‘সেই ঢাকা মেল নেই তো আর...’ শুধু বাংলাদেশের রাজধানী নয়, ইউরোপের অনেক শহর সম্পর্কেও অসংখ্য গান লেখা হয়েছে৷ সংখ্যার ভিত্তিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে এমন একটি শহর, যাকে নিয়ে ২০,০০৭টি গান লেখা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপে পাঁচটি শহর সম্পর্কে এত যে গান লেখা হয়েছে, অনেকেরই সে বিষয়ে হয়ত কোনো ধারণা ছিল না৷
ইটালির মিলান শহর শুধু ফ্যাশনের জন্যই বিখ্যাত নয়, সংগীতকেন্দ্র এবং দু-দু'টি বড় ফুটবল ক্লাবও সেখানে অবস্থিত৷ সবচেয়ে বেশি গান বাঁধা হয়েছে, ইউরোপে এমন শহরের তালিকায় মোট ৩,৮৫৪টি গান নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে মিলান৷
নিজেদের রাজধানী শহরের সঙ্গে জার্মানদের অম্লমধুর সম্পর্ক৷ অন্তত একটি গানের কথায় তার প্রতিফলন দেখা যায় – ‘আমি বার্লিনে যাবো না’৷ তবে বার্লিনবাসীর কাছে তাদের শহর সারা বিশ্বের সেরা৷ তবে ৬,২৬৭টি গান নিয়ে বার্লিন চতুর্থ স্থানে রয়েছে৷
ইটালির রাজধানী রোম চিরন্তন শহর হিসেবে পরিচিত৷ একবার গেলে বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে৷ অনেক গানের মধ্যে তার সৌন্দর্য ও ‘লা দলচে ভিটা’-র উল্লেখ রয়েছে৷ এমনকি এলভিস প্রেসলিও রোম নিয়ে গান বেঁধেছেন৷ ১১,৮৫৯টি গান নিয়ে ইটালির রাজধানী শহর তালিকার তৃতীয় স্থান দখল করেছে৷
বহু দশক ধরে নানা ব্যান্ড ও সংগীতশিল্পী এই শহরেই থেকেছেন, কাজ করেছেন৷ অতএব বলা বাহুল্য, এই শহর নিয়ে তো তাঁরা গান বাঁধবেনই৷ যেমন অ্যাডেল লন্ডনেই জন্মগ্রহণ করেছেন৷ অথবা এড শিরান, যাঁকে এই শহরে এসে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়েছে৷ ব্রিটেনের রাজধানী ১৩,৮০৫টি গান নিয়ে ইউরোপীয় তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷
এডিট পিয়াফ তাঁর শহরকে বড় ভালোবাসতেন৷ বিষণ্ণতা ও রোমান্টিক মেজাজ নিয়ে প্যারিস সম্পর্কে বার বার গান লেখা হয়েছে৷ মার্কিন গায়িকা এলা ফিৎসজেরাল্ড-ও এমন গান বেঁধেছেন৷ ২০,০০৭টি গান নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে প্যারিস৷ কারণ ফ্রান্সের রাজধানী প্রেম-ভালবাসার রাজধানী হিসেবেও পরিচিত৷ প্যারিস নিয়ে লেখা বেশিরভাগ গানের বিষয়ও ভালবাসা৷ সংগীতশিল্পীরা এমনকি প্যারিসের রাস্তার প্রেমেও পড়েছেন৷
মাইকে ক্র্যুগার/এসবি
ইউরোপের দশটি চোখ ধাঁধানো কনসার্ট হল
ইউরোপ কেন, দুনিয়া জুড়ে বড় বড় শহরের কনসার্ট হল শুধু গানবাজনা শোনার জায়গাই নয়, আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শনও বটে৷ তারা নিজেরাই পর্যটকদের টানে৷
ছবি: picture alliance/Arcaid/S. Ellingsen
কিলডেন পার্ফর্মিং আর্টস সেন্টার, নরওয়ে
কিলডেন পার্ফর্মিং আর্টস সেন্টার, নরওয়ে
কনসার্ট হলটি জলের ধারে৷ সামনেটা ১০০ মিটার লম্বা একটা কাচের দেয়াল, তার ওপর ঝুলছে ওক কাঠের সোনালি রঙের এক পর্দা, যেন থিয়েটারের যবনিকা৷ তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১২ সালে৷ মোট এলাকা ১৬৫,০০০ বর্গমিটার৷ এখানে নাটক, অপেরা বা সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা সব কিছুই অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture alliance/Arcaid/S. Ellingsen
ফিলহার্মনি দ্য পারি, ফ্রান্স
এমন একটি কনসার্ট হলের আইডিয়া প্রথম এসেছিল নামকরা অর্কেস্ট্রা পরিচালক পিয়ের বুলে ও পুরস্কার বিজয়ী স্থপতি জঁ নুভেলের মাথায়৷ উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালে৷ অ্যালুমিনিয়ামের সম্মুখভাগটি তিন লাখ চল্লিশ হাজার পাখি দিয়ে সাজানো, তাদের সাত ধরনের আকৃতি ও ধূসর থেকে কালো, এই চার ধরনের রঙ৷ দূর থেকে দেখলে মাছের আঁশের মতো ঝকঝক করে৷ ৩৭ মিটার উঁচু বাড়িটির ছাদে ওঠা যায় ও সেখান থেকে প্যারিসের দৃশ্য উপভোগ করা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Muncke
সেজ গেটসহেড, ইংল্যান্ড
গেটসহেড আর নিউক্যাসলের মধ্যে টাইন নদীর ওপর সাতটা সেতু৷ তার মধ্যে মিলেনিয়াম ব্রিজটি সেজ গেটসহেড কনসার্ট হলের ওপর দিয়ে চলে গেছে৷ গোটা বাড়িটাতেই আলো জ্বলে৷ ডিজাইন প্রখ্যাত স্থপতি স্যার নর্মান ফস্টারের৷ উদ্বোধন করা হয় ২০০৪ সালে৷ কনসার্ট হলটি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা করে বছরে ৩৬৪ দিন খোলা থাকে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/M. Sunderland
কাসা দা মুজিকা পোর্তো, পর্তুগাল
তেরশ’ দর্শকের বসার মতো এই কনসার্ট হলটিকে দেখতে যেন একটি সুবিশাল বাক্স৷ বাইরেটা সাদা কংক্রিট আর কাচের৷ ভেতরটায় নানা রঙ ও আকৃতির বিভিন্ন ফিচার, সেই সঙ্গে পর্তুগালের ‘আজুলেজস’ পাথরের টালি৷ কাচের ছাদটা খুলে দেওয়া যায়; তখন এখানে থেকে পোর্তো শহরের সব বাড়ির মাথা ছাড়িয়ে অতলান্তিক সমুদ্র অবধি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
পালাউ দে লেজার্ত রেইনা সোফিয়া, স্পেন
ভ্যালেন্সিয়া শহরে কুইন সোফিয়া প্যালেস অফ দ্য আর্টসের উদ্বোধন করা হয় ২০০৫ সালে৷ বিশ্বখ্যাত স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা যে সুবিশাল সিটি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের পরিকল্পনা করেছিলেন, এই কনসার্ট হলটি ছিল তার চূড়ান্ত অংশ৷ ৭৫ মিটার উঁচু ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু অপেরা হাউস বলে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH/J. Moreno
নর্স্কে অপেরা ও ব্যালে, নরওয়ে
অসলোর নরওয়েজিয়ান অপেরা ও ব্যালেট ভবনটির ছাদ ৩৬,০০০ কারারা শ্বেতপাথরের ব্লক দিয়ে তৈরি৷ এই ছাদের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়৷ হলটির চারপাশে পাতলা কাচের দেয়াল৷ হলের ভেতরটা তেলে ‘সিজনড’ ওক কাঠ দিয়ে তৈরি, যার ফলে খুব ভালো শুনতে পাওয়া যায়৷ ইন্টারভ্যালের সময় ব্যালকনি থেকে বাইরে নরওয়ের ফিয়র্ডগুলির দৃশ্য দেখতে পারা যায়৷
কনসার্ট হলটির ধাঁচ কিছুটা আলাদা বলে গোড়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল৷ অর্কেস্ট্রার বাজনদাররা হলের মাঝখানে একটা পোডিয়ামের ওপর বসেন৷ স্থপতি হান্স শারুনের এই বিপ্লবী ডিজাইন পরে সারা বিশ্বে আধুনিক কনসার্ট হল তৈরির মডেল হয়ে ওঠে৷
ছবি: picture alliance/Arco Images/Schoening Berlin
আল্টো থিয়েটার, এসেন, জার্মানি
জার্মানির এসেন শহরের এই কনসার্ট হলটির বিশেষত্ব হলো, স্টেজের সামনে বসা দর্শকদের আসনগুলি অর্ধগোলাকৃতি করে অপ্রতিসমভাবে সাজানো৷ ফিনল্যান্ডের স্থপতি আলভার আল্টো জানিয়েছেন, তিনি ডেলফির প্রাচীন গ্রিক থিয়েটারগুলো থেকে এ ধরনের অডিটোরিয়াম সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছেন৷ আলভার থিয়েটারের নকশাটি করেন পঞ্চাশের দশকে, কিন্তু কাজ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ আজ এই ভবনটিকে আধুনিক ক্লাসিক্যাল ডিজাইনের একটি নিদর্শন বলে গণ্য করা হয়৷
ছবি: Bernadette Grimmenstein
হার্পা মিউজিক হল, রাইকজাভিক, আইসল্যান্ড
আংশিক রঙ করা কাচের বিল্ডিং ব্লকগুলোকে মৌমাছির চাকের মতো বসিয়ে আলোর জাদু সৃষ্টি করেছেন শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসন৷ দিনের বেলায় বাইরে থেকে কাচের ওপর আলো পড়ে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়; রাত্রে ভবনটির ভিতরের আলো জ্বললে গোটা বাড়িটা রঙ বদলায় যেন বহুরূপীর মতো৷
হামবুর্গের এই কনসার্ট হলটি তৈরি হতে যে পরিমাণ বিলম্ব হয়েছে আর বাজেট যে পরিমাণে বেড়েছে, তাতে কেউ প্রত্যাশাই করেননি যে, তার চূড়ান্ত আকার এত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর হবে৷ ফিলহার্মনিকের ছাদটা ঢেউ খেলানো, যেন একসঙ্গে সাগর আর সংগীতের ওঠা-নামা৷ হামবুর্গের বন্দর এলাকার একটি মালগুদামের উপর কাচের এই বাড়িটি যেন জলের ওপর ভাসছে৷ প্রথম কনসার্টের তারিখ হলো ১১ই জানুয়ারি, ২০১৭৷