ক্রোয়েশিয়ার ডুব্রোভনিক শহর এখন ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থল৷ ‘গেম অফ থ্রোনস' সিরিজ শহরটিকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে৷
স্ট্রাডুনের শেষপ্রান্তে অবস্থিত মনোরম পুরনো বন্দরটি অবশ্যই দেখা উচিত৷ ১৫ শতকে চালু হওয়া বন্দরটি আজও ব্যবহার হচ্ছে৷ কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম করার দারুণ এক জায়গা৷ছবি: Markus Mainka/picture alliance
বিজ্ঞাপন
সামাজিক মাধ্যমে এই শহরের দারুণ সব ছবি দেখা যায়৷ কিন্তু শহরটি কি বাস্তবে দেখতে আসলেই সুন্দর? সেটি জানতে এখন আমরা আপনাদের ঐ শহরে নিয়ে যাচ্ছি৷
মধ্যযুগীয় শহর ডুব্রোভনিকের কেন্দ্রস্থলটি ১৯৭৯ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত৷ ‘গেম অফ থ্রোনস' ফ্যান্টাসি টিভি সিরিজের জন্য ২০১১ সালে শহরটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি অর্জন করে৷
সে কারণে ডুব্রোভনিক এখন ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের একটি৷ সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকেরা সেখানে যান, সম্ভবত অনেক বেশিই যান! ডুব্রোভনিকের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার৷ তবে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন সর্বোচ্চ প্রায় ১৫ হাজার দর্শনার্থী সেখানে যান৷
এখন প্রথম হটস্পটের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময়: পুরান ডুব্রোভনিক শহরের দেওয়াল - সেখান থেকে পুরান শহরের দারুন প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়৷
দেওয়ালগুলো অষ্টম শতকের প্রথম দিকে নির্মিত এক দুর্গের অংশ ছিল বলে জানা যায়৷ বর্তমানে এগুলো ইউরোপের সবচেয়ে সংরক্ষিত মধ্যযুগীয় দেওয়ালগুলোর মধ্যে একটি৷ মোট ১৬টি টাওয়ার এবং তিনটি দুর্গ আছে, উচ্চতা সর্বোচ্চ ২৫ মিটার৷
গেম অফ থ্রোনস সিরিজের এই শহর বাস্তবে কেমন?
04:30
This browser does not support the video element.
‘গেম অফ থ্রোনস'-এর কারণে অনেক পর্যটক দেওয়ালগুলো চিনতে পারেন৷ তবে স্থানীয়রা বলছেন, তারা চান না যে সিরিজটি শহরের ইতিহাসকে ঢেকে রাখুক৷ স্থানীয় এক নারী বলছেন, ‘‘হ্যাঁ, ধারণার পরিবর্তন, কারণ, এখন বেশিরভাগ মানুষই ‘গেম অফ থ্রোনস'-এর কারণে আসছেন৷ কিন্তু আমি চাই মানুষ দেওয়ালের ইতিহাস জানুক, শুধু সিরিজের মধ্য দিয়ে শহরটি না দেখুক৷''
দেওয়ালগুলো প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা এবং এগুলো পুরান শহরকে ঘিরে রয়েছে৷ আমরা মনে করি, দেওয়াল ধরে হাঁটলে আপনি পুরান শহরে কী কী আছে সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন৷
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য, পুরান শহরের প্রধান পথচারী রাস্তা: স্ট্রাডুন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় এর অনেক সুন্দর ছবি দেখা যায়৷ কিন্তু বাস্তবে এটি কেমন?
রাস্তাটি পুরনো শহরের মধ্য দিয়ে গেছে৷ এর দুই পাশে আপনি দোকান, ক্যাফে এবং একটি প্রাসাদ দেখতে পাবেন৷ রাস্তার ধারের ভবনগুলো সবই ১৬৬৭ সালে একটি বড় ভূমিকম্পের পর নির্মিত হয়েছিল৷
স্ট্রাডুনের শেষপ্রান্তে অবস্থিত মনোরম পুরনো বন্দরটি অবশ্যই দেখা উচিত৷ ১৫ শতকে চালু হওয়া বন্দরটি আজও ব্যবহার হচ্ছে৷ কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম করার দারুণ এক জায়গা৷
যে জাদুময় জায়গায় হলো গেম অফ থ্রোনসের শ্যুটিং
পুরোনো সব দুর্গ, নুয়ে পড়া গাছে ঢাকা সর্পিল পথ, কিংবা কলকল বয়ে চলা বুনো ঝিরি, এমন সব মায়াময় জায়গায় শ্যুটিং হয়েছে বিখ্যাত টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোনস৷ এসব জাদুকরী জায়গার অনেকগুলোই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে৷
ছবি: Courtesy of Tourism Northern Ireland
ক্যাসল ওয়ার্ড
যারা নিয়মিত ‘গেম অফ থ্রোনস’ দেখেন, তাদের স্টার্ক ফ্যামিলির উইন্টারফেল ফরট্রেসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই৷ কিন্তু এই দুর্গটি আসলে কোথায়? নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ওয়ার্ড ক্যাসলই হলো মুভি সিরিজটির উইন্টারফেল ফরট্রেস৷ পর্যটকদের জন্যও উন্মুক্ত৷ এমনকি সেখানে গিয়ে আপনি তির-ধনুক ছুঁড়তে পারবেন, কিংবা তলোয়ারের লড়াইয়েও অংশ নিতে পারবেন৷ রাজকীয় পোশাক আর ভোজও মিলবে৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
অডলি’স ফিল্ড
ক্যাসল ওয়ার্ড থেকে একটু হেঁটে গেলেই মুভির আরেকটি লোকেশন৷ ল্যানিস্টারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় অডলি’স ফিল্ডে ক্যাম্প বসান রব স্টার্ক৷ হুইস্পারিং উডে এই যুদ্ধে জেইমি ল্যানিস্টারকে আটকও করেন তিনি৷ কিন্তু এর কিছু পরই নিজেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ‘রেড ওয়েডিং’-এ মারা যান রব৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
টলিমোর ফরেস্ট
অডলি’স ফিল্ড থেকে ঘন্টাখানেক গাড়ি চালিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন টলিমোর ফরেস্টে৷ উইন্টারফেলের চারপাশের অনেক দৃশ্যের শ্যুটিং এখানে হয়েছে৷ স্টার্ক পরিবারের শিশুরা এখানেই ছায়া নেকড়ের বাচ্চাদের খুঁজে পায়৷ ‘গেম অফ থোর্নস’ ফ্যানদের জন্য এ জায়গাটি ভ্রমণের বিকল্প নেই৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
ডার্ক হেজেস
ডার্ক হেজেসের মাঝের রাস্তাটি এমন নির্জন অবস্থায় দেখা রীতিমতো বিরল ব্যাপার৷ দিনের বেলায় পর্যটকদের গাড়ি ও বাসে ভর্তি হয়ে যায়৷ রাজার উত্তরে গমনের পথ এটি৷ বাবার মৃত্যুর পর আরিয়া এই পথেই সিটি অফ আয়রন থ্রোন থেকে পালিয়ে আসেন এবং তাঁর দীর্ঘ কষ্টকর যাত্রা শুরু হয়৷
ছবি: Courtesy of Tourism Northern Ireland
কুশেনডুন কেইভস
৪০ কোটি বছরের চরম আবহাওয়া আজকের আয়ারল্যান্ডের উত্তর উপকূলের এই কাঠামো দাঁড় করিয়েছে৷ তৈরি হয়েছে কুশেনডুনের গুহা৷ গেম অফ থ্রোনসের দ্বিতীয় সিজনে এটি একটি শ্যুটিং লোকেশন ছিল৷ এখানেই লাল ধর্মযাজিকা মেলিসান্দ্রে অন্ধকার ছায়ার জন্ম দেন, যে কিনা পরে রেনলি বারাথেওনকে হত্যা করে৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
শিলানাভোগি ভ্যালি
বেলফাস্টের ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ঘোড়ায় চড়া ডথরাকিদের বাড়ি৷ ছবিতে যে পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে, সেটির নাম স্লেমিশ৷ শক্তিশালী হর্সলর্ডদের অনেকগুলো দৃশ্যের শ্যুটিং এখানে হয়েছে৷
ছবি: Courtesy of Tourism Northern Ireland
পোর্টস্টুয়ার্ট স্ট্র্যান্ড
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র সৈকতের একটি পোর্টস্টুয়ার্ট৷ জেইমি ল্যানিস্টার ও সের ব্রোন মুভিতে যে কোস্ট অফ ডর্নে মার্টেল গার্ডদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তার চিত্রধারণ করা হয়েছিল এখানেই৷
ছবি: Courtesy of Tourism Northern Ireland
বালিনটয়
বালিনটয়ের পোতাশ্রয়টি গেম অফ থ্রোনসের আয়রন দ্বীপপুঞ্জের মূল পাইক দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷ আশেপাশের গ্রামগুলোর কাছের সৈকতেও শ্যুটিং হয়েছে৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
ল্যারিবেন
মুভিতে স্টর্মল্যান্ডসে ক্যাম্প বসান রেনলি বারাথিওন৷ ব্রিয়েনে অফ টার্থ এখানেই লোরাস টাইরেলকে একটি টুর্নামেন্টে পরাজিত করেন এবং রেনলি’স কিংসগার্ড খেতাব পান৷
ছবি: Courtesy of Tourism Northern Ireland
ডাউনহিল বিচ
এই দ্বীপের উত্তর দিকে খাড়া বাঁধের ওপর রয়েছে মুভির ড্রাগনস্টোন৷ একটি সফল বিদ্রোহের পর হাউস অফ টার্গারিয়েনের পূর্ববংশীয় আসনটি অল্প সময়ের জন্য বারাথেওনদের সম্পত্তি হয়ে যায়৷
ছবি: Northern Ireland Tourism Board
10 ছবি1 | 10
এবার তৃতীয় হটস্পটে যাওয়ার সময়: মাউন্ট সার্জ৷
প্রতি বছর চার লাখের বেশি দর্শনার্থী এই কেবল কারে চড়ে ডুব্রোভনিকের স্থানীয় পাহাড়ে বেড়াতে যান৷ যাত্রাপথটি মাত্র চার মিনিটের৷ রাউন্ড ট্রিপ টিকিটের দাম ২৭ ইউরো৷
একবার উপরে উঠলে আপনি বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন৷ সূর্যাস্তের সময়কার আলোর দৃশ্য অবিশ্বাস্য৷
এবার তিনটি হটস্পট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানোর পালা৷
শহরের ঐতিহাসিক দেওয়াল, পুরান শহরের প্রধান পথচারী রাস্তা এবং মাউন্ট সার্জ থেকে দেখা দৃশ্য, সবকিছুই ছবিতে দেখা যাওয়ার মতোই সুন্দর!