আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে স্বীকৃত৷ তবে ইউরোপের নারীদের কাছে তাঁর দৃষ্টান্ত ব্যতিক্রম ছাড়া কিছু নয়৷ সেখানে উঁচু পদে নারীদের সংখ্যা এখনো খুবই বিরল৷
বিজ্ঞাপন
সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে উঁচু পদে আরও বেশি সংখ্যক নারী প্রয়োজন – রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের প্রায় সব নেতাই বার বার এ কথা বলেন৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায় না৷ যেমন আগামী পাঁচ বছর ইউরোপীয় কমিশনের শীর্ষ পদগুলিতে কাদের দেখা যাবে, শনিবার তা চূড়ান্ত করবেন ইউরোপীয় নেতারা৷ এই কমিশনর বা ‘মন্ত্রী'-দের মধ্যে নারীর সংখ্যা আগের মতো নগণ্যই থাকতে চলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ প্রতিটি ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের ‘গ্রুপ ফটো'-তেও একই দৃশ্য৷ ধূসর কোট-প্যান্ট পরা মাঝবয়সি পুরুষদের ভিড়ে হাতে-গোনা কয়েকজন নারীকে দেখা যায়৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ভট নিয়ম
বছরের পর বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্ভট কিছু বিষয়ের উপর নিয়ম জারি করেছে৷ কিছু কিছু প্রয়োজনীয় হলেও এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো অপ্রয়োজনীয় এবং উদ্ভট৷ এখানে তার কিছু উদাহরণ দেয়া হল৷
কলা আইন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্ভট আইনের অন্যতম দৃষ্টান্ত হল কলা আইন৷ না এই কলা শিল্প সাহিত্যের কলা নয়, ফল কলা নিয়েই এ আইন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আমদানি করা হয় বা সেখানে উৎপন্ন হয় এমন কলার আকারও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এদের দৈর্ঘ্য হতে হবে কমপক্ষে ১৪ সেন্টিমিটার এবং পুরুত্ব ২.৭ সেন্টিমিটার৷ ফলগুলো কোনক্রমেই যেন নষ্ট না হয় এবং পুরোপুরি না পাকে৷
ছবি: Fotolia/Santiago Cornejo
মৌমাছির বিদ্যুতায়ন
মৌমাছি ভীষণভাবে সক্রিয় প্রাণী৷ কিন্তু কারো চিন্তায় কি কখনো এসেছে যে, মধু থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে? ইইউর কিন্তু সে চিন্তা এসেছে, এবং সে কারণে তারা একটি মাত্রাও নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ সেই আইন অনুযায়ী, প্রতি সেন্টিমিটারে ০.৮ মাইক্রোসিমেনের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে না৷ তবে নাস্তার টেবিলে বিদ্যুতায়িত হওয়ার ভয় অবশ্য নেই৷
ছবি: Fotolia/Jag_cz
সবুজ আলো
জ্বালানির অপচয় রোধ করতে ২০০৯ সাল থেকে ইউরোপে ব্যবহৃত হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড লাইট বাল্ব৷ কিন্তু এর পরে যে বাতিগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো সবগুলো কিন্তু পরিবেশবান্ধব নয়৷ যেমন এলইডি বাতিতে আছে পারদ, একটি বিষাক্ত পদার্থ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কেবল কারের পথ
ইইউ এর আর একটি আইন হলো প্রতিটি দেশে কেবল কার চলাচলের নির্দিষ্ট উচ্চতা এবং দিক মেনে চলতে হবে৷ কারণ কেউ যদি এমন উচ্চতায় কোনো ভবন বানাতে চায় তাহলে যাতে আইনটা চোখে পড়ে৷
ছবি: Fotolia/JM Fotografie
ময়লা ফেলার ডাস্টবিন
জার্মানিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার একটা নিয়ম আছে৷ কাগজ ফেলতে হবে নীল রঙের ডাস্টবিনে, প্লাস্টিক হলুদ রঙের আর পঁচনশীল বর্জ্য ফেলতে হবে ধূসর বা কালো রঙের বিনে৷ অথচ ইউরোপের অন্যান্য দেশে রঙের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা৷ কোথাও নীলের জায়গায় সবুজ, হলুদের জায়গায় লাল, আবার কোথাও বা একটাতেই সব৷ এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটা নিয়ম ঠিক করে দেয়া কি উচিত না?
ছবি: Fotolia/grafikplusfoto
সবার জন্য একটি প্লাগ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ সফর করতে চান, কিন্তু মোবাইল, ল্যাপটপ চার্জ দেয়ার জন্য সব জায়গায় প্লাগ পয়েন্ট কি একরকম? না আপনি ঠিকই ভাবছেন৷ ইউরোপ্লাগ নামে একটি অ্যাডাপ্টার আছে যেটা ইউরোপের সব দেশে ব্যবহারের জন্য তৈরি হলেও যুক্তরাজ্য, মালটা, আয়ারল্যান্ড এবং সাইপ্রাসে তা চলবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ট্র্যাফিক সাইন
রোম, প্যারিস, লন্ডন, স্টকহোম কিংবা বার্লিন – ইউরোপের এক একটা শহরে পথচারীদের জন্য ট্র্যাফিক সাইন এক এক রকম৷ এমনকি জার্মানির শহরগুলোতেও এই ভিন্নতা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিঠির বাক্সে ভিন্নতা
আনন্দের বিষয় এই, একটি বিষয়ে কোনো আইন জারি করেনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ হয়ত তাদের মনে হতে পারে ইউরোপের প্রতিটি দেশে একটি নির্দিষ্ট আকারের মেল বক্স থাকা উচিত৷ কিন্তু তারা সেটা না করে ভালোই করেছে৷ কেননা ইউরোপের এক একটি দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী এসব মেল বক্সগুলো তৈরি হয়৷
8 ছবি1 | 8
ইউরোপীয় কমিশনের আগামী প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার বলেছেন, তিনি তাঁর ‘মন্ত্রী'-দের মধ্যে যত বেশি সম্ভব নারীদের দেখতে চান৷ বিদায়ী কমিশনে ২৮ জন কমিশনরের মধ্যে ন'জন নারী ছিলেন৷ যাবার আগে তাঁরা উত্তরসূরি হিসেবে কমপক্ষে ১০ জন নারীকে দেখতে চান৷ এই মর্মে তাঁরা ইয়ুংকারকে এক যৌথ বিবৃতি পাঠিয়েছেন৷ অথচ নতুন কাঠামোয় এখনো পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন নারীর কথা শোনা যাচ্ছে৷
ইইউ-র ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে শুধু সুইডেন, বুলগেরিয়া, ইটালি, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়া তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নারীদের মনোনীত করেছে৷ তবে এখনো কয়েকটি পদ সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে৷ যেমন ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফেডেরিকা মোগেরিনি ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান হতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে জেনিফার অ্যাশটনের পর আবার একজন নারী সেই পদ পেতে পারেন৷
শনিবার কমিশনরদের মনোনীত করা হলেও তাঁদের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট৷ প্রয়োজনে পার্লামেন্ট বেঁকেও বসতে পারে৷ স্পিকার মার্টিন শুলৎস এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছেন, পার্লামেন্ট মোটেই এক ‘‘জেন্টলমেন'স ক্লাব'' মেনে নেবে না৷ এই অবস্থায় সমস্যায় পড়েছেন ইয়ুংকার৷ জাতীয় সরকারগুলি যদি নারীদের নাম প্রস্তাব না করে, সে ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন৷ তাই তিনি নিজের ক্ষমতার মধ্যে যেখানে সম্ভব উচ্চ পদে নারীদের নাম প্রস্তাব করতে চান৷ ইউরোপীয় কাউন্সিলের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হ্যার্মান ফান রম্পয়ের জায়গায় আসতে পারেন ডেনমার্কের প্রধনমন্ত্রী হেলে টর্নিং৷
মোটকথা, অনেক দর-কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় শাসনযন্ত্রে নারীদের সংখ্যা সামান্য বাড়তে পারে৷ তবে সেটা ৫০ শতাংশ ছোঁয়ার কোনো সম্ভাবনা আজও নেই৷