২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিনচালিত ছোট যান বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তারপর থেকে শুধু বিকল্প জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যান পথে নামার অনুমোদন পাবে৷
বিজ্ঞাপন
জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে বিশ্বব্যাপী যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হচ্ছে, অনেক দেশই ঠিক সময়ে তা পূরণ করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ বিশেষ করে পরিবহণের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছে কিছু দেশ৷ এবার রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও এমন অঙ্গীকার করলো৷ অনেক তর্কবিতর্ক ও দরকষাকষির পর বৃহস্পতিবার ইইউ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ এর আওতায় ২০৩৫ সালের পর ২৭টি ইইউ সদস্য দেশগুলিতে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত কোনো নতুন যান অনুমোদন পাবে না৷ অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত কম্বাশন ইঞ্জিনের আয়ু অদূর ভবিষ্যতেই শেষ করতে বদ্ধপরিকর এই রাষ্ট্রজোট৷ ২০৩৫ সাল থেকে শুধু বিকল্প ও দূষণহীন জ্বালানিচালিত গাড়ি ও ভ্যানই পথে নামার অনুমোদন পাবে৷ তবে পুরানো যান নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না৷ সেগুলি আয়ু শেষ হওয়া পর্যন্ত পথে নামতে পারবে৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় ১৫ শতাংশের উৎস গাড়ি৷ গোটা পরিবহণ ক্ষেত্র প্রায় এক চতুর্থাংশ নির্গমনের জন্য দায়ী৷ বর্তমানে ইইউ দেশগুলিতে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির প্রায় ১২ শতাংশে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে৷
‘জিরো এমিশন মোবিলিটি' লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কারণ বর্তমানে একাধিক সংকটের ফলে কাচামালের সরবরাহ থেকে শুরু করে দক্ষ শ্রমিকের অভাব গাড়ি শিল্পের উপরেও কুপ্রভাব ফেলছে৷ সে কারণে ২০২৬ সালে ইইউ নতুন করে এই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করবে৷ তবে ধাপে ধাপে কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনার কর্মসূচির ক্ষেত্রে কোনো আপোশ করতে চাইছে না ব্রাসেলস৷ ‘ফিট ফর ফিফটিফাইভ’ নামের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ১৯৯০ সালের তুলনায় ৫৫ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ইইউ৷ তারপর ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর ২৭টি সদস্য দেশ৷
২০৩৫ সালের পর কম্বাশন ইঞ্জিন কার্যত নিষিদ্ধ করার এই উদ্যোগের পেছনে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এসেছে৷ সদস্য দেশগুলি এমন ইঞ্জিন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার বদলে কার্বনহীন কৃত্রিম জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে সওয়াল করেছিল৷ গাড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সদস্য দেশ জার্মানির বর্তমান জোট সরকারের তিন শরিক দলের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে মতভেদ কম ছিল না৷ বিশেষ করে উদারপন্থি এফডিপি দল এমন পদক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করেছে৷ অনেক দরকষাকষির পর শেষ পর্যন্ত ইইউ পরিবেশমন্ত্রীরা সম্মিলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এবার সদস্য দেশগুলিকে জাতীয় স্তরে আইন প্রণয়ন করে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে৷
ইউরোপের গাড়ি শিল্প এই সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছে৷ জার্মানির গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন ভিডিএ-র প্রেসিডেন্ট হিল্ডেগার্ড ম্যুলার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ২০৩০ সালের পরের জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা বাস্তবসম্মত নয়৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি ব্যাটারিচালিত গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় চার্জিং পয়েন্টের অবকাঠামোর অভাবের উল্লেখ করেন৷ এছাড়া কাঁচামালের জোগান ও যথেষ্ট মাত্রায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তাও এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে অন্তরায় হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন৷ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্য অবিলম্বে এমন সব অনিশ্চয়তা দূর করার কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ম্যুলার একই সঙ্গে কার্বনহীন সিন্থেটিক ফুয়েল ব্যবহার করে কম্বাশন ইঞ্জিন চালানোর পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি৷ ইউরোপীয় গাড়ি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠনও অবকাঠামো মজবুত করার উপর জোর দিচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
জলবায়ু পরিবর্তনের লড়াইয়ে বাংলাদেশের কৃষকের অস্ত্র ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়ছেন বাংলাদেশের কৃষকরা। সাধারণ জীবনযাপনের মাঝেই বহুকালের পুরনো পদ্ধতি মেনেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তারা। দেখুন ছবিঘরে..
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
ভাসমান খেত
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নিয়মিত বিরতিতে বন্যার কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। খাদ্য নিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিরোজপুর জেলার একজন কৃষিজীবী ভাসমান খেতে সেচের কাজ করছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক কৃষকই ফসলের চারা রোপণ করেন। বর্ষাকালে শুষ্ক জমিতে কচুরিপানার মতো জলজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি ভাসমান ভেলায় সবজি চাষ করেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কীভাবে যত্ন
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে ৪২ বছর বয়সি কৃষক মোহাম্মদ মোস্তফা তার ভাসমান খামারে চারার শিকড়ের উপরে জলের আগাছাগুলিকে রাখার চেষ্টা করছেন৷ তিনি রয়টার্সকে বলেন, "আমার বাবা এবং পূর্বপুরুষরা সবাই এ কাজ করেছেন৷ কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। পাঁচ বছর আগে ভাসমান খেতে চাষ করতে শুরু করি। এটি আমার জীবনে বড়সড় পরিবর্তন এনেছে।"
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘ওরা কাজ করে’
কৃষক মোহাম্মদ সেলিম বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় তার খামারে ভাসমান খেতের ছাদে দড়ি দিয়ে একটি লাউ ঝুলিয়ে দিচ্ছেন। এই কৌশলটি শুষ্ক মৌসুমে শাকসবজিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
বিক্রিবাটা চলছে
বাংলাদেশের পিরোজপুরের বেলুয়া নদীর তীরে একটি দ্বি-সাপ্তাহিক ভাসমান বাজারে কৃষকরা তাদের সবজি, ফল এবং চারা বিক্রি করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
জীবন বাঁচানোর উপায়
জলজ আগাছার ডালপালা থেকে বোনা ভেলাগুলি তাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রেখেছে। চরম বর্ষায় যখন শুষ্ক জমি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে, তখন এটি কাজে লাগে। এভাবেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
কাজ ভাগ করে নেয়া
বছর ৩৫-এর মুর্শেদা বেগম তার স্বামী মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে পিরোজপুর জেলায় তাদের বাড়ির ভাসমান খামারে রোপণের জন্য একটি নৌকায় চারা তুলে রাখছেন। ঝড়, বন্যা এবং ক্ষয়জনিত বৃষ্টির প্রভাবে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশে আশার আলো মুর্শেদা-মোহাম্মদরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাল ছেড়ো না
ভাসমান খামারগুলি এখন পিরোজপুর জেলায় মোট ১৫৭ হেক্টর (৩৮৮ একর) জুড়ে বিস্তৃত। নাজিরপুরে এগুলি ১২০ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। পাঁচ বছর আগে এমন জমি ছিল মাত্র ৮০ হেক্টর। ২০০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাচ্ছেন কৃষকরা।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
খামারে ভরসা
পিরোজপুরের একজন কৃষক ভাসমান খামারের কাজ করছেন। জলবায়ুর প্রভাব প্রাকৃতিক কারণে আরো জটিল হচ্ছে। টেকটোনিক পরিবর্তনের ফলে খেত ডুবে যাচ্ছে। উজানের বাঁধগুলি পলিকে ধরে রাখছে, যেগুলি আসলে ক্ষয়প্রাপ্ত ব দ্বীপ গঠনের কাজে লাগে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
প্রকৃতির পুত্র
পিরোজপুর জেলার এই কিশোরের নাম রাতুল ইসলাম। বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করার জন্য নৌকা থেকে লাফ দিচ্ছে সে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উদ্যোগী এই কিশোরও।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
মায়ের পাশে
বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলায় মুর্শেদা বেগমের ছেলে রাতুল। দুপুরে মায়ের সঙ্গে আড্ডা দেয় ঠিকই, তবে সে ভাসমান খেতের কাজেও সাহায্য করে।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
নারী শক্তির উদ্যোগ
পিরোজপুরে মুর্শেদা, তার মেয়ে এবং প্রতিবেশীরা স্থানীয়ভাবে গাছের পাতাগুলোকে পাতলা টুকরো করে কেটে ওয়াটার লেটুসের বীজের বল বেঁধেছেন।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
হাতে কালো দাগ
ওয়াটার লেটুস চারা থেকে ক্রমাগত বল তৈরি করার ফলে কালো দাগে ভরে গিয়েছে মুর্শেদার হাত। কিন্তু হাল ছাড়ছেন না তিনি। প্রকৃতির সঙ্গে এভাবেই বাঁচার চেষ্টা করছেন মুর্শেদা তার পরিবার।
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
রোজের জীবন
পিরোজপুরে গ্রামবাসীরা আখ কেনার জন্য একজন বিক্রেতার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন। চাষবাস, সংসার, ছোটদের পড়াশোনা, বাজার হাটের পাশাপাশি প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা- এভাবে আশার আলো দেখাচ্ছেন পিরোজপুরের এই কৃষিজীবী পরিবারগুলি।