ইউরোপে মাটি ক্ষয়ের সমস্যা
৮ ডিসেম্বর ২০২৩উন্নত দেশগুলোর কৃষিজমি উপর থেকে দেখলে সবুজ আর স্বাস্থ্যবান মনে হয়৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভালো করে দেখলে বোঝা যায় মাটির গুণাগুণ দিন দিন কমছে৷
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদের শূন্যতা রয়েছে৷
মানুষের ভালোমন্দের উপর এর বড় প্রভাব রয়েছে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, মাটি ক্ষয়ের কারণে ইউরোপের প্রত্যেক নাগরিকের বছরে ১১২ ইউরো সমপরিমাণ খরচ হচ্ছে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড. আলিশার মির্জাবায়েভ বলেন, ‘‘এই খরচ - যদিও দেখা যায় না - মানুষের জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ যেমন, আমরা ফসল উৎপাদন করলে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করতে পারি৷ কিন্তু আমাদের যদি একটি বন থাকে, তাহলে বন আমাদের অনেক ইকোসিস্টেম পরিষেবা প্রদান করতে পারে৷ এই পণ্যগুলির মধ্যে কিছু বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে, যেমন কাঠ বা অ-বনজ পণ্য৷ কিন্তু অনেকগুলো বিক্রি হয় না, যেমন কার্বন সিকোয়েসট্রেশন৷ পানি শোধন, বায়ু শোধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো আরও অনেক পরিষেবাও বন থেকে পাওয়া যায়৷’’
এগুলো সব গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা, যা প্রকৃতি আমাদের বিনামূল্যে দিয়ে থাকে৷ তবে মানুষ যদি প্রকৃতি ঠিক রাখে, তাহলেই সেটি সম্ভব হয়৷ কিন্তু গত কয়েক দশকে বিষয়টি এমন ছিল না৷ তাই, হয় এখন মানুষকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে এবং ক্ষতি সারানোর চেষ্টা করতে হবে, নয় পরিণতি ভোগ করতে হবে৷ ‘‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ভূমি ক্ষয়ের কারণে পূর্ব ইউরোপ ৫ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ক্ষতির মুখে পড়বে৷ আর পশ্চিম ইউরোপের ক্ষতি হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার৷ অর্থাৎ পুরো ইউরোপের ক্ষতি হবে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার,’’ বলেন ড. মির্জাবায়েভ৷
কিন্তু মানুষ কী করেছে যে, মাটির এমন ক্ষতি হয়েছে? অত্যধিক চাষ, যেটা থেকে কার্বন নির্গত হয়, আধুনিক কৃষিপদ্ধতি ব্যবহার, একটিমাত্র ফসল চাষের সংস্কৃতি এবং সারের অসম ব্যবহারের কারণে মাটির ক্ষতি হয়েছে৷
সারা বিশ্বে মাটির গুণাগুণ ফিরিয়ে আনতে কী করতে হবে? এক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠি হচ্ছে, সঠিক নীতি গ্রহণ, বলছেন ড. মির্জাবায়েভ৷ তিনি বলেন, ‘‘একদিকে সরকার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ একইসময়ে সরকার প্রণোদনা দিতে পারে, বলতে পারে ‘আপনি দারুণভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা করছেন, যে কারণে ইকোসিস্টেম পরিষেবা বাড়ছে, এর উন্নতি হচ্ছে৷ তাহলে আপনি কম কর দিচ্ছেন না কেন? বা আপনি কেন বেশি ভর্তুকি পাবেন না?’’
মির্জাবায়েভ বিশ্বাস করেন, মাটির ক্ষয় বিষয়ে মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে সচেতন করা উচিত৷ সে কারণে তিনি ‘সেভ সয়েল’ আন্দোলনের একজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন৷ যোগী ও পরিবেশবাদী অ্যাক্টিভিস্ট সদগুরু ২০২২ সালে এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এতে সমর্থন জানিয়েছে৷
অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন, নীতি পরিবর্তন করা না হলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মাটির উপরিভাগ ঝুঁকিতে পড়বে৷
লাভিনিয়া পিটু/জেডএইচ