করোনা সংকটে বিপর্যস্ত অর্থনীতির সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য যে সব ছাড় দিচ্ছে তার বেশিরভাগ সুবিধা পাচ্ছে জার্মানির মতো ধনী দেশগুলো৷
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ইইউর একক বাজারে ধনী রাষ্ট্রগুলো অন্যায্য সুবিধা পেতে যাচ্ছে৷ আর গরীব রাষ্ট্রগুলোকে আরো গরীব হওয়ার পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে?
অথচ ইইউ গঠনের অন্যতম মূল লক্ষ্যগুলোর একটি হলো ইউরোপের একক বাজারে এমন একটি সমতার পরিবেশ তৈরি করা যাতে সব দেশ সমান সুবিধা পায়৷
করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সংক্রমণের বিস্তার রোধে লকডাউনের কারণে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ ইউরোপওে এর ব্যতিক্রম নয়৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে সরকার নানা সেক্টরে প্রণোদনার মাধ্যমে তরল অর্থের যোগান দেয়৷ যাতে ব্যবসায়ীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন৷
একক বাজারে ভারসাম্য রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাষ্ট্রের অর্থ সহায়তায়র ক্ষেত্রে এতদিন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল৷ কিন্তু করোনা ভাইরাস হানা দেওয়ার পর গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে ওই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত ১.৯ ট্রিলিয়ন ইউরোর বেশি ‘ন্যাশনাল স্কিম’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ বলাই বাহুল্য, এতে ধনী এবং অপেক্ষাকৃত কম ঋণগ্রস্ত দেশ নিজ নিজ অর্থনীতিতে বেশি অর্থ ঢালার সুযোগ পাচ্ছে৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে কোন দেশ কী করছে
করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে৷ প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়াসহ আছে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কা৷ তবে উন্নত দেশগুলো এই পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Jordan
জার্মানি
সব ধরনের কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১১০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে জার্মান সরকার৷ দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মোট ৮০ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে দেয়া হচ্ছে কর-ছাড়৷ দেরিতে ঋণ পরিশোধে গুণতে হবে না জরিমানা৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে দেয়া হবে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো৷
অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে স্পেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানি, কর্মী আর আর্থিক অস্বচ্ছলদের সুরক্ষায় এই অর্থ ব্যয় করা হবে৷ এর মধ্যে শুধু সামাজিক নিরাপত্তায় খরচ করা হবে প্রায় ৬৪ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AAB. Akbulut
পর্তুগাল
১৮ মার্চ থেকে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে পর্তুগাল৷ এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এরমধ্যে ৩২২ কোটি ডলার পর্যটন, বস্ত্র, কাঠসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঋণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে৷ ৫৩৬ কোটি ডলার আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে কর সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে৷
ছবি: Reuters/M. F. Lopes
ফ্রান্স
প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার সহায়তা তহবিলের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফ্রান্স সরকার৷ এর বড় একটি অংশ দেয়া হবে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে৷ রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না, তাদের জন্য কয়কশ’ কোটি ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin
যুক্তরাজ্য
করোনা ভাইরাসের কারণে ১৪৫০ কোটি ডলারের জরুরি আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য৷ জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এবং সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকসান মেটাতে এই টাকা দেয়া হবে৷ পাশাপাশি খুচরা ব্যবসা এবং পর্যটন শিল্পের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ঋণ তহবিলও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Video
যুক্তরাষ্ট্র
সম্প্রতি ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে সেনেট৷ স্বাস্থ্য বিমা ছাড়াই করোনার পরীক্ষা করানো, স্কুলগামী শিশুদের জন্য খাবার সরবরাহ, কর্মীদের ১০ দিনের অসুস্থতাজনিত এবং কিছু ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের বেতনসহ ছুটির পেছনে এই টাকা ব্যয় হবে৷ পাশাপাশি এক ট্রিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যকেজের জন্য আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Reuters/L. Millis
ক্যানাডা
ক্যানাডার জন্য পাঁচ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এই অর্থ দেশটির জিডিপির তিন শতাংশ ৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর-ছাড়, কর্মীদের বেতন, সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ব্যয় হবে এই অর্থ৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Sudoma
অস্ট্রেলিয়া
১১০০ কোটি ডলারের আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার৷ ৬৫ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকে এককালীন ৪৫১ ডলার করে দেয়া হবে এই তহবিল থেকে৷ পাশাপাশি এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষানবিশ চাকুরিজীবী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতেও খরচ করা হবে এখান থেকে৷ অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ঋণের সুদহার কমিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carrett
তুরস্ক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ১৫৪০ কোটি ডলারের ব্যয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তুরস্ক৷ ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা’ শিরোনামের এই প্যাকেজটির আওতায় মোট ২১ টি খাতে খরচ করা হবে৷ এর মধ্যে অবসরকালীন ভাতা বৃদ্ধি, ব্যবসা সহযোগিতা, মূল্য সংযোজন কর হ্রাসসহ খুচরা, ইস্পাত, গাড়ি ও পর্যটন শিল্পে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Ozbilici
9 ছবি1 | 9
ইইউ-র মোট জিডিপিতে জার্মানির অবদান প্রায় একচতুর্থাংশ এবং কমিশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাষ্ট্রের সহায়তার জন্য ইইউ যে পরিমাণ অর্থ অনুমোদন দিয়েছে তার ৫২ শতাংশ জার্মান সরকার করিয়েছে৷
দ্বিতীয় স্থানে আছে যৌথভাবে ফ্রান্স ও ইতালি৷ দুটি দেশ ১৭ শতাংশ অর্থের অনুমোদন নিয়েছে৷ ইইউ কমিশন ২০২০ সালের বাকি সময়ে পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ স্থগিত রাখা পরিকল্পনা করেছে৷
এ বিষয়ে স্পেনের একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এর ফলে স্পষ্টতই ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বাজার ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে৷ ‘‘কারণ সব দেশের পক্ষে নিজ নিজ বাজারে এভাবে তরল অর্থের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে না৷ জার্মানি ধনী দেশ, তাই তারা এটা পারবে৷’’
জার্মান সরকার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে খেলাধূলার সামগ্রী বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসকে তিনশ কোটি ইউরো ঋণ দেবে৷ এছাড়া, সরকার এইমধ্যে হলিডে অপারেটর টিইউআই কে ১৮০ কোটি ইউরো ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন লুফৎহানসাকে নয়শ কোটির ইউরোর ঋণ প্যাকেজ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ অন্যান্য কোম্পানিগুলোকে কমবেশি সহায়তা করা হচ্ছে বা হবে৷
ইটালিয়ান ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস ইউনিয়ন এএনপিএভি-র কার্লো আমাতি বলেন, ‘‘ইউরোপের কিছু দেশ ঝুঁকিতে থাকা এয়ারলাইন্সের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা দেয়া নিয়ে যে আলোচনা করছে তাতে এই সেক্টরে প্রতিযোগিতা বলে আর কিছু থাকবে না এবং এই সেক্টর যখন আবার চালু হবে তখন কেউ কেউ অনেক বেশি সুবিধাজনক স্থানে থাকবে৷
‘‘বরং কোভিড-১৯ শুরুর আগে বাজারে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের যে অবস্থা ছিল সেটা বজায় রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত৷’’
এসএনএল/কেএম (রয়টার্স)
করোনা যেভাবে পালটে দিচ্ছে কৃষি
করোনা লকডাউন মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে৷ এর বাইরে নয় কৃষিও৷ ছবিঘরে দেখুন কৃষি ও পশুপালনে কী প্রভাব ফেলছে এই মহামারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
খামারে পশুপালন নিয়ে ভাবনা
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত৷ মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
বন্যপ্রাণীর ব্যবসা
এখন পর্যন্ত গবেষকেরা ধারণা করছেন নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে৷ মহামারির আগে বন্যপ্রাণীর বিশাল ব্যবসা সম্পর্কে মানুষের ধারণা কমই ছিল৷ কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৯ হাজার বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
স্থিতিশীল খাতের সন্ধানে
মহামারি আমাদের খাদ্য সরবরাহেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে৷ লকডাউন ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধের ফলে এই খাত স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের কাছে খাবার সরবরাহে নানা পন্থা বেছে নিয়েছে৷ পশুচারণ থেকে শুরু করে শ্রমিক সংকট সবক্ষেত্রেই কৃষকেরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের অপেক্ষা সব স্বাভাবিক হওয়ার অথবা বিকল্প কোনো পথ খুঁজে নেয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শহুরে চাষবাস বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এখন বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন৷ তাদের অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় সীমিত পরিসরে হলেও কৃষি কাজ করছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শহরে বাস করবে৷ ফলে তখন শহুরে চাষবাস ও খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও জমির চাহিদার কারণে পরিবেশে তা ভালো প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Imago/UIG
প্রকৃতির ওপর চাপ কমছে
২০৫০ সালের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছাড়াবে ১০০০ কোটি৷ ফলে খাবারের উৎপাদনও বাড়াতে হবে সে হারেই৷ এতদিন কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানোকেই এর একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ কিন্তু শহরে চাষাবাদ বাড়তে থাকায় এই সংকটের নতুন সমাধান মিলতে পারে৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
উদ্ভিজ্জ আমিষের খোঁজ
মাংসের চাহিদা যত বাড়ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে উদ্ভিজ্জ পণ্য়ের দিকে মানুষ ঝুঁকছে৷ পশ্চিমা দেশগুলোতেও বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ করোনা ভাইরাস মহামারি এই প্রবণতা আরো ত্বরান্বিত করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Neibergall
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রভাব ফেলবে বেশি৷ জাতিসংঘ এরইমধ্য়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ দুর্ভিক্ষ রোধে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ, খাবার সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের শস্যের চাষ, কৃষি জমির সুরক্ষাসহ নানা দিক নিয়ে ভাবতে হবে দেশগুলোকে৷