যবে থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে, তবে থেকে ইউরোপ এত উষ্ণ অক্টোবর কখনো দেখেনি।
জার্মানিতে অক্টোবরে উষ্ণতার হাত থেকে বাঁচতে অনেকে এভাবে নদীর ধারে সময় কাটিয়েছেন।ছবি: Joachim Hahne/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ইইউ-র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস(সিথ্রিএস) জানিয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০২০-র গড় তাপমাত্রার থেকে এই বছর অক্টোবরের তাপমাত্রা ছিল প্রায় দুই ডিগ্রি বেশি।
সিথ্রিএসের ডেপুটি ডিরেক্টর সামান্থা বুর্গেস বলেছেন, ''জলবায়ু পরিবর্তনের ফল এখন আমরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। এখন দরকার কপ২৭-এ উচ্চাকাঙ্খী অ্যাকশন প্ল্যান নেয়া। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রির বেশি যাতে না বাড়ে তার জন্য ব্যবস্থা নেবে সব দেশ।'' এবার জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে মিশরে।
সিথ্রিএসের বক্তব্য, তাপপ্রবাহ চলার ফলে পশ্চিম ইউরোপের প্রতিদিনের তাপমাত্রা রেকর্ড বাড়ে। অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সে উষ্ণতম অক্টোবর ছিল। গত মাসে ইটালি ও স্পেনেও গরম তার আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়।
গলছে এশিয়ার হিমবাহ, বিপন্ন শতকোটি মানুষের জীবন
তীব্র তাপদাহে ক্রমাগত গলছে হিমালয়ের বরফ, যার উপর নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ৷ বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী অন্য অঞ্চলের চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে উত্তপ্ত হচ্ছে হিমালয়৷
ছবি: zhang zhiwei/Zoonar/picture alliance
বন্যার প্রকোপ
গত মে মাসে উত্তর পাকিস্তানের হাসানাবাদের হিমবাহী হ্রদের জল উপচে বন্যা সৃষ্টি হয়৷ ভেসে যায় বাড়িঘর৷ ধ্বংস হয় দুইটি জলবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও একটি সেতু৷ এতে ৭৫ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷
ছবি: -/AFP/Getty Images
উভয় সংকট
এই পার্বত্য অঞ্চলে অর্ধশত কোটি মানুষের বসবাস৷ জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জন্য ডেকে আনছে নানা ধরনের বিপদ৷ হিমবাহের বরফ গলায় তারা পড়ছেন উভয় সংকটে৷ মে মাসে পাকিস্তান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ৩৩টি হিমবাহী হ্রদ অস্বাভাবিক গরমের কারণে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ আবার সেখানকার ৭০ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের জন্য এই হ্রদগুলোর উপর নির্ভরশীল৷ এর অর্থ হিমবাহ চিরতরে গলে গেলে তারা জলের সংকটে পড়বেন৷
ছবি: zhang zhiwei/Zoonar/picture alliance
মিঠা পানির বৃহৎ উৎস
হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা নিয়ে গঠিত এশীয় পার্বত্য অঞ্চল৷ চীন থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত এই এলাকায় ৫৫ হাজার হিমবাহ আছে৷ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর বাইরে পৃথিবীর স্বাদু জলের সবচেয়ে বড় উৎস এটি৷ এই জল এশিয়ার ১০ টি নদী দিয়ে প্রবাহিত হয় যার উপর নির্ভরশীল ২০০ কোটি মানুষ৷ এরমধ্যে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের জলে নির্ভরশীল ৭৫ কোটি মানুষের জীবন৷
ছবি: Thomas L Kelly/robertharding/picture alliance
উত্তপ্ত হিমালয়
জাতিসংঘের ইউএনডিপির তথ্য অনুযায়ী, হিমলায় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে না পারলে মধ্য এশিয়ার দুই তৃতীয়াংশ বরফ চলতি শতকের শেষাংশে হারিয়ে যেতে পারে৷ ক্লাইমেট রিস্ক ইন্ডেক্সে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় যেসব দেশ বেশি বিপদে তার দশটিতে আছে পাকিস্তান ও নেপাল৷ ভারত ও আফগানিস্তান আছে শীর্ষ কুড়িতে৷
ছবি: Sideways
জলবিদ্যুৎ হুমকিতে
গলতে থাকা হিমবাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে৷ হিমালয় অঞ্চলের ২৫০ টির বেশি হাইড্রোলিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হুমকিতে আছে৷ সেগুলো নতুন করে নকশা করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না৷ কেননা বরফ গলে গেলে জল সংকটে পড়বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো৷
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
দূষণরোধের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞদের মতে বায়ু দূষণ রোধ হিমবাহ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে৷ এই অঞ্চলে কালো কার্বনের পেছনে ইটের ভাটা ও জীবাষ্ম জ্বালানি দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে দায়ী৷ দ্বিতীয় বৃহৎ দূষণকারী ডিজেল গাড়ি, যার কারণে সাত থেকে ১৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়৷
ছবি: REUTERS
দায় কার
হিমালয়ের বরফ গলার পেছনে ভূমিকা রাখছে সার্বিকভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি৷ কিন্তু এজন্য ভুক্তভোগী হওয়া দেশগুলোর দায় সামান্যই৷ যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী গ্যাস নিঃসরণে পাকিস্তানের ভূমিকা মাত্র এক শতাংশ৷ অন্যদিকে আফগানিস্তান ও নেপালের দায় আরো কম৷ কিন্তু এই দেশগুলোতেই বন্য, ভূমি ধস কিংবা জলের সংকট ক্রমশ বাড়ছে৷
ছবি: Altaf Qadri/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
আবার অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব রাশিয়া এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশে ঠান্ডা বেশি পড়েছে।
মিশরে আলোচনা
জাতিসংঘের কপ২৭ পরিবেশ সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বনেতারা এখন মিশরে যেতে শুরু করেছেন। প্রতিটি দেশের উপর এখন প্রবল চাপ রয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন যাতে দেড় ডিগ্রির বেশি না বাড়ে, তার জন্য তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। উনিশ শতকের তুলনায় বিশ্বের তাপমাত্রা এখন এক দশমিক এক ডিগ্রি বেড়েছে। গত ৩০ বছরে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে তাপপ্রবাহ হবে, গ্লেসিয়ার গলবে, সমুদ্র আরো উপরে চলে আসবে, ভয়ংকর বৃষ্টির কবলে পড়বে দেশগুলি।
খরায় শুকানো নদী, জলশূন্য হ্রদ
কোথাও নদী শুকিয়ে মরুভূমি, কোথাও হারিয়ে গেছে হ্রদ, ইয়ট ভাসছে বালুভূমির উপরে৷ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে খরায় পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন দেশের জলাশয়ের এমন কিছু পরিণতি দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Daniel Becerril/REUTERS
জলের স্কেল
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় লাস ভেগাসের কাছে অবস্থিত মিড হ্রদের ছবি এটি৷ এই জলাশয়ে পানির স্তর কতটা নেমেছে তা রং দেখেই অনুমান করে নেয়া যেতে পারে৷
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
ইয়ট ভাসছে বালুতে
কতটা ভয়াবহ খরার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মেক্সিকো, গত মার্চে তোলা এই ছবি তার নমুনা৷ দেশটির ‘লা বোকা’ বাঁধে জলাশয় পুরোটা শুকিয়ে গেছে৷ সেখানে ইয়টের বদলে চলছে কার৷
ছবি: Daniel Becerril/REUTERS
জলাশয়ের তলদেশ
জলাভূমির নিচে থাকা গাছও শুকিয়ে গেছে৷ চিলির রুনগু হ্রদের এপ্রিলের ছবি এটি৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
সেতুর কী প্রয়োজন?
বোরেত্তোতে ইটালির দীর্ঘতম নদী পো এর উপরে সেতু দিয়ে চলছে ট্রাক৷ তবে পরিস্থিতি যা হয়েছে তাতে সামনে এই সেতু না হলেও হয়ত চলবে৷
ছবি: Guglielmo Mangiapane/REUTERS
নদীর দশা
এটি একটি নদীর ছবি, বিশ্বাস হয়? ইটালির বিয়েনাস্কোতে পো নদীর উপনদী সানগোন এর জুনের ছবি এটি৷ ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় পুড়ছে এলাকাটি৷
ছবি: Massimo Pinca/REUTERS
হ্রদে চারণভূমি
এটি সান্তিয়াগোর একটি উপহ্রদের ছবি৷ একসময় সেখানে জল থাকলেও এখন তা ঘোড়ার চারণভূমি৷
ছবি: Ivan Alvarado/REUTERS
অবশিষ্ট নৌকা
ক্যালিফোর্নিয়ায় শুকিয়ে যাওয়া ম্যাদেরা হ্রদের উপর থেকে তোলা ছবিতে একটি নৌকা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
কপ২৭ সম্মেলনে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস বলেছেন, ''যদি এখন উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে লড়াই না করা হয়, তাহলে সেটা হবে গণ-আত্মহত্যার সামিল। একটাই বিকল্প আছে, হয় সহযোগিতা করো, নাহলে মরো।''