বেশ কিছু প্রবিধান আরোপ ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে সম্প্রতি বাতাস অনেকটাই দূষণমুক্ত করে নিয়ে এসেছে ইউরোপ৷ তবে গবেষণা বলছে, বছরে এখনো ইউরোপে গড়ে ৫ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু হয়৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি (ইইএ) বায়ু দূষণকে ‘অদৃশ্য ঘাতক' বলে উল্লেখ করে৷ কোপেনহেগেনভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, বাতাসে ‘পিএম ২.৫' নামের খুব ছোট বিষাক্ত কণার উপস্থিতির কারণে ২০১৫ সালে প্রায় ৫ লাখ ইউরোপীয় অকালে মারা গেছেন৷
তবে ১৯৯০ সালের তুলনায় এই অকালমৃত্যু অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে ইইএ৷
‘‘বায়ু দূষণ নীরব ঘাতক এবং আমাদের এর কারণগুলো নিয়ে দ্বিগুণ কাজ করতে হবে,'' বলেন ইইএ প্রধান হান্স ব্রুইনিনক্স৷ ‘‘পরিবহণ, জ্বালানি ও কৃষি খাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উন্নয়নে আরো বিনিয়োগ করতে হবে৷''
পরিবেশ বাঁচাতে ডিজেলের গাড়ি কমাতে চায় যেসব শহর
বিশ্বের বড় শহরগুলি যে সমস্যার সঙ্গে যুঝছে, সেটি হলো স্মগ বা কুয়াশা৷ শহরের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ডিজেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, তাই নিয়ে বিতর্ক চলছে জার্মানিতে৷ ‘ড্রাইভিং ব্যান’ হবে মুশকিল আসান?
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
গাড়ির শেষ নেই
জার্মানির স্টুটগার্ট শহরের একটি সরণি৷ এভাবে চললে বায়ুদূষণ প্রায় অবধারিত বলা চলে; গাড়ির ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা যোগ হয়ে যদি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়, তবে তো কথাই নেই৷ কিন্তু গাড়ি চলাচল আধুনিক সভ্যতা ও জীবনযাত্রার অঙ্গ৷ তাহলে কি শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বা রাস্তায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের গাড়ি চলা নিষিদ্ধ করেই পার পাওয়া যাবে?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
অসলোয় বায়ুদূষণ বাড়লে ডিজেল গাড়ি চলা বারণ
নরওয়ের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ২০১৭ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে৷ অবশ্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবার যানবাহন ডিজেল হলেও চলতে পারে৷ এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে সিটি সেন্টারে সরকারি পার্কিং লট ও গ্যারেজ কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Fotolia/nanisimova
প্যারিসও ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে
২০২৪ সাল থেকে ফ্রান্সের রাজধানীতে ডিজেল গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হবে; ২০৩০ সাল থেকে প্যারিসে ডিজেল বা পেট্রোল, কোনো ধরনের খনিজ তেলে চলা গাড়ি নিষিদ্ধ করা হবে – অর্থাৎ প্যারিসে শুধু ইলেকট্রিক গাড়ি চলবে৷ বর্তমানে প্যারিসে বায়ুদূষণ একটা বিশেষ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে, ‘রোটেশন সিস্টেম’ অনুযায়ী শুধুমাত্র জোড় বা বেজোড় নাম্বারপ্লেটের গাড়ি চলতে পারে৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
লন্ডনে গাড়ির ভিড়ের মাশুল
লন্ডনের কেন্দ্রে গাড়ি চালাতে গেলে দিনে ১০ পাউন্ড বা প্রায় ১৪ ডলার কিংবা ১১ ইউরো মাশুল গুণতে হয়৷ উদ্দেশ্য – মানুষ যেন গাড়ি নিয়ে শহরের কেন্দ্রে না আসেন৷ ২০০৩ সাল থেকে এই ‘কনজেশ্চান চার্জ’ বসানো হয়েছে৷ রাস্তায় লাগানো যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির নাম্বারপ্লেট চিনে নিতে পারে – অর্থাৎ ধরতে পারে, ‘ভিড়ের মাশুল’ দেওয়া হয়েছে কিনা৷ নয়তো ২৪০ পাউন্ড অবধি জরিমানা!
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশ্বের সবচেয়ে সাইকেল বান্ধব শহর
কোপেনহেগেনে ২০১৯ সাল থেকে ডিজেল গাড়ি ঢোকা বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে৷ বর্তমানে ডেনমার্কের রাজধানীতে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা শুধুমাত্র সাইকেল আরোহীদের জন্য রাখা; শহরের অর্ধেক বাসিন্দা সাইকেলে চড়ে অফিস যান৷ উদ্দেশ্য – সাইকেল চালানো যেন গাড়ি চালানোর চেয়ে শুধু সস্তাই নয়, নির্ঝঞ্ঝাটও হয়৷
ছবি: picture-alliance/Hans Ringhofe
মাদ্রিদের বিভিন্ন এলাকা শুধু পথচারীদের
মাদ্রিদের রয়্যাল থিয়েটারের সামনের চত্বরটিতে ইতিমধ্যেই গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ, অন্যান্য এলাকাও ‘পেডেস্ট্রিয়ান জোন’ ঘোষণা করার প্রচেষ্টা চলেছে৷ লক্ষ্য হলো আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্পেনের রাজধানীর গোটা কেন্দ্রীয় অংশটি শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য খোলা রাখা৷ এর কারণ হলো, মাদ্রিদের চারপাশে পাহাড় থাকার ফলে দূষিত বায়ু শহরেই আটকা পড়ে ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়৷
হেলসিংকির ট্রাফিক অ্যাপ
ভবিষ্যতে হেলসিংকিতে সরকারি পরিবহণ আরো ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে, কেননা, আগামী দশ বছরের মধ্যে সব ধরনের সরকারি পরিবহণকে একটি অ্যাপ-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে; বাস, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ও (ছবিতে) মিনিবাসগুলির কোনো নির্দিষ্ট রুট থাকবে না ৷ তারা অ্যাপ অনুযায়ী যাত্রী তুলে নিতে পারবে৷ এরপরে ফিনল্যান্ডের রাজধানীতে সবাই যদি গাড়ি কেনাই ছেড়ে দেয়, তো আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Li Jizhi
দিল্লিতে ইলেকট্রিক রিকশা
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লি কুয়াশা বা ধোঁয়ার জন্য আজ বিশ্বসেরা৷ কাজেই সেখানে এই ইলেকট্রিক রিকশাগুলি একটি আশার আলো বৈকি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে দিল্লিতে যাবতীয় নতুন গাড়ি বিদ্যুৎচালিত হবে, এই হলো পরিকল্পনা; অর্থাৎ ডিজেল বা পেট্রোলে চলা গাড়ি কুয়াশার মতোই কালে বিলীন হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
8 ছবি1 | 8
গবেষণাটি ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপের ৩৯টি দেশের আড়াই হাজার স্থানের বায়ুর গুণাগুণ পরিমাপ করা হয়৷ তাতে দেখা যায়, পরিবহণ খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বাতাস দূষণ হয়৷ বিশেষ করে ডিজেলের নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমণ এর প্রধান কারণ৷ লন্ডন ও প্যারিসের মতো বড় শহরগুলো এই দূষণের প্রধান শিকার৷ জার্মানি ও তুরস্কেরও অনেক অঞ্চলেই দূষণের মাত্রা অনেক বেশি৷
ইইএ'র এই গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষতিকর পিএম২.৫-এর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি আছে উত্তর ইটালি, পোল্যান্ড, বলকান অঞ্চল ও তুরস্কের বাতাসে৷
অন্যদিকে ভূ-মধ্য সাগরীয় অঞ্চলে ওজোন স্তরের দূষণের মাত্রা বেশি৷ নাইট্রোজেন অক্সাইডের সঙ্গে সূর্যের প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটি ঘটেছে৷
ইইএ'র গবেষণা প্রকাশের দিনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বায়ু দূষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেই গবেষণাতেও একই রকমের ফল দেখা গেছে৷ যেমন, জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, ২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ৫ লাখ ৪৩ হাজার শিশু (বয়স ৫ বছরের নীচে) বায়ু দূষণের কারণে মারা গেছে৷ তবে গরীব দেশগুলোতে শিশুরা বেশি ঝুঁকির মধ্যেআছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷