মন্দা কাটিয়ে ইউরোপে প্রবৃদ্ধি আনার পথে বড় অন্তরায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের চালিকা শক্তি জার্মানি ও ফ্রান্স – ইইউ অর্থনীতি বিষয়ক কমিশনর অলি রেন-এর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় ১৮ মাসের মন্দা কেটে গেলেও প্রবৃদ্ধির পথে ফিরতে ইউরোপের সময় লাগছে৷ এই অবস্থায় ইউরো এলাকার মধ্যে অর্থনৈতিক নীতির আরও সমন্বয়ের উপর জোর দিচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন৷ ইইউ অর্থনীতি বিষয়ক কমিশনর অলি রেন মনে করেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বড় দেশকেও নীতিমালা মেনে চলতে হবে৷
বিশেষ করে জার্মানির রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির বিপুল সাফল্য অন্যান্য দেশগুলির ক্ষতি করছে বলে সমালোচনা করেছেন রেন সহ অনেকেই৷ সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানির ‘ট্রেড সারপ্লাস' বা বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ১,৮৯০ কোটি ইউরো৷ মূলত ইইউ দেশগুলিতে রপ্তানি করেই এই সাফল্য পাচ্ছে জার্মানি৷ ফলে সেই সব দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না৷ এদিকে জার্মানির ভোক্তাদের চাহিদা তেমন না বাড়ার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলির পণ্য ও পরিষেবা সেখানে বিক্রি হচ্ছে না৷ এই মডেলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বেড়ে চলেছে৷ অলি রেন মনে করেন, জার্মানি অর্থনীতির এই কাঠামোয় পরিবর্তন আনলে এবং ফ্রান্সে বকেয়া সংস্কার শুরু করতে পারলে তবেই ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে৷
ইউরোপের যা কিছু নজর কাড়ে
ইউরোপের সাংস্কৃতিক জীবনের নানা দিকের ব়্যাংকিং হচ্ছে ‘ইউরোপ লিস্ট’৷ জার্মানির গ্যোটে ইন্সটিটিউট ৩০টি দেশের ২২ হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করেছে এই তালিকা৷ এখানে তার সারাংশ উপস্থাপন করা হলো৷
ছবি: Fotolia
গণতন্ত্র, দ্য ভিঞ্চি, ডন কিখোটে
ইউরোপীয়দের মধ্যে যোগসূত্র কি? এই মহাদেশের সেরা শিল্পী কে? কোন দেশের রান্নার সবচেয়ে সেরা? জার্মানির গ্যোটে ইন্সটিটিউট তাদের ‘ইউরোপ লিস্ট’ তৈরির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলো বেছে নিয়েছে৷ ৩০টি দেশের এবং ২৪টি ভাষার ২২ হাজার মানুষ এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ অনলাইন সমীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছে: গণতন্ত্র, ডন কিখোটে এবং দ্য ভিঞ্চি৷
ছবি: Fotolia
সংস্কৃতির মাধ্যমে সংযোগ
‘সংস্কৃতি’ হচ্ছে ইউরোপীয়দের মধ্যকার সংযোগসূত্র – সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ এমনটাই মত দিয়েছেন৷ ‘কমিউনিটি’ এবং ‘ভ্রমণের স্বাধীনতাও’ তালিকার উপরের দিকে রয়েছে৷ বিশ্বের সংস্কৃতিতে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে গণতন্ত্র, মনে করেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়ারা৷
ছবি: Marco Caselli Nirmal
বিদেশের চোখে
সমীক্ষায় শুধু ইউরোপীয়দের প্রশ্ন করা হয়নি৷ ২৯৪ জনের মতো মিশরীয় এই অনলাইন সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন, ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পেলে সবার আগে জার্মানিকে বেছে নেবেন তারা৷
ছবি: Reuters
আইফেল টাওয়ার
মিশরীয়দের মতে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হচ্ছে আইফেল টাওয়ার৷ জরিপে অংশ নেওয়াদের ২৫ শতাংশই এটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ তবে জাতিভেদে গ্রিক, ইটালীয় এবং ফরাসিরা তাদের নিজস্ব স্থাপনার পক্ষেও অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Loic Venance/AFP/GettyImages
‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’
ইউরোপের সেরা ছবি বাছাইয়ের কাজটি বেশ দুরূহ৷ ইটালীয় ছবি ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ এক্ষেত্রে আট শতাংশ ভোট পেয়ে সেরার আসনটি জয় করেছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে একটি ইহুদি পরিবারের অবস্থা নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি৷ জার্মান ছবি ‘দ্য লাইভস অফ আদারস’ এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘মোনালিসা’
সমীক্ষায় ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী’ বিভাগে ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯)৷ তিনি ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, স্থাপত্যবিদ, শরীরতত্ত্ববিদ এবং প্রকৌশলী৷ ‘মোনালিসা’ ছবিরি সৃজনকর্তা দ্য ভিঞ্চি৷
ছবি: Getty Images
ডন কিখোটে
গ্যোটে ইন্সটিটিউটের সমীক্ষায় সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে রয়েছে স্পেন৷ সাহিত্যিক মিগুয়েল দে কেরভান্তেস-এর লেখা ‘ডন কিখোটে’ বইটির প্রতি আগ্রহ দেখেয়েছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Str
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ
‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ’ বিভাগের ফলাফল অনেক বিস্মিত করতে পারে৷ অতীতের নন বরং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ সমীক্ষায় অংশ নেওয়াদের ১৮ শতাংশ তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷ তারপরেই আছেন ইংরেজ রাজনীতিবিদ উইন্সটন চার্চিল, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাডল্ফ হিটলারের কাছ থেকে ব্রিটেনকে রক্ষা করেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
সেরা ক্রীড়াবিদ
সার্বিয়ার টেনিস খেলোয়াড় নোভাক জোকোভিচ ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন৷ সমীক্ষায় অংশ নেওয়া সার্বদের মধ্য থেকে ৭২ শতাংশ তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷ ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুলাই অবধি এটিপি বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে ১ নম্বরে ছিলেন জোকোভিচ৷ জার্মানির ফর্মুলা ওয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মিশায়েল শুমাখার এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপের বিষয়ে আলোচনা
গ্যাটো ইন্সটিটিউট, ব্রাসেলস-এর পরিচালক বার্থল্ড ফ্রাঙ্কের মতে, ‘‘এই সমীক্ষার মাধ্যমে ইউরোপের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে একটি নতুন এবং ভিন্ন আঙ্গিকে বিবেচনা করা হয়েছে৷’’ ভবিষ্যতে এই ‘ইউরোপ লিস্ট’ বিষয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা টেলিভিশন এবং ওয়েবসাইটে আলোচনা অংশ নেবেন৷
ছবি: Fotolia
10 ছবি1 | 10
জার্মানিতে এই মুহূর্তে আগামী জোট সরকার গড়ার প্রস্তুতি চলছে৷ তবে আর্থিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা মোটামুটি বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর সরকার মনে করে, জার্মান অর্থনীতির সাফল্যের পেছনে রয়েছে সঠিক সময়ে সংস্কার ও সরকারি ব্যয়ে লাগাম রাখার সিদ্ধান্ত, যা বাকিদেরও অনুসরণ করা উচিত৷ অর্থাৎ শুধু রপ্তানি কমিয়ে বাকিদের সমস্যার সমাধান করা যাবে না বলে মনে করে জার্মানি৷
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড-এর প্রাক্তন প্রধান অ্যালেন গ্রিনস্প্যান সম্প্রতি ফ্রাংকফুর্টে বলেছেন, ইউরো-র দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য চাইলে ইউরোপকে রাজনৈতিক ইউনিয়নের পথে এগোতে হবে৷ শুধু একক মুদ্রা ও অর্থনৈতিক ইউনিয়ন এমন একটি কাঠামো ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়৷ উল্লেখ্য, জাতীয় স্তর থেকে ক্ষমতা ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ইইউ-র জন্মলগ্ন থেকে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে৷
এদিকে সোমবার ইউরোপের পুঁজিবাজার বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য এর অন্যতম কারণ৷ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনার প্রবণতা বাড়তে চলেছে৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে সুদের হার আরও কমানোর ফলে ইউরো-র বিনিময় মূল্যও সোমবার বেড়ে গেছে৷ তবে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে আবার কিছুটা দরপতন ঘটেছে৷