সরকারি ব্যয়-সংকোচ ও সংস্কারের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরোপ তার ঘর সামলাবার চেষ্টা করলেও চরম বেকারত্ব ও মন্দার মতো সমস্যার ফলে মানুষের মনে অসন্তোষ বাড়ছে৷ বুধবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়ে আলোচনা হবে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপে বেশ কিছুদিন ধরে অনেক সংকট বিচ্ছিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে৷ বুধবার ব্রাসেলস-এ একদিনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন শীর্ষ সম্মেলনে সেগুলি নিয়ে সার্বিক আলোচনা হবার কথা৷ তবে বিশেষ প্রাধান্য পাবে চরম বেকারত্ব ও ইউরো এলাকায় মন্দার আশঙ্কা৷ আপাতত গোটা এলাকায় বেকারদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ৷ তাছাড়া প্রায় ১৮ মাস ধরে মন্দা চলছে, যা একটা রেকর্ড৷ মোটকথা তাত্ত্বিক আলোচনার বাইরে দ্রুত এমন পদক্ষেপ নেবার জন্য চাপ বাড়ছে, যাতে এখনই কর্মসংস্থান বাড়ে, অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে৷ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পড়ার মুখে৷ সেই সঙ্গে ইইউ সম্মেলনে কর ফাঁকি বন্ধ করার উদ্যোগও জোরালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ লুক্সেমবুর্গ ও অস্ট্রিয়া এখনো ব্যাংকিং ক্ষেত্রে গোপনীয়তার নিয়ম শিথিল করার বিষয়ে পুরোপুরি রাজি হচ্ছে না, যদিও তাদের উপর চাপ কম নেই৷ কর ফাঁকির প্রশ্নে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গেও ইইউ-র সার্বিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন রয়েছে৷
জার্মানির কোলন শহরে প্রবীণদের জীবনযাত্রা
জার্মানিতে অন্যান্য দেশের মতো বাড়ছে প্রবীণদের সংখ্যা৷তাঁরা কেন দীর্ঘজীবী হন, তাদের জীবনযাত্রা, তাঁদের জীবনের সফলতা আসার নানা গল্প জানিয়েছেন কোলনে একটি অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ইতিবাচক চিন্তার কয়েকজন প্রবীণ৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
স্বাস্থ্য সচেতন ও ইতিবাচক চিন্তার মানুষ
প্রতিদিনের নাস্তায় অবশ্যই থাকে তাজা ফলের রস, রুটি, কফি ইত্যাদি৷ জো প্রতিদিন বাজারে যায়, লক্ষ্য তাজা ফল, সালাদ কেনা ছাড়াও বাড়ির বাইরে বের হওয়া এবং আশেপাশের লোকজনের খোঁজখবর রাখা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
রিটা এবং জো
আসল নাম মার্গারিটা৷ তবে আদর করে সবাই তাঁকে ডাকে রিটা নামে৷ আর তাঁর স্বামী ইউসেফকে ডাকে জো৷ এই দম্পতি অবসর জীবনেও থাকেন হাসিখুশি আর নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত৷ তরুণ বয়সে ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়াতে বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন৷ কোলন শহরের নামি দামি এলাকায় বহু বছর ছিল তাঁদের গহনার দোকান৷ আজকের এই অবস্থানে আসতে দু’জনে মিলে প্রচুর খেটেছেন৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হ্যাপি আওয়ার
জো এর বয়স ৮০৷ নিজ হাতে তৈরি করা বাড়ির সামনের সাজানো বাগানে গরমকালে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বসেন৷ আর অপেক্ষায় থাকেন তাদেরই মতো আরো কয়েকজনের জন্য৷ এঁরা মনে করেন, শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শুধু ভালো খাবার আর নিয়মিত চেকআপই যথেষ্ট নয়, চাই ভালো বন্ধুবান্ধব আর হাসিতামাশা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
মিলে মিশে থাকা
এই এলাকার প্রায় ৫০টি বাংলো বাড়ির কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর মালিক কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছেন৷ অর্থাৎ তাদের বয়স ৬৫’র ওপর৷ এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নিয়মিত এই আড্ডায় যোগ দেন, করেন খানিকটা মদ্যপান৷ এই অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকোশলী ও চাকরিজীবীদের আলোচনার বিষয় পারিবারিক সুখ-দুঃখ থেকে বিশ্বের চলমান রাজনীতি পর্যন্ত৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
রিটার দিন শুরু
দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই যে তাঁর বয়স ৭৫৷ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে তাঁর দিনের শুরু৷ সবসময়ই ফিটফাট থাকেন৷ কি করে সম্ভব জানতে চাইলে বলেন, পুরনো অভ্যাস৷ একসময় তিনি নিজেদের ব্যবসা, দুটো সন্তান মানুষ করা এবং সংসারের সমস্ত কাজসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন৷ এই দম্পতির মতে জীবনে ‘ডিসিপ্লিন’ খুব বড় ব্যাপার৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
সকালের নাস্তা
প্রতিদিনের নাস্তায় অবশ্যই থাকে তাজা ফলের রস, রুটি, কফি ইত্যাদি৷ জো প্রতিদিন বাজারে যায়, লক্ষ্য তাজা ফল, সালাদ কেনা ছাড়াও বাড়ির বাইরে বের হওয়া এবং আশেপাশের লোকজনের খোঁজখবর রাখা৷ কোন প্রতিবেশীর কি দরকার, কে ছুটিতে গেছে বা কোনো নতুন প্রতিবেশী এসেছে কিনা সব খবরই থাকে জো’র কাছে – যার দিনের অনেকটা সময় কাটে বাগান করে৷ আর হ্যাঁ, সপ্তাহে দু’দিন নিয়ম করে স্ত্রীর জন্য ফুল কিনতে ভুল হয়না তাঁর৷
ছবি: Fotolia/kab-vision
হাসিখুশি মারিয়ানা
পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক৷ স্বামী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে৷ নিজের গাছের যত্ন ছাড়াও প্রতিবেশীদেরও প্রয়োজনে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ শীতকালে এই প্রবীণ গ্রুপের ‘হ্যাপি আওয়ার’ আড্ডা বন্ধ থাকে বলে তখন বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া, কোনো থিয়েটার বা কনসার্টে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন মারিয়ানা৷ উদ্দেশ্য একসাথে আনন্দ করা৷ তাঁর মতে সুস্থ থাকতে চাইলে ভাবের আদান-প্রদান খুবই জরুরি৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
চাই মুক্ত বাতাস আর হাঁটাহাঁটি
শরীর ঠিক রাখতে হাঁটাহাঁটি আর ফুসফুস ঠিক রাখতে মুক্ত বাতাস সেবন করেন প্রবীণরা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানদের আজকের এই অবস্থানে আসতে কত কষ্ট করতে হয়েছে তাঁরা তা খুব ভালোভাবেই জানেন৷ তাঁদের অনেকেরই তখন ঠিকমতো খাবার বা থাকার জায়গা ছিল না৷ অথচ এসব কথা এই প্রজন্মের জার্মানরা বুঝতে বা জানতে চায়না – একথা মাঝেমধ্যেই দুঃখ করে বলেন প্রবীণরা৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বয়স কোনো বাধা নয়
এঁদের বয়স ৬৫ থেকে ৮৩ পর্যন্ত৷ সবাই নিজে গাড়ি চালান এবং পছন্দ করেন চালাতে৷ প্রায় সবাই কম্পিউটার চালাতে অভ্যস্ত৷ ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনির সাথে ইমেল বা ফেসবুকেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন৷ তাঁরা বলেন, ‘সময়ের সাথে কিছুটা তাল মিলিয়ে চলা মানেই ব্রেনের সেলগুলোকে সজাগ রাখা৷’
ছবি: Fotolia/Rido
অসুখকে গুরুত্ব দিলেও মন খারাপ করেন না
বয়সের সাথে অসুখের সম্পর্ক নিবিড়, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তাই বলে মন খারাপ নয়৷ অসুখের সময়ও এই প্রবীণ দল একে অন্যের দেখাশোনা করেন৷ ৭৮ বয়সি হান্সের ডায়াবেটিস খুব বেশি৷ কদিন আগে তিনি বাড়ির কাছেই তাঁর অত্যাধুনিক মডেলের ‘আউডি’ গাড়িটি অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে লাগিয়ে দিয়েছিলেন৷ তাই এখন মেয়ে বলে দিয়েছে যে, তাঁর ‘গাড়ি চালানো বন্ধ’ – এ কথাই সেদিন হান্স ছলছল চোখে প্রবীণ বন্ধুদের বলছিলেন৷
ছবি: DW / N.Baeva
গান বাজনা
হস্ট অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার৷ শখ অ্যাকোর্ডিয়ান বাজানো আর ছবি আঁকা৷ প্রতিবেশীদের জন্মদিন বা কোনো উপলক্ষ্য হলেই হাতে তুলে নেন অ্যাকোর্ডিয়ান আর তালে তালে নেচে ওঠেন অন্যরাও৷ মজার ব্যাপার হলো, জন্মদিনের দাওয়াত দেবার সময় এঁরা বলে দেন, ‘‘কোনো উপহার নয়, আনন্দ ফুর্তি করার জন্য ‘মন’ নিয়ে এসো৷’’
ছবি: Nurunnahar Sattar
আনন্দ আর ধরেনা
এরকম হালকা আনন্দই বেচে থাকার প্রেরণা যোগায়
ছবি: Nurunnahar Sattar
পোশাককর্মীদের নিয়ে চিন্তা
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব খবরই তাঁরা রাখেন৷ সম্প্রতি বাংলাদেশের পোশাক কারখানা রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার খবরে তারা খুবই বিচলিত৷ পোশাক কর্মীদের বেতন অবশ্যই বাড়ানো উচিত বলে তাঁরা মনে করেন৷ তাঁদের মতে পোশাক প্রতি ১ ইউরো বেশি দেওয়া জার্মানদের পক্ষে মোটেই কঠিন নয়৷ তাই তাঁরা এর আশু সমাধান কামনা করছেন৷
ছবি: JEWEL SAMAD/AFP/Getty Images
তরুণদের প্রতি পরামর্শ
তরুণ বয়সই কাজ করার উপযুক্ত সময়, তাই নিজের বুদ্ধি আর শক্তিকে কাজে লাগাও৷ নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলো এবং ইতিবাচক চিন্তা করো৷ ছোট বড় সবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখো, প্রয়োজনে সাহায্য করো৷ জীবনে সমস্যা আসবেই, মোকাবেলা করো৷ সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগাও, সাফল্য আসবেই আসবে৷ তরুণ বয়সে খাটলেই কেবল প্রবীণ বয়সে ভালো থাকা সম্ভব৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
14 ছবি1 | 14
এই অবস্থায় ইউরোপের রাজনৈতিক নেতাদের সামনে বেশি পথ খোলা নেই৷ সবার নজর জার্মানির দিকে৷ সেপ্টেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষে এমন কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন, যার ফলে ভোটাররা অসন্তুষ্ট হয়৷ ফ্রান্সও মন্দার কবলে পড়ে নিজের ঘর গোছাতে ব্যস্ত৷ বাজেট ঘাটতি কমাতে ফ্রান্স কিছুটা বাড়তি সময় পেলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সে দেশের উপর চাপ বাড়ছে৷ এই অবস্থায় দুই দেশ ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ ইটালির বিশাল ঋণভার, স্পেনের উপর বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন, স্লোভেনিয়ার জন্য বেলআউটের মতো বিষয়ও ইউরোপীয় নেতাদের ভাবাচ্ছে৷ এর মধ্যে ২০১৭ সালে ব্রিটেন গণভোটের মাধ্যমে ইইউ-র সদস্য থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ তার আগে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনের জন্য আরও ছাড় আদায় করার চেষ্টা করে চলেছেন৷
তবে এমন চাপের মুখে বাজেট ঘাটতি কমানো বা সংস্কারের গতি কমে যাবে, এমন সম্ভাবনা মোটেই দেখা যাচ্ছে না৷ তবে এই ধরণের পদক্ষেপের সুফল যাতে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে, তার জন্য কী কী করা প্রয়োজন, সেই বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাবে৷ জার্মান অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে এ ক্ষেত্রে ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলির কাজের কিছুটা সমালোচনা করেছেন৷
সোমবার জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশে ছুটি থাকায় বাজারের সার্বিক চিত্র ছিল কিছুটা অস্পষ্ট৷ তা সত্ত্বেও পুঁজিবাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ ইটালির অর্থনীতির দুর্বল চিত্র উঠে এলেও অস্থিরতা দেখা যায় নি৷ বাজারের নজর আপাতত ইইউ শীর্ষ বৈঠকের দিকে৷