকে, তাহলে ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের যে বার্তা দিচ্ছে তা পরিষ্কার: ‘আপনারা এখানে স্বাগত নন','' এমন কথা বলা হয়েছে চিঠিতে৷ আরো বলা হয়েছে, ‘‘যদি খাবার খাওয়াকেই অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারিনা যে, ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো ইউরোপে থাকবে এবং সমাজে তাদের অবদান রাখবে৷''

অবশ্যই আপনারা এই মতামতকে এড়িয়ে যেতে পারেন এই বলে: মস্কো থেকে আসা একজন প্রথাগত রাব্বী ও ইসলামের একজন সৌদি প্রতিনিধির কথা আমরা কেন শুনব? কিন্তু এটা ভুললে চলবে না যে, পুরোনো শত্রুতার ভাবমূর্তি দূরে ঠেলে সম্পূর্ণ দুই মেরুর দু'জন সংলাপে মেতেছেন৷ মোটের ওপরে, আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা আছে, এমন একটি আন্দোলন তৈরি হয়েছে যা দুর্ভাগ্যবশত খুব কম রাজনৈতিক নেতাই ভাবছেন বা এমনকি লক্ষ্য করছেন৷ এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে জাতীয় ও ইউরোপীয় পর্যায়ে খুব কম লোকই ভাবেন৷

দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে ধর্মীয় স্বাধীনতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একত্রিত হবার যে ইউরোপীয় ধারণা, তাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ খ্রিস্টানরা ছিলেন মূল চালিকাশক্তি: কনরাড আডেনাওয়ার, আলচিডে দ্য গাসপেরি, রবার্ট শুমান৷ তাদের ইউরোপে অবশ্যই ধর্ম ও ধর্মের স্বাধীনতা একটি বিষয় ছিল৷ কিন্তু এখন? কয়েক সপ্তাহ আগে, জার্মানির উরসুলা ফন ড্যের লেইয়েন নেতৃত্বাধীন ইইউ কমিশন সারাবিশ্বের জন্য তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির পদটি বাতিলের ঘোষণা দিল৷ আরেকটি উদাহরণ হল, ইস্তানবুলের আয়া সোফিয়া, যা বিশ্বজুড়ে অর্থডক্স খিস্ট্রানদের প্রতীক এবং কয়েক দশক ধরে একটি মিউজিয়ম, একে তুরস্কে এরদোয়ানের ইসলাম অধিগ্রহণ করতে চাইছে৷ ইইউর শীর্ষস্থান থেকে এসব বিষয়ে কোন কণ্ঠস্বর আছে? বার্লিন বা প্যারিস থেকে? না নেই! এর অর্থ এই বিষয়ে ইসিজে বিচারকদের আলাপ-আলোচনা একটি বড় ফ্রেমওয়ার্কের অংশ৷

ক্রিস্টোফ স্ট্র্যাক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/B. Geilert

গোল্ডস্মিডট ও আল-ইসা, একজন ইহুদি ও একজন মুসলিম, তাদের আপীলে পরিষ্কারভাবে ও সময়োপযোগীভাবে যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তা হল ধর্মীয় নিয়মে খাবার গ্রহণ (ধর্মীয় উপায়ে পশু কুরবানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে) আর সম্ভব হবে না৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেও এমন নিষেধাজ্ঞার রেফারেন্স তুলে বলা হয়, ‘এটি ইউরোপজুড়ে ইহুদিদের কোণঠাসা করে দেয়া হয়'৷ এরপর ঘটনা প্রবাহ কোনদিকে গিয়েছে তা আমরা জানি৷

‘ইউরোপের মূল নীতি লঙ্ঘন'

‘‘যদিও ধর্মীয় স্বাধীনতা ইউরোপীয় গণতন্ত্রে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যদি ব্যক্তি ও সম্প্রদায়গুলো তাদের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন না করতে পারেন, তাহলে তা অর্থহীন,'' ধর্মীয় প্রতিনিধিরা সতর্ক করেন৷ আর কেউ যদি মুসলিমদের হালাল ও ইহুদিদের কোসার খাবার খেতে বারণ করেন, তাহলে তিনি ‘ইউরোপের মূল নীতি লঙ্ঘন করছেন'৷

লুক্সেমবুর্গ বিচারকদের আলোচনা এক বিষয় (এবং প্রায়োগিক আইন নিয়ে বিচারিক আদালতের রায় ও ব্যাখ্যাকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে)- আর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো অন্য বিষয়৷ তাই ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং এক্ষেত্রে কোথায় ছাড় দেয়া হবে তার এমন পরিষ্কার ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন যে ধর্মীয় কারণে চেতনানাশক না প্রয়োগ করে পশু কুরবানিকে অনুমোদন দেয়া যায়৷ কারণ জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় প্রতিনিধিদের পরিষ্কার বার্তা দেয়ার এমন বিরল ঘটনা আসলে ক্লান্ত ও আত্মনির্ভরশীল ইউরোপের জন্য একটি সতর্কবার্তা৷

ক্রিস্টোফ স্ট্র্যাক/জেডএ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ