বেকারত্বের হার দেখলে উল্টোই মনে হতে পারে, যা এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ছয় শতাংশের কিছু বেশি এবং ইউরো মুদ্রার দেশগুলিতে সামগ্রিকভাবে ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ৷ কিন্তু ‘প্রাইম এজ’ কর্মী এবং শ্রমজীবীদের সংখ্যা ইউরোপেই বেশি৷
বিজ্ঞাপন
সহজ কথায় বলতে গেলে, ইউরোপে বেশিসংখ্যক মানুষ চাকরি করেন; প্রতিবন্ধীদেরও কাজের সুযোগ দেওয়া হয় এবং শ্রমিক জনতার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে৷ যাকে বলা হয় ‘প্রাইম ওয়ার্কিং ইয়ার্স' বা জীবনের মূল্যবান কাজের বছরগুলি, সেই ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সি ইউরোপীয়দের চাকুরি থাকার এবং চাকুরি করার সম্ভাবনা মার্কিনিদের চেয়ে বেশি৷
কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশার কথা
ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বললেই সাংবাদিকতার কথা মনে হতে পারে৷ কিন্তু এ ছাড়াও বিশ্বে এমন অনেক পেশা আছে, যেখানে একটু ভুলের কারণে জীবনটা চলে যেতে পারে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমনই কিছু কাজের কথা৷
ছবি: AP
জানালা পরিষ্কার
নিজ বাড়ির জানালা পরিষ্কার করাটা হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ নয়৷ কিন্তু সেটা যদি হয় উঁচু কোনো ভবনের, তাহলেই সমস্যা৷ জার্মানির মতো দেশে সুউচ্চ ভবনগুলোর বাইরের দিকটা পরিষ্কারের সময় তাই বেশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়৷ তবুও দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চলছে৷ আর যুদ্ধ মানেই প্রাণহানি৷ তাই যুদ্ধে অংশ নেয়াটা যে-কোনো সৈন্যের জন্যই যে মারাত্মক হুমকির, তা বলাই বাহুল্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাইলট
ছোটবেলায় হয়ত সবারই ইচ্ছা হয় বড় হয়ে পাইলট হবার৷ আকাশে একটা আস্ত বিমান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া রোমাঞ্চকরই মনে হয়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, আকাশে বিমান দুর্ঘটনা হলে বাঁচার সম্ভাবনা শূন্যই বলা যায়৷ আর পাইলটদের ক্ষেত্রে নিজের কোনো ভুলের কারণে দুর্ঘটনা হলে নিজ জীবনের পাশাপাশি চলে যেতে পারে শত শত যাত্রীর জীবনও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দমকলকর্মী
আগুন লাগা মানেই সেখানে ছুটে যেতে হয় দমকলকর্মীদের৷ কিন্তু আগুনের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ যেতে পারে নিজেরও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পুলিশ
জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে প্রায়ই সন্ত্রাসীদের পেছনে ছুটতে হয়৷ তাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়৷ ফলে মৃত্যুর সম্ভাবনাতো থেকেই যায়৷ এছাড়া দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে সন্ত্রাসী কিংবা মাস্তানদের ধাওয়া করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে – অবাক হওয়ার কিছু নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আর বলে কয়ে আসে না৷ তাই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় কখন যে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আগে থেকেই অনেক কিছু জানা সম্ভব৷ তবে এরপরও ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷
ছবি: picture alliance/landov
বাড়ির ছাদ ঠিক করা
বাংলাদেশে টিনের বাড়ি দেখতে যেমন হয় জার্মানির অনেক বাড়িও সেরকম৷ শুধু পার্থক্য হচ্ছে, টিনের পরিবর্তে জার্মানিতে ‘টাইলস’ বসানো হয়৷ আর সেই কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে৷ তাই এই কাজ শুরুর আগে একটা জীবন বিমা করাটা অতি আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গাছ কাটা
জার্মানিতে গাছ কাটতে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়, সেটা যদি কোনোভাবে শরীরের সংস্পর্শে চলে আসে তাহলেই শেষ! ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা৷ আর যে গাছ কাটা হচ্ছে সেটা কোনদিকে হেলে পড়তে পারে সেটা বুঝতে অনেকসময় ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
প্রাইম-এজ মার্কিনিদের ৭৭ শতাংশের চাকরি আছে – সে তুলনায় বেলজিয়ামে প্রাইম এজ কর্মীদের ৮০ শতাংশ, ফ্রান্সে ৮১ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসে ৮২ শতাংশের চাকরি আছে – এ হলো ওএসসিই-এর পরিসংখ্যান৷ আর জার্মানির সঙ্গে তুলনা করতে হলে, ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সি মার্কিনিদের আরো ৮৩ লাখকে চাকুরি করতে হবে৷
যদি বেকারত্বের হারেই আবার ফেরা যায়, তাহলেও বলতে হবে, ইউরো এলাকার গড় বেকারত্ব ১১ দশমিক পাঁচ শতাংশ হলেও, জার্মানি অথবা অস্ট্রিয়ায় বেকারত্বের হার তার চেয়ে অনেক কম – যেমন অস্ট্রিয়াতে মাত্র চার দশমিক নয় শতাংশ৷ অন্যদিকে পর্তুগাল, ইটালি, ফ্রান্স কিংবা বেলজিয়ামে বেকারত্বের হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার নির্ধারণের সমস্যা আছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কমেছে অংশত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা কাজ না করার, এমনকি কাজ না খোঁজার ফলে৷ অথচ সরকারি পরিসংখ্যানে শুধু তাদেরই বেকার বলে গণ্য করা হয়, যারা সক্রিয়ভাবে চাকরির খোঁজ করছেন৷ বহু মানুষ যদি চাকরির খোঁজ ছেড়ে দেন, তাহলে মার্কিন মুলুকে বেকারত্ব – অন্তত খাতাপত্রে – কমতে পারে৷ কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, ১৬ থেকে ৬৪ বছর বয়সের মার্কিনিদের মধ্যে যাঁরা কাজ করছেন অথবা কাজের খোঁজ করছেন, তাঁদের অনুপাত ২০০৭ সাল যাবৎ ৭৫ দশমিক তিন শতাংশ থেকে কমে ৭২ দশমিক সাত শতাংশ হয়েছে৷ ঠিক একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশে এই অনুপাত বেড়েছে ৭০ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে ৭২ দশমিক তিন শতাংশ৷
মাত্র কয়েক টাকার জন্য
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermann
তোয়ালে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebroker
দিনে ৬৫ টাকা
লেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnews
সস্তা শ্রম
ভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker
অমানবিক অবস্থা
২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermann
কম্বোডিয়ার পরিস্থিতি
কম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে এই ফারাকটা কেন, তার অনেক কারণ থাকতে পারে৷ মার্কিন মুলুকে চাকরি খাওয়া, অর্থাৎ যাওয়াটা অনেক সোজা –যদিও তার একটা অর্থ হলো, মার্কিন মুলুকে চাকরি পাওয়াটাও অনেক সোজা৷ মার্কিন ডিজেবিলিটি প্রোগ্রাম, অর্থাৎ অক্ষমতা বা অযোগ্যতা কর্মসূচি অনুযায়ী মার্কিনিদের চাকরি করা অথবা সরকারি ভাতা পাওয়ার মধ্যে বেছে নিতে হয়৷ ইউরোপে সাময়িক, এমনকি আংশিক অক্ষমতার দরুণ কাজের পরিমাণ কমানো সম্ভব৷ তৃতীয়ত, ইউরোপে ৪৫ অথবা তার বেশি বয়সের মহিলাদের মধ্যে ক্রমেই আরো বেশিসংখ্যক মহিলা চাকুরি করছেন৷
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপ জুড়ে একটি নতুন প্রবণতা: স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইটালির সরকারবর্গ পার্ট-টাইম ও টেম্পোরারি শ্রমিক নিয়োগের নিয়মাবলী কিছুটা শিথিল করেছেন৷ এভাবেই জার্মানিতে বিগত কয়েক বছরে বেকারভাতা প্রাপ্তির সময়কাল কমানো হয়েছে; এছাড়া বেকারদের দেখাতে হবে যে, তারা সক্রিয়ভাবে চাকরির খোঁজ করছেন৷ অপরদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের বয়সও বাড়ানো হয়েছে৷ অর্থাৎ ইউরোপ আবার প্রমাণ করেছে যে, শ্রমসংস্থানের ক্ষেত্রে ইউরোপ গোঁড়া নয়, একগুঁয়ে নয়, ইউরোপ নিজেকে বদলাতে জানে৷
এখন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আক্কেল গজানো বাকি!