1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে নাস্তিকতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা

Lucas Grahame Kommentarbild App
গ্রেহেম লুকাস
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নাস্তিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা – এই দুই শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ একজন নাস্তিক আসলে কে? ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কি বোঝায়? দুটি বিষয় যে একে অপরের চেয়ে একেবারে আলাদা, সেটা সবাইকে বুঝতে হবে, মনে করেন ডিডাব্লিউ-র গ্রেহেম লুকাস৷

বার্লিনে বাসের গায়ে লেখা ‘ঈশ্বর বলে কেউ নেই’ছবি: imago/PEMAX

বিশ্বের অনেক মানুষই ধর্মপ্রাণ৷ তাঁরা ইসলাম, খ্রিষ্টান কিংবা বৌদ্ধের মতো ধর্মে বিশ্বাসী৷ হয়ত তাঁরা খ্রিষ্টান কিংবা ইসলাম ধর্মে থাকা নানান মতবাদে বিশ্বাসী৷ তাঁরা হয়ত হাজার বছর আগে লেখা ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে জীবনযাপন করতে পছন্দ করে৷ এটি তাঁদের পছন্দ এবং এমনটিই হওয়া উচিত৷ কারণ জাতিসংঘ প্রতিটি মানুষকেই যার যার ধর্ম বা বিশ্বাস বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছে৷

কিন্তু এর বাইরেও বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ তাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না৷ তাঁরা নাস্তিক৷ ‘অ্যাগনস্টিক' তথা অজ্ঞেয়বাদীরা আরেকটু অন্যরকম৷ তাঁরা ঈশ্বরে বিশ্বাসও করেন না আবার অবিশ্বাসও করেন না৷ তাঁদের মতে, ঈশ্বর আছে, কি নেই সে রকম কোনো প্রমাণ নেই৷

ইউরোপের মতো দেশগুলোতে ধর্মীয় বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করা হয়৷ ইউরোপীয়রা নাস্তিকতা কিংবা অজ্ঞেয়বাদকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ বলে মনে করে৷ অন্যের বিশ্বাসকে সমালোচনা করা আমার কাজ নয়৷

ইউরোপের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট' (১৬২০ থেকে ১৭৮০) যুগের সময় সমাজে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছোড়া হয়৷ তখন থেকেই নাস্তিকতা ও অজ্ঞেয়বাদ মতবাদের প্রসার ঘটতে থাকে৷ পরবর্তীতে ১৮ ও ১৯ শতকের সময় যখন শিল্পায়ন শুরু হয় তখন থেকে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্ম পালনের হার কমতে থাকে৷

ধর্মনিরপেক্ষতা মানে হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধর্মের প্রভাব থাকবে না এবং রাষ্ট্রের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধর্মীয় নেতারা হস্তক্ষেপ করবে না৷ প্রায় দেড়শো বছর আগে যখন শিল্পায়নের প্রসার ঘটে তখন থেকেই মূলত সেক্যুলারিজমের শুরু৷ ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব হোলিওক ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি প্রথমবারের মতো সেকুলারিজম শব্দটি ব্যবহার করেন৷ তিনি লিখেছিলেন, ‘‘সেকুলারিজম এটা বলে না যে, অন্য কোথাও আলো কিংবা পথনির্দেশনা নেই, তবে এটা বলে যে, ধর্ম নিরপেক্ষ বিশ্বাসে আলো ও পথনির্দেশনা আছে৷'' জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিশ নিৎশে ঊনিশ শতকের শেষ দিকে খ্রিষ্টান ধর্ম পালনের হার কমে যাওয়াকে ‘ঈশ্বর মরে গেছে' বলে অভিহিত করেছিলেন৷

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির বাধা পেরিয়ে পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যবহার করা হয়৷ উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জীবনযাপনের মানে পরিবর্তন আনে৷ এভাবে সমাজে স্থিতিশীলতা ও শান্তি নিশ্চিত হয়৷

গ্রেহেম লুকাস, ডয়চে ভেলে

ইউরোপে যখন বিশের দশকে ধর্মনিরপেক্ষতা ডানা মেলতে শুরু করে তখন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার বাড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় বিশ্বাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ এখনও আফ্রিকা সহ এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে বিভিন্ন ধর্মের প্রসার ঘটছে৷

এই দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে – বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোতে – ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়ছে কারণ মানুষ অন্যের বিশ্বাসকে গ্রহণ করতে চাইছে না এবং যারা অন্যভাবে চিন্তা করছে তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে৷ সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকে হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে আর নাস্তিকদের ভাবা হচ্ছে শত্রু৷

এটি একটি চরম ভুল৷ অনেকদিন ধরে গণতন্ত্রের অনেক সমস্যা ছিল৷ কিন্তু এখনও এটি সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা৷ ধর্ম নিরপেক্ষ গণতন্ত্র ধর্মীয় গোঁড়ামিকে সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সমর্থন করে যেন সবাই, ধর্মপ্রাণ ও নাস্তিকরা, উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে৷

গ্রেহেম লুকাসের মন্তব্যের সঙ্গে আপনি কি একমত? মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ