ইউরোপের ৪৭টি দেশের সাংসদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ ও সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে ‘বিক্রি' হওয়ার অভিযোগ করেছে স্বাধীন তদন্তকারীদের একটি দল৷
বিজ্ঞাপন
ঘুস হিসেবে ঐ সাংসদরা ক্যাভিয়ার, কার্পেট এবং অভিজাত হোটেলে থাকার সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷
মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়ে কাজ করা ‘কাউন্সিল অফ ইউরোপ-’এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংস্থা ‘পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অফ দ্য কাউন্সিল অফ ইউরোপ' পিএসিই বা পেস-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে৷ পেস-এর সদস্যসংখ্যা ৩২৪৷ কাউন্সিল অফ ইউরোপের ৪৭ সদস্যরাষ্ট্রের সংসদ পেস-এর সদস্যদের নির্বাচন করে থাকে৷ কাউন্সিল অফ ইউরোপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে৷
পেস-এর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সদস্য সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে আজারবাইজানের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সুর নরম করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ঐ দেশটিতে রাজনৈতিক বন্দিদের অবস্থা নিয়ে ২০১৩ সালে তৈরি হওয়া এক প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন অভিযুক্ত ঐ সাংসদরা৷
বিচারকদের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ২০০ পৃষ্ঠার ঐ প্রতিবেদন তৈরি করে৷ এর মধ্যে দু'জন বিচারক ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস’ বা ইসিএইচআর-এর সদস্য ছিলেন৷ উল্লেখ্য, পেস-এর সদস্যরাই ইসিএইচআর-এর সদস্যদের নির্বাচন করেন৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘তদন্তে পাওয়া গেছে যে, আজারবাইজান নিয়ে কাজ করা পেস-এর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সদস্য পেস-এর নৈতিক অবস্থানের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন৷’’
প্রতিবেদন সম্পর্কে পেস-এর সভাপতি মিশেল নিকোলেত্তি সাংবাদিকদের জানান, পেস-এর একটি কমিটি অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করছে এবং এই সময়ে অভিযুক্ত সাংসদদের তাঁদের কাজ স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয়েছে৷
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল গতবছর আজারবাইজানের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে ইউরোপীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিল৷ ‘‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, পেস-এর মতো একটি সম্মানজনক সংস্থার কয়েকজন রাজনীতিবিদ বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং অর্থের বিনিময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বিষয়ে চোখ বন্ধ রাখতে ইচ্ছুক,’’ বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান জোসে উগাজ৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
দুর্নীতিগ্রস্ত সব বিশ্বনেতারা
দুর্নীতি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহার৷ চলুন জেনে নেয়া যাক, গত কয়েক বছরে কোন কোন বিশ্বনেতার বিরুদ্ধে এ সব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, ব্রাজিল
লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের৷ ঘুস গ্রহণের মামলায় আগেই সাড়ে নয় বছরের জেল হয়েছিল৷ তবে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা লুলা আপিল করেছিলেন৷ শুক্রবার তাঁকে কুরিচিবা শহরের পুলিশ সদরদপ্তরে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের ফেডারেল বিচারক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
পার্ক জিউন-হাই, দক্ষিণ কোরিয়া
২০১৬ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পার্ক জিউন-হাই৷ চাঁদাবাজি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা শুরু হয়েছিল তারপর৷ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত৷
ছবি: Getty Images/A.Young-Joon
ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দে কির্সনের, আর্জেন্টিনা
প্রথমে ফার্স্ট লেডি এবং পরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট (২০০৭ থেকে ২০১৫) হওয়া ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ কির্শনার ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ পছন্দের ঠিকাদার কোম্পানিকে সরকারি নির্মাণ কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাইছেন৷ কেউ কেউ বলছেন, তিনি এলে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. La Valle
ইহুদ ওলমের, ইসরায়েল
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ওলমের ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর জেল হয়৷ অবশ্য পরের বছরেরর জুলাই মাসে ছাড়াও পেয়ে যান৷ জেলে যাওয়া ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম৷ পরে তাঁকে অনুসরণ করেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
ছবি: Reuters/O. Zwigenberg
আদ্রিয়ান নাসটাসে, রোমানিয়া
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১২ সালে এবং এরপর দু’বছরের জন্য জেলও খাটেন৷ রোমানিয়ান রেভোলিউশনের পরের ২৩ বছরে তিনিই প্রথম কোনো সরকার প্রধান, যাঁকে জেলের ভাত খেতে হয়েছে৷ আদ্রিয়ান নাসটাসে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/
চার্লস জি. টেলর, লাইবেরিয়া
নব্বইয়ের দশকে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সময় নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে ২০১২ সালে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া কোনো রাষ্ট্রপ্রধান টেলর৷ ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷