ইউরোপে মুসলিম নারীদের বহুমুখী অবস্থান
৬ নভেম্বর ২০১০সম্প্রতি ব্রাসেলসে একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল এইরকম শীর্ষ স্থানীয় ইউরোপীয় মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ইউরোপে মুসলিম নারীদের সমস্যা নিয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে৷ সংগঠনটি মাথা ঢেকে চলা এবং নেকাব ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের ডাক দিয়েছেন৷
ডাচ টেলিভিশনের উপস্থাপিকা এসমা আলারিয়াচিয়া বলেন, একজন ইউরোপীয়, তিনি যদি মুসলমান এবং নারী হন, তাহলে তাকে সাহস নিয়ে চলাফেরা করতে হবে৷ ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের ব্যবস্থাপনায় মুসলিম অঙ্গীভূতকরণের ওপরে ব্রাসেলস সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন এসমা৷ তাঁর আরো দুইজন বোনের সঙ্গে এসমা নেদারল্যান্ডস টেলিভিশনের একজন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা৷ তাঁরা তিন বোন ‘সিস্টার্স অফ হিজাব' নামে পরিচিত৷ এসমা বলেন, মুসলিম নারীরা (তাঁর এবং তাঁর বোনদের মত) যে ডাচ নারীবাদী হয়ে উঠতে পারেন তা বুঝতে মানুষের সময় লাগবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বোনদের এবং আমার পক্ষ থেকে আমি বলবো, আমার লক্ষ্য এবং আমাদের লক্ষ্য মানুষকে এটা দেখানো যে, মুসলমানরা খুব সাধারণ মানুষ৷ আমরা খাই, ঘুমাই, সিনেমা দেখতে যাই, দুপুরের খাবার খাই, থিয়েটার দেখতে যাই৷ এইরকমভাবে বললে শুনতে খুব হাস্যকর লাগে ঠিকই, কিন্তু এই কথা সত্যি যে, অন্যরা যা করেন, আমরাও তাই করি, এইকথা বললে সকলেই খুব আশ্চর্য হয়ে যান৷''
এসমা বলেন, টক শো-তে হিজাব পরা প্রথম মহিলা উপস্থাপিকা হবার পরে টক শো-এর জন্যেও তা ছিল এক চ্যালেঞ্জ৷ ‘‘কারণ এর আগে মাথা ঢেকে চলা বা হেডস্কার্ফ পড়া আমার মত মেয়েরা শুধু রাজনৈতিক এবং ইসলামি ইস্যুগুলোতে বক্তৃতা দেবার জন্যে আমন্ত্রিত হতো৷ যেন আমাদের কপালে একটি ছাপ আছে, ‘আপনি শুধু এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, শুধুমাত্র সেই জন্যেই আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাই৷' আগে ব্যাপারটা এইরকম থাকলেও, আমাদের জন্যে এখন পরিস্থিতি বদলেছে৷'' এসমা বলেন, হল্যান্ডে মানুষ এখন তাঁকে এবং তাঁর বোনদেরকে সেলিব্রিটি হিসেবেই চেনে৷
তবে তারপরেও এসমার সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি৷ চরম ডানপন্থী ডাচ রাজনীতিবিদ খেয়ার্ট ভিলডার্স কোনভাবেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি৷ এসমা বলেছেন, তিনি এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন৷
যুক্তরাজ্যে ‘ফাতিমা উইমেনস নেটওয়ার্ক' পরিচালনা করছেন পারভিন আলি৷ তিনি বলেন, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী সমাজে কিছু মুসলিম নারীর জন্যে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তোলে৷ এমনকি এই ব্যাপারগুলো কর্মক্ষেত্রে উচ্চ-শিক্ষিত মহিলাদের মনোবল ভেঙে দেয়৷ তিনি বলেন, ইউরোপে পছন্দমত চলাফেরার স্বাধীনতা মুসলমান মেয়েদের আছে৷ কিন্তু এইক্ষেত্রে তাঁদের সম্প্রদায় থেকে সমর্থন পাওয়াটাই মূল চাবিকাঠি৷ পারভিন আলি বলেন, ‘‘সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই আপনাকে চলতে হবে৷ কেননা, যে সম্প্রদায় থেকে ঐ ব্যক্তি এসেছেন, অথবা যেখানে তাঁর ভিত্তি, তারা যদি আদতে ঐ সিদ্ধান্ত সমর্থন না করে, তাহলে ঐ পরিবারগুলোর জন্যেও তাদেরকে সমর্থন দেওয়া হয়ে যাবে ভীষণ ভীষণ কঠিন৷''
লিঙ্গ এবং বহুমুখিতা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সরকারি বিভাগের সঙ্গে কাজ করছেন পারভিন৷ একই সঙ্গে ইসলামি ইস্যুগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করছেন৷ ভুল নীতি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে ব্যর্থ হবার জন্যে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেন৷
পারভিন পরামর্শ দেন যে, একটা ভুল, মানুষকে কর্মক্ষেত্রে ধর্মচর্চার সুযোগ দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী চলার সুযোগ আছে মানুষের৷ তাই সেখানে তাদের ওজু করার মত ধর্মীয় ব্যবস্থাও থাকা উচিত৷ একই সঙ্গে নামাজের জন্যে জায়গা থাকা এবং শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়ার সময়ের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের সময়ের সামঞ্জস্য বিধান এবং তীর্থ যাত্রা বা হজের জন্যে অতিরিক্ত ছুটি যোগ করা৷'' পারভিন আলি বলেন, কাজের অনেক সুবিধাজনক শর্ত রয়েছে, যেখানে যা মুসলিম নারীদেরকে কাজে আসার জন্যে উৎসাহিত করতে পারে৷
সমন্বয় এবং নারী অধিকার নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে৷ কিন্তু এটি এমনভাবে ইউরোপীয় মুসলিম নারীদের কাছ থেকে আসছে, যে এটি যেন এক হুঁশিয়ারি৷ এখানে একক কোন পরিচিতি নেই, তারা বলছেন, একজন নারী, একজন মুসলিম এবং একজন ইউরোপীয়র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে বহুমুখিতার স্বীকৃতি প্রয়োজন৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন