জার্মানি, ব্রিটেনসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে চীনের গুপ্তচরবৃত্তি বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করছে৷ তবে চীন এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে৷
বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ইউরোপে চীনের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগকে ‘হাইপ' বলে উল্লেখ করেছেন৷ এছাড়া এটি ‘চীনকে অসম্মান ও দমন করার উদ্দেশ্যে' করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
এদিকে, সোমবার জার্মানির বিচার মন্ত্রণালয় জানায়, বেইজিংয়ের নৌবাহিনীর ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তি জোগাড় করতে চীনের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে তিন জার্মান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বার্লিনে চীনের দূতাবাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
একইদিন যুক্তরাজ্যে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চীনের হয়ে গোয়েন্দাগিরি করার অভিযোগ গঠন করা হয়৷ এদের একজন শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কাজ করতেন৷ লন্ডনে বেইজিংয়ের দূতাবাস ব্রিটেনের গোয়েন্দা তথ্য চুরির এই অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট' বলে মন্তব্য করেছে৷
এর আগে ২৫ মার্চ ব্রিটেন অভিযোগ করেছিল, চীনা হ্যাকারেরা বেইজিংয়ের সমালোচনা করা ব্রিটিশ সাংসদদের ইমেল হ্যাক করার চেষ্টা করেছে৷ নির্বাচনি সংস্থা হ্যাক করে কোটি কোটি মানুষের তথ্য চুরির পেছনেও চীন জড়িত বলে অভিযোগ ব্রিটেনের৷
১৮ এপ্রিল নেদারল্যান্ডসের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআইভিডি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বেইজিংয়ের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে চীনের গোয়েন্দারা ডাচ সেমিকন্ডাক্টর, এয়ারোস্পেস ও ম্যারিটাইম শিল্পকে লক্ষ্য করেছিল৷ ‘‘পশ্চিমা বিশ্বের জ্ঞান ও প্রযুক্তি উপর থেকে নির্ভরতা কমাতে চায় চীন৷ সেজন্য তাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন, যেটা তাদের নেই৷ তাই আইনি পদ্ধতি, গবেষণা, বিনিয়োগ, এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও এগুলো পেতে চায় চীন,'' বলে বার্ষিক ঐ প্রতিবেদনে জানায় এমআইভিডি৷
গতবছর ২০ ডিসেম্বর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্দ্রা ডে ক্রো জানান, বেলজিয়ামের উগ্র ডানপন্থি দল ফ্লামস বেলাংয়ের এক সদস্যকে গোয়েন্দা এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বেইজিং৷ এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফ্লামস বেলাং দলের প্রধান ঐ সদস্যকে দল থেক বহিষ্কার করেন৷
২০১৯ সালের চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানির সাবেক কর্মী ও সাবেক পোলিশ গোয়েন্দা এজেন্টকে বেইজিংয়ের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷
এক নজরে বিশ্বের তুখোড় সব গুপ্তচর সংস্থা
ফরেন পলিসি পত্রিকা বিশ্বের সবচেয়ে তুখোড় গুপ্তচর সংস্থাগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করেছে৷ এই সংস্থাগুলিকে চিনুন ছবিঘরে...
ছবি: McPHOTO/blickwinkel/picture alliance
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
১৯৪৭ সালে সিআইএ-র জন্ম৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে নজরদারি চালাতেই মূলত এই সংস্থার জন্ম৷ বর্তমানে, অ্যামেরিকার হ্যালিফ্যাক্স শহরে কেন্দ্রীয় দপ্তর রয়েছে সিআইএ-র৷ খবর চালাচালি ছাড়াও একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে এই সংস্থার নাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসভিআর), রাশিয়া
সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর সাবেক রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ভেঙে বেশ কয়েকটি ছোট সংগঠন তৈরি করা হয়৷ এসভিআরের জন্ম ১৯৯১ সালের সেই সময়েই৷ মার্কিন সূত্রের মতামত, সাবেক কেজিবি-কর্মকর্তা ভ্লাদিমির পুটিন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসভিআরের কর্মক্ষমতা আরো বেড়েছে৷
ছবি: AP
এমআই৬, যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেরই জনপ্রিয় নাম ‘এমআই৬’-এর জন্ম ১৯০৯ সালে৷ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গোয়েন্দা সংস্থা এটি৷ লন্ডনের এসআইএস বিল্ডিঙে অবস্থিত এমআই৬ এককালে পরিচিত ছিল অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের মতো প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মী নিয়োগ করার জন্য৷ পাশাপাশি জেমস বন্ড ছবির সিরিজেও ছিল এমআই৬-এর অনেক প্রভাব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Arrizabalaga
মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি, চীন
চীনের গুপ্তচরবৃত্তির ধরন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সংস্থার থেকে ভিন্ন বলে মনে করছে ফরেন পলিসি৷ চীনা পদ্ধতি এতটাই ভিন্ন যে, একটি নির্দিষ্ট সংস্থার বদলে চীনা গুপ্তচররা সাধারণ ছাত্র, কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশে থাকে৷ ফলে, তাদের খুঁজে বের করাও হয়ে পড়ে কঠিন৷
ছবি: Wikipedia/Shizhao
রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স উইং (র), ভারত
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল পাকিস্তান বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা৷ কিন্তু বর্তমানে এই সংস্থার সাথে জড়িয়েছে বহু বিদেশি অপারেশনের কাহিনী৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংগঠন ‘র’৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), পাকিস্তান
ফরেন পলিসি জানাচ্ছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও ভারতের বিষওয়ে এই সংস্থা বিশেষভাবে সক্রিয়৷ শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালে মুম্বাইতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সাথেও জড়িয়েছে আইএসআই-এর নাম৷ অন্যদিকে, সিআইএ-র সাথে মিলে জঙ্গি দমনেও আইএসআই-এর সক্রিয়তার কথা উঠে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
মোসাদ, ইসরায়েল
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থার সাথে জড়িত রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের গল্প৷ ১৯৬০ সালে যুদ্ধাপারাধী আইচমানের গ্রেপ্তারি থেকে ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে হামলার তদন্ত, মোসাদের সাফল্যের রয়েছে অনেক উদাহরণ৷ ইহুদিদের ইসরায়েলে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বিরাট অবদান রেখে আসছে মোসাদ, জানাচ্ছে ফরেন পলিসি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বুন্ডেসনাখরিশটেনডিন্সট (বিএনডি), জার্মানি
জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম ১৯৫৬ সালে, অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে৷ তার আগে, জার্মানির ‘গেলেন অর্গানাইজেশন’ মূলত গোপন তথ্য সরবরাহের কাজ করতো৷ সিআইএ, এসভিআর, এমআই৬, মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি, র, আইএসআই, মোসাদ আর বিএনডি ছাড়াও ফ্রান্সের ডিজিএসই, অস্ট্রেলিয়ার এসআইএস ও ক্যানাডার সিএসআইএস-ও বিশ্বের তুখোড় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷