টিউনিশিয়ার গণমাধ্যমে প্রায় ২০ বছর কাজ করেছেন ইনসাফ বুঘদিরি৷ এরপর নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে সাব-সাহারা আফ্রিকার দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ এখন তিনি রুয়ান্ডায় কাজ করছেন৷
কতজন টিউনিশীয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেইছবি: Yassine Gaidi/AA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
তিন মাসের পরীক্ষামূলক মেয়ার শেষে প্যান-আফ্রিকান ফার্মার্স অর্গানাইজেশনের প্রেস বিভাগে দুই বছরের চুক্তিতে এখন কাজ করছেন বুঘদিরি৷
বুঘদিরির মতো টিউনিশিয়ার হাজার হাজার মানুষ এখন উন্নত জীবনের আশায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন৷ টিউনিশিয়ার আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ৭০ শতাংশই দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে৷
বিদ্রোহ পরবর্তী টিউনিশিয়া কেমন আছে?
আরব বসন্তের শুরু টিউনিশিয়া থেকে৷ বেকারত্বের উচ্চহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল দেশের মানুষ৷ সফলও হয়েছিল৷ কিন্তু এখন কেমন আছে দেশটি?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Salah Habibi
আন্দোলন
পোস্টারের ছবিতে যাঁকে দেখছেন সেই মোহামেদ বুয়াজিজির আত্মহত্যার পর সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল৷ বুয়াজিজি ফুটপাতে ব্যবসা করতেন৷ ২০১০ সালের ১৭ ডিসম্বের সকালে সরকারি এক কর্মচারী তাঁর বিক্রিপণ্য বাজেয়াপ্ত করায় এবং এই বিষয়ে বুয়াজিজি কোথাও অভিযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর আত্মহত্যা করেছিলেন৷ এরপর আন্দোলন শুরু হলে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিনে এল আবিদিন বেন আলি৷ তিনি ২৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Salah Habibi
বাকস্বাধীনতা
প্রেসিডেন্ট বেন আলির বিরুদ্ধে আন্দোলনের একটি অন্যতম কারণ ছিল বাকস্বাধীনতার অভাব৷ তবে বিদ্রোহ সফল হওয়ায় এখন মন খুলে কথা বলা যাচ্ছে বলে টিউিশিয়ার অনেক নাগরিক মনে করছেন৷ ছবিতে রাজধানী টিউনিশের একটি রেস্তোরাঁ দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে বসে ক্রেতারা আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নিতে পারছেন৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
রাজনৈতিক হত্যা
ধর্মনিরপেক্ষতার সমর্থক দুই রাজনীতিবিদ মোহামেদ ব্রাহমি ও শোকরি বেলাইদকে ২০১৩ সালে হত্যা করা হয়৷ ঘটনাটি সেইসময় পুরো দেশকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল৷ এখন সুবিচারের দাবিতে টিউনিশে বিক্ষোভের ঘটনা নিয়মিত হয়ে উঠেছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
আইএস-এর প্রভাব
দেশটির সীমান্তে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এর বিরুদ্ধে টিউনিশিয়াকে লড়তে হয়েছে৷ এছাড়া ঐ জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করাদের একটি বড় অংশ টিউনিশিয়া থেকে গিয়েছে৷ ২০১৫ সালে দেশটিতে দুটো বড় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল৷ এর একটি হয়েছিল জাতীয় জাদুঘরে (ছবি)৷ এতে প্রাণ যাওয়া ২৪ জনের মধ্যে ২০ জনই ছিলেন পর্যটক৷ আরেক হামলা হয়েছিল সুস নামের এক পর্যটন এলাকায়৷ এই দুই হামলার পর দেশটির পর্যটন শিল্প ক্ষতির মুখে পড়েছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ফুটবলের জনপ্রিয়তা
টিউনিশিয়ায় ফুটবল খুব জনপ্রিয়৷ সেটি নিয়ে নীতি নির্ধারকরাও এত ব্যস্ত থাকেন যে, বিদ্রোহ পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ টিউনিশিয়ার কিছু তরুণের৷ ছবিতে দেয়ালে দুটি ফুটবল ক্লাবের সমর্থকদের কাণ্ডকীর্তি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
নারী অধিকার
নারীর প্রতি সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে গত ফেব্রুয়ারি থেকে একটি আইন কার্যকর হয়েছে৷ ছবিতে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম ওয়াফা ফ্রাউয়িস৷ ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ বিদ্রোহ পরবর্তী দেশের সংবিধান রচনায়ও তিনি অবদান রেখেছেন৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
উন্নত জীবনের প্রত্যাশা
আফ্রিকার অনেক দেশের মতো টিউনিশিয়া থেকেও অনেকে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ পাড়ি দিতে ইচ্ছুক৷ ২০১৭ সালে প্রায় ৬,০০০ টিউনিশীয় সাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি পৌঁছেছিলেন৷ ২০১১ সালের বিদ্রোহের পর এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ৷
ছবি: DW/Benas Gerdziunas
মৃত্যু
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে টিউনিশিয়ার শত শত নাগরিকের প্রাণহানি হচ্ছে৷ ফলে দেশটির উপকূলের অনেক স্থানে চিহ্নবিহীন কবরস্থানের দেখা পাওয়া যাচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
8 ছবি1 | 8
তবে বুঘদিরি যখন দেশ ছাড়ার কথা ভাবছিলেন তখন ইউরোপে যাওয়ার কথা ভাবেননি৷ ‘‘ওখানে যেতে অনেক ধরনের কাগজনের প্রয়োজন হয়৷ এসব না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
রুয়ান্ডা যাওয়ার আগে দেশটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানতেন না বুঘদিরি৷ এখন সেখানে কাজ করতে গিয়ে দেশটি ভালো লেগেছে তার৷
সাম্প্রতিক সময় টিউনিশিয়ার প্রায় ১৭ লাখ নাগরিক কাজের সন্ধানে বিদেশ গিয়েছেন৷ এদের ৮০ ভাগই গেছেন ইউরোপে৷ এছাড়া চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও ভারতেও গেছেন অনেকে৷
ঠিক কতজন টিউনিশীয় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না৷ তবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল টিউনিশীয়দের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷
টিউনিশিয়ান ফোরাম ফর সোশ্যাল অ্যাণ্ড ইকোনমিক রাইটসের রমাদান বেন ওমর ডয়চে ভেলেকে জানান, টিউনিশিয়ার চাকরিপ্রার্থীরা এখন শুধু উত্তরের দিকে (ইউরোপ) তাকিয়ে থাকেন না৷ ‘‘আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট ও শ্রমিকদের অনেক চাহিদা তৈরি হয়েছে,'' বলে জানান তিনি৷
আনিস বেলিদি ২০১৮ সালে টিউনিশিয়া ছেড়ে গ্যাবনে যান৷ তার প্রথম লক্ষ্য ছিল তিনি প্যারিস যাবেন৷ কিন্তু সেটা কঠিন হওয়ায় তিনি গ্যাবন যান৷ এখন তিনি সেখানে টিউনিশিয়ার চেয়ে ভালো আছেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানান৷
চীনের নতুন সিল্ক রুট নেটওয়ার্কের কারণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে বর্তমানে ভালো আর্থিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে বলে জানান বেন ওমর৷ চলতি দশকেও এই ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আশা করছেন তিনি৷
সেনেগালের ডাকারে বাস করা টিউনিশীয় নাগরিক সোনিয়া মুনির বেন ওমরের সঙ্গে একমত পোষণ করেন৷ মুনির একজন সাইকোথেরাপিস্ট৷ ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্সের হয়ে তিনি ১১ বছর পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন৷ বর্তমানে ডাকারে ঐ সংস্থার প্রজনন স্বাস্থ্য বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন৷
শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে মুনির চাইলে হয়ত ইউরোপে কাজ পেতেন৷ কিন্তু তিনি নিজে সেটা চাননি৷ ‘‘আমি সেনেগালে বাস করতে চেয়েছি৷ আমার এখানে কাজ করতে ভালো লাগে৷ জীবন এখানে আনন্দময়৷ অবসর সময় কাটানোর অনেক সুযোগ এখানে আছে'' ডয়চে ভেলেকে বলেন মুনির৷
টিউনিশিয়ার অনেক কোম্পানিও এখন আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন দেশে আঞ্চলিক কার্যালয় ও শাখা খুলছে৷ সেসব অফিসেও টিউনিশিয়ার নাগরিকরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন৷