‘ইউরোপে মার্কিন উপস্থিতি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
২৪ জুন ২০২০
ন্যাটো মহাসচিব ইয়েনস স্টল্টেনব্যার্গ বলেছেন, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি ন্যাটোতে জার্মানিকে আরও নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ন্যাটোর শর্ত অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বাজেট না বাড়ানোয় জার্মানির সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জার্মানি থেকে প্রায় সাড়ে নয় হাজার মার্কিন সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এছাড়া জার্মানিকে তিনি ‘কর্তব্যবিমুখ’ বলেও অভিযুক্ত করেছেন৷
ট্রাম্পের এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সংখ্যা ২৫ হাজারে নেমে আসবে৷
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস ট্রাম্পের ঘোষণার সমালোচনা করেছেন৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ন্যাটোর মহাসচিব বলেন, ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে সবসময় মতপার্থক্য ছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ন্যাটোকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল জোট মনে করেন তিনি৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্টল্টেনব্যার্গ জানান, ন্যাটো গঠনের মূল লক্ষ্য ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একে অন্যকে রক্ষা করা৷ এই কাজ করতে গিয়ে সবাই সবসময় একমতে পৌঁছেছে৷
ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যে এখন যে মতের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে তা কেটে যাবে বলে আশা করছেন ন্যাটো মহাসচিব৷ তিনি বলেন, গতসপ্তাহে ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠক হয়েছে৷ সেখানে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, জার্মানি থেকে সেনা সরানোর ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের ঘোষণা বাস্তবায়নের সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷
ন্যাটো মহাসচিব জানান, জার্মানি থেকে সেনা সরানোর ঘোষণার আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে৷ সেইসময় তিনি ট্রাম্পকে জানান, ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ন্যাটোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘‘এটা ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলেন তিনি৷
স্টল্টেনব্যার্গ বলেন, ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা উত্তর অ্যামেরিকার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়৷ ‘‘আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, জার্মানি ও ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি শুধুমাত্র ইউরোপকে রক্ষা নয়, বরং ইউরোপ ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য জায়গায়ও যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি দেখানোর একটি বিষয়,’’ বলেন ন্যাটো মহাসচিব৷
স্টল্টেনব্যার্গ বলেন, জার্মানি তার প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়েছে৷ আগামী এক দশকে বাজেট ৮০ শতাংশ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে৷ এখনই ন্যাটোর সদস্যদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর জার্মানির প্রতিরক্ষা বাজেটই সবচেয়ে বেশি৷ ‘‘বিশ্বের জন্য জার্মানির আরও নেতৃত্ব প্রয়োজন৷ ন্যাটোরও জার্মানির নেতৃত্ব প্রয়োজন রয়েছে৷ আমরা সবাই চাই জার্মানির আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক,’’ বলেন ন্যাটো মহাসচিব৷
ক্রিস্টিন মুনডোয়া/জেডএইচ
২০১৭ সালের মে মাসের ছবিঘরটি দেখুন..
জার্মান সেনাবাহিনীর যত কেলেঙ্কারি
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে, ২০১৭ সাল ভয়ঙ্কর, বিভৎস, ভয়াবহ এবং খারাপ বছর৷ নিজের সেনাবাহিনীকে সমর্থন না করে বরং তাদের কেলেঙ্কারি তুলে ধরে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তিনি৷ জেনে নিন জার্মান সেনাবাহিনীর কেলেঙ্কারির কথা৷
ছবি: picture alliance/akg-images
এক ভুয়া শরণার্থী
সিরীয় শরণার্থী সেজে এক জার্মান সেনা কর্মকর্তা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ সমান্তরাল এক দ্বিতীয় জীবন শুরু করেছিলেন ফ্রাংকো৷ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরীয় শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত হন তিনি৷ তার লক্ষ্য ছিল শরণার্থীদের উপর হামলার দোষ চাপানো৷ ২০১৪ সাল থেকেই ফ্রাংকো’র ডানপন্থি আচরণের কথা জানতেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা৷ এাই ফ্রাংকো ধরা পড়ার থেকে জার্মান সেনাবাহিনিকে শুরু হয় বিতর্ক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
বাড রাইশেনহাল পর্বতে রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানি
ডানপন্থি সন্ত্রাসী আচরণের অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য সেনাবাহিনী বর্তমানে ২৭৫ টি মামলার তদন্ত করছে৷ চলতি বছরের মার্চে জনগণ একজন ল্যান্স করপোরালের কথা জানতে পারেন, যিনি কয়েক মাস ধরে বাভেরিয়া পর্বতের রেঞ্জার ইউনিটে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ নির্যাতিত ব্যক্তি জানিয়েছেন, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যৌন নীপিড়ন করা হয়েছে৷ এ ঘটনার জন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
নারীদের পোল ড্যান্সে বাধ্য করা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী সবচেয়ে বড় যে কেলেঙ্কারির কথা বলেছেন তাহলো, ফুলেনডর্ফে স্টাওফের সেনাঘাঁটির ভয়াবহ ঘটনা৷ জানুয়ারিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের নগ্ন করা ও যৌনতা প্রকাশ পায় এমন আচরণ করতে বাধ্য করেছিলেন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, সেগুলো ভিডিও করা হয়েছিল৷ সদ্য নিয়োগ পাওয়া নারীদের ‘এনট্র্যান্স পরীক্ষা’র অংশ হিসেবে পোল ড্যান্সে বাধ্য করা হয়েছিল৷ একারণে সেনাবাহিনীর শীর্ষ প্রশিক্ষক কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Warnack
ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদের অনেক ঘটনার তদন্ত চলছে
জার্মান সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি কমিশনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সাল জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য মোটেই ভালো বছর ছিল না৷ ডানপন্থি সন্ত্রাসবাদ বা ‘জার্মানির মুক্ত গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক চেতনার লঙ্ঘন’ এর মোট ৬০টি অভিযোগের ঘটনা পাওয়া গেছে৷ এমনকি সেনারা নিজেদের নাৎসি চেতনা নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করে, নাৎসি সংগীত শোনে ও নাৎসি স্যালুটও দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Sauer
জাহাজে মৃত্যু
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি সেনাবাহিনী৷ ২০১০ সালের একটি ঘটনা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তা হলো, গর্ক ফক-এ নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় ২৫ বছরের এক সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা৷ প্রশিক্ষণের সময় ঐ নারী জাহাজের পাল থেকে নীচে পড়ে মারা যান৷ ফলে অন্যান্য ক্যাডেটরা পালে উঠতে আর রাজি হননি৷ পরে ঐ প্রশিক্ষণ বাতিল করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rehder
জার্মান সেনাবাহিনীর জন্ম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি সেনাবাহিনী রাখার পক্ষে ছিল না৷ পশ্চিম জার্মানিতে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে৷ পুনরেকত্রীকরণের পর পূর্ব জামানির সেনাবাহিনী থেকে ২০ হাজার সদস্য নেয় কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনী৷ ১৯৯৯ সালে যখন জার্মান সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক সংঘাতে (কসোভো যুদ্ধ) জড়িয়ে পড়ে, তখন এতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়৷ এর আগ পর্যন্ত কেবল বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ছিল৷
ছবি: picture alliance/akg-images
বাধ্যতামূলক সেবা নয়
বর্তমানে জার্মান সেনাবাহিনীতে সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২০০৷ ২০১৭ সালের মার্চের হিসেব অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর মোট সদস্যের ১১.৪ শতাংশ নারী৷ ২০১১ সাল পর্যন্ত জার্মান সেনাবাহিনীতে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল৷ এই মেয়াদকাল ছিল ৯ থেকে ১৮ মাস৷ বর্তমানে তরুণদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ তবে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির কারণে এই আবেদনে তাদের সাড়া দেয়াটা সত্যিই কঠিন৷