ইউরোপে নানা ধরনের হোটেল আছে, যেগুলোকে হোটেল বলে চেনার উপায় নেই: কাঠের ঘোড়া থেকে শুরু করে ক্রেনের মাথা কিংবা রুপোর খনি, এমন সব জায়গায় রাত্রিবাস করতে কেমন লাগবে ভাবুন!
বিজ্ঞাপন
অবাক করা সব হোটেল
03:07
বাস্তবিক একটি ‘দৈত্যাকার' হোটেল৷ গ্রিক কিংবদন্তির সেই ‘ট্রোজান ঘোড়া' যেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে৷ বেলজিয়ামের লিয়েজ শহরের কাছে এই বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট হোটেলটির অতিথিরা যেন সবাই ট্রয়ের সৈন্য...
ইউরোপের চমকদার হোটেল পর্যায়ে ‘ট্রোজান ঘোড়া' হোটেলটি পঞ্চম স্থানে৷ আদত ট্রোজান ঘোড়ার পেটে সৈন্যরা এতো আরামে থাকতো কিনা, বলা শক্ত৷
ওপরের জানলা দিয়ে চারদিকের দৃশ্যটা হল এই হোটেলের ‘হাইলাইট'৷ জয়স্টিক দিয়ে আবার ঘোড়ার মাথা উঁচু-নীচু করা যায়৷
ফোর্ট হোটেল
চতুর্থ স্থানে যে হোটেলটি রয়েছে, সেটি দেখলেও প্রথমে হোটেল বলে বোঝবার উপায় নেই৷ ইংল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূল থেকে মাইল খানেক দূরে স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷ দেড়শ' বছরের পুরনো সামুদ্রিক দুর্গটির ভিতরে কিন্তু বিলাসের কোনো অভাব নেই৷ আগে যেখানে গোলাবারুদ রাখা থাকত, সেখানে আজ অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়৷
ইউরোপের হোটেল থেকে যা চুরি করে অতিথিরা
হোটেল থেকে চলে যাওয়ার সময় আপনার উচিত কক্ষটি যেমন ছিল, ঠিক সেরকম রেখে চলে যাওয়া৷ কিন্তু অতিথিদের কয়েকজনের সুটকেস অনেকসময় বেশ ভারি হতে দেখা যায়, যেমনটা হোটেলের প্রবেশের সময় ছিল না এবং সেসব জিনিস কোনো স্মারক বস্তু নয়৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid/J. Balston
শিল্পকর্ম
অভিজাত দামি হোটেলগুলো থেকে শিল্পকর্ম চুরি হওয়া একটা বড় সমস্যা৷ ভ্রমণ সাইট ‘ওয়েলনেস হেভেন’-এর এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর ৩৪ ভাগ জানিয়েছে, হোটেল কক্ষ থেকে দামি চিত্রকর্ম চুরি হয়েছে৷ সস্তার হোটেলে দামি শিল্পকর্ম থাকার সম্ভাবনা কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hackenberg
কম্বল
একটা বড় কম্বল ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার সুটকেসটা কত বড় হতে হবে? এক হাজার হোটেলের মধ্যে ১৫ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের হোটেল কক্ষ থেকে কম্বল চুরি হয়ে গেছে৷ ১৩ ভাগ জানিয়েছে, তাদের বালিশ চুরির কথা৷ মাঝারি হোটেলের তুলনায় দামি এসব হোটেলের এই ধরনের চুরির পরিমাণ প্রায় চার গুণ৷
ছবি: picture-alliance/PhotoAlto/F. Cirou
টেলিভিশন
প্রায় সব হোটেলেই টেলিভিশন থাকে, যদি না হোটেলের অতিথিরা তা সরিয়ে ফেলেন৷ বড় বড় হোটেলগুলোতে টেলিভিশন চুরি একটা বড় সমস্যা৷ পাঁচ ভাগ হোটেল তাদের হোটেল কক্ষ থেকে টেলিভিশন চুরির অভিযোগ করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
তোশক
আপনার কাছে হয়ত মনে হচ্ছে কম্বল বা টেলিভিশন চুরি করাটা ভীষণ কঠিন, কিন্তু তোশকের ক্ষেত্রে কী বলবেন? আশ্চর্য হলেও সত্যি কয়েকটি হোটেল অভিযোগ করেছে চোরেরা মধ্যরাতে এলিভেটর দিয়ে গ্যারেজের মধ্য দিয়ে তোশক নিয়ে যায়৷ পাঁচ তারকা হোটেলের ৫ ভাগই জানিয়েছে তোশক চুরির কথা৷
ছবি: picture-alliance/Arcaid/J. Balston
পিয়ানো
সবচেয়ে আশ্চর্য চুরির ঘটনাটি ঘটেছে ইটালির একটি হোটেলে৷ অভিজাত একটি হোটেলের লাউঞ্জে রাখা ছিল পিয়ানো, যা হঠাৎ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তিনজন অপরিচিত ব্যক্তি এটিকে হোটেলের বাইরে নিয়ে যায় এবং রাস্তায়ও তাদের দেখা গেছে পিয়ানোসহ৷ কিন্তু এরপর তারা অদৃশ্য হয়ে যায়, আর দেখা যায়নি তাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
5 ছবি1 | 5
হোটেলের ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স শোনালেন, ‘‘এই ঘরটায় আগে কামান বসানো ছিল – সাগরের দিকে তাক করা সাড়ে বারো ইঞ্চির কামান৷ সেই কামানই ঘরটা জুড়ে ছিল৷''
অতিথিরা এখানে রাত কাটাতে আসেন – গোটা ছুটি কাটাতে নয়৷
কনটেনার হোটেল
তৃতীয় স্থানে যে হোটেলটি আছে, সেটিকে পাবেন বালটিক সাগরের ভার্নেম্যুন্ডে শহরের বন্দর এলাকায়: কনটেনারের উপর কনটেনার বসিয়ে তৈরি হোটেল, যেখানে ১৮৮ জন পর্যন্ত অতিথির রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে৷
তবে ক্লস্ট্রোফোবিয়া থাকলে চলবে না৷ অপরদিকে ১৯ ইউরোতেই এখানে রাত কাটানো যায়, তবে সিঙ্গল রুমে নয়৷
ক্রেন হোটেল
দ্বিতীয় স্থানে, আমস্টারডামের একটি হোটেল, যা বস্তুত একটি সুবিশাল ক্রেন! লিফ্ট দিয়ে ৪৫ মিটার উঠলে তবে ‘রুমে' পা দেওয়া যায়৷ তবে ভিউটা যা পাবেন, তা সারা জীবন ভুলবেন না, এ গ্যারান্টি দেওয়া যেতে পারে৷ একতলা নয়, দু'তলা হোটেল – ঠিক সেখানে, যেখানে আগে ক্রেন চালকের কেবিনটা ছিল৷ গোটা হোটেলটা আজও বাতাসে নড়ে – ভয় পেলে চলবে না কিন্তু!
রুপোর খনিতে হোটেল
এবার আমাদের নাম্বার ওয়ান৷ এই হোটেলটি সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের দক্ষিণে৷ হোটেল তো নয়, একটি পরিত্যক্ত রুপোর খনি৷ লিফটে চড়ে খনির অতলে নামতে লাগে পাক্কা পাঁচ মিনিট৷ আপনার হোটেল রুমটি হবে মাটির ১৫৫ মিটার নীচে, যেখানে সাধারণত ঘুটঘুটে অন্ধকার আর তাপমাত্রা সাধারণত দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে না৷ পাথর কেটে তৈরি ‘হোটেল রুমটিতে কিন্তু হিটিং আছে৷ হঠাৎ ভয় পেলে এক ওপরে টেলিফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই৷ নয়তো রুপোর খনির পরীদের গান শুনতে পারেন...৷
প্রতিবেদন: আন্টিয়ে বিন্ডার/এসি
ইউরোপের কিছু আজব হোটেল
ক্রেনের মাথায় হোটেল, রুপোর খনির তলায় হোটেল, ট্রোজান ঘোড়া কিংবা উফো’র মতো দেখতে হোটেল - সবই কিন্তু ইউরোপে!
ছবি: Ufogel Hotel
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
আমস্টারডাম বন্দর এলাকার একটি ভারী ক্রেনকে তিন সুইটের একটি ডিজাইনার হোটেলে পরিণত করা হয়েছে৷ মাটি থেকে ৪৫ মিটার উঁচুতে রাত কাটানো, সেই সঙ্গে এরকম একটা ভিউ!
ছবি: Crane Hotel Faralda Amsterdam
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
ছবি: Crane Hotel Faralda Amsterdam
ফারাল্ডা ক্রেন হোটেল, নেদারল্যান্ডস
ছবি: Edwin Kornmann/Faralda Crane Hotel
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
সুইডেনের সালা শহরের এই হোটেলটি পরিত্যক্ত, অর্থাৎ ছেড়ে যাওয়া এক রুপোর খনির ভিতরে, মাটি থেকে ১৫৫ মিটার নীচে৷
ছবি: Martinus Schwarzkopf
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
ছবি: gruvtroll.se
সিলভার মাইন হোটেল, সুইডেন
ছবি: Uniqhotels.com
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
স্পিটব্যাংক ফোর্টটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮৫৯ সালে, প্রতিরক্ষার জন্য৷ আজ সেটি একটি লাক্সারি হোটেল৷
ছবি: Amanda Retreats
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
ছবি: Solentforts
ইংল্যান্ডের উপকূলে স্পিটব্যাংক ফোর্ট
ছবি: Solentforts
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
‘হেলেন অফ ট্রয়’-কে কেন্দ্র করে যুদ্ধে কাঠের ঘোড়ার পেটে ট্রোজান সৈন্যদের কথা মনে আছে তো? সেই গ্রিক কিংবদন্তির অনুকরণে বেলজিয়ামের এই হোটেল৷
ছবি: Uniqhotels.com
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
ছবি: uniqhotels.com
ট্রোজান হর্স, লা বালাদ দে নোম, বেলজিয়াম
ছবি: Uniqhotels.com
উফোগেল হোটেল, অস্ট্রিয়া
উফোগেল নামটা এসেছে ইউএফও, অর্থাৎ আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট, আর জার্মান শব্দ ‘ভোগেল’ বা ‘পাখি’ থেকে৷ চারদিকে আল্প্স পর্বতমালার দৃশ্য৷