শুক্রবার রাত থেকে ইইউর রপ্তানিকৃত ৭৫০ কোটি ডলারের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক বসাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর ফলে চিজ, মদ, জলপাই থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়বে দেশটিতে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের বিভিন্ন পণ্যের উপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে৷ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে৷ এর আগে গেল সোমবার ওয়াশিংটনকে এই পদক্ষেপ নেয়ার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা৷
উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসকে অন্যায্য ভর্তুকি দিয়ে আসায় দীর্ঘ পনের বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল মার্কিনিরা৷ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তাদের সিদ্ধান্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে৷ ইউরোপের সাড়ে সাতশো কোটি ডলারের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের সুযোগ দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রকে৷ ১৮ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে তখনই বিবৃতিতে জানিয়েছিল ইউএস ট্রেড রিপ্রেসেন্টেটিভের দপ্তর৷
পরিকল্পনা অনুযায়ী এয়ারবাসের উড়োজাহাজ আমদানিতে ১০ ভাগ, ফরাসি মদ, ইতালির চিজ ও স্কটিশ হুইস্কিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যে ২৫ ভাগ শুল্ক বসবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে স্বভাবতই ভালভাবে নিচ্ছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ফরাসী অর্থমন্ত্রী ব্রুনো ল্য ম্যার বৃহস্পতিবার বলেছেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে৷ যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘অবরোধের’ প্রতিশোধ হিসেবে ইউরোপীয়রা কয়েক মাসের মধ্যেই এর চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিবে বলে জানান তিনি৷ তবে এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই করা হবে বলে আভাস দেন মায়ার৷
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তাদের দেয়া সিদ্ধান্তে বলেছে, এয়ারবাসকে অবৈধভাবে কয়েকশো কোটি ডলারের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে৷ যার কারণে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী উড়োজাহাজ নির্মাতা যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংয়ের বিপরীতে অন্যায্য সুবিধা ভোগ করেছে৷ এয়ারবাসের নির্মাতা দেশগুলোর মধ্যে আছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং স্পেন৷ তাদের উপর অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় তাই বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হবে৷
এর ফলে স্কচ হুইস্কি, পারমেজান চিজের মতো ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষ পরিচিত পণ্যগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে একই ধরণের পণ্যের সাথে তাদেরকে এখন বাড়তি প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে৷ তবে যন্ত্রপাতিসহ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোকে শুল্ক আরোপের তালিকার বাইরে রেখেছে ওয়াশিংটন৷
এফএস/কেএম (এএফপি, এপি, রয়টার্স)
গত বছর মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো৷
ছবি: Imago/Ralph Peters
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে৷ বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Peter
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল৷ ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/Library of Congress
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না৷ কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে৷ ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
ছবি: picture-alliance/K. Ohlenschläger
পালটা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না৷ ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প যদি সত্যি আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপান, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও ইতিবাচক হবে না৷ যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে৷ তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে৷ যে কোম্পানিগুলি ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Weihrauch
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে৷ স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে৷ সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সাম্প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/XinHua
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাব্লিইউটিও সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে৷ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে৷ সব পক্ষ ডাব্লিইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে৷ এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না৷