ইটালির কাতানিয়া শহরের মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি পুনরায় অভিযোগ করেছেন যে, লিবিয়া থেকে অভিবাসীদের ইউরোপে আনতে এনজিওগুলো মানব পাচারকারীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
বিজ্ঞাপন
কাতানিয়া বন্দর নগরের চিফ প্রসিকিউটর কার্মেলো জুকারো রবিবার ‘লা স্তাম্পা' দৈনিককে বলেছেন, এনজিওগুলো যে অভিবাসীদের ইটালিতে আনার জন্য সরাসরি মানব পাচারকারীদের সঙ্গে কাজ করছে, তাঁর কাছে এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে৷
কী ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ, সে বিষয়ে জুকারো বিশদ কিছু বলেননি এবং কোনো দায়রা তদন্ত হবে কিনা, সে বিষয়েও তিনি নীরব থেকেছেন৷ তাঁর বক্তব্য হলো, ‘‘এই তথ্য বাস্তবিক বিচার বিভাগীয় প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হবে কিনা অথবা কিভাবে, তা আমরা জানি না৷ কিন্তু আমরা যা বলছি, সে ব্যপারে আমরা নিশ্চিত, লিবিয়া থেকে কিছু এনজিওর কাছে টেলিফোন কল এসেছে৷''
প্রসঙ্গত, গত মাসেও জুকারো অনুরূপ মন্তব্য করেছিলেন৷ মানবিক সাহায্য গোষ্ঠীগুলি ইতিপূর্বেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা না থাকলে আরো অনেক উদ্বাস্তু প্রাণ হারাত৷
শরণার্থীদের নিয়ে সংকটে ইউরোপ
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে দেখা দেয়া সংকট দিনে দিনে বড় হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্ত সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ ফ্রন্টেক্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এ বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইউরোপে৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
জার্মানির ওপর বহুমুখী চাপ
শরণার্থীদের নিয়ে জার্মানিতে উদ্বেগ বাড়ছে৷ বেশ কিছুদিন ধরেই আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলছেন, শরণার্থী সংকট ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংকট হতে চলেছে৷ আশঙ্কা সত্যি হওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ এ বছর আট লাখেরও বেশি শরণার্থী জার্মানিতে আসবে বলে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশঙ্কা৷ শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দানা বাঁধছে৷ তার ওপর নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে হাঙ্গেরি থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জার্মানির দিকে ঠেলে দেয়ার হিড়িক৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায় ট্রেনবোঝাই শরণার্থী
সোমবার শরণার্থীতে ভরা ট্রেন ঢুকেছে জার্মানির হামবুর্গ ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে৷ ট্রেনগুলো এসেছে হাঙ্গেরি থেকে৷ যাত্রীদের বেশিরভাগই সিরিয়ার নাগরিক৷ তবে তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা বা বৈধ কাগজপত্র নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kisbenedek
শরণার্থীদের চাপে বুদাপেস্ট রেল স্টেশন বন্ধ
হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ভিয়েনা এবং মিউনিখ যাওয়ার জন্য স্টেশনে হাজির হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ৷ ভিয়েনার পুলিশ জানায়, বুদাপেস্টের কেলেটি স্টেশনে ৩ হাজার ৬৫০ অভিবাসনপ্রত্যাশী প্লাটফর্মে অপেক্ষারত ভিয়েনা-মিউনিখগামী ট্রেনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ পরে সবাইকে স্টেশন থেকে বের করে দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
হাঙ্গেরিকে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস
এই মুহূর্তে হাঙ্গেরি খবরে এলেও, অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এতদিন মূলত গ্রিস এবং ইটালি হয়েই ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করতো৷ এ বছর অন্তত ৩ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী ঢুকেছে ইটালি ও গ্রিসে৷ এ কারণে দুটি দেশই ইইউর আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছে৷ ইইউর অভিবাসন বিষয়ক দূত জানিয়েছেন, হাঙ্গেরিকেও এ সহায়তা দেয়া হবে৷
ছবি: Reuters/B. Szabo
শরণার্থীদের বিক্ষোভ
গত সপ্তাহেই ৭১ জন শরণার্থীর গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল হাঙ্গেরি সীমান্তবর্তী ভিয়েনার এক রাস্তায়৷ মর্মন্তুদ সেই ঘটনার পর শরণার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়৷ সোমবার ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ভিয়েনায়৷ বিক্ষুব্ধ শরণার্থীদের দাবি, ইউরোপে প্রবেশের বৈধ রুট খুলে দিতে হবে, কেননা, ‘মানবতাই সবচেয়ে বড়’৷ ওপরের ছবিতে ভিয়েনা রেল স্টেশনে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
শরণার্থী নিতে রাজি তবে মধ্যপ্রাচ্য বা আফ্রিকায় আপত্তি পোল্যান্ডের
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো শরণার্থী নিতে রাজি নয় পোলিশ সরকার৷ সরকারের যুক্তি- ইউক্রেন সংকটের কারণে সেখান থেকে যাঁরা আসছে তাদের গ্রহণ করছে পোল্যান্ড, তাই আর শরণার্থী নেয়া সম্ভব নয়৷ পোল্যান্ড এতদিন সব মিলিয়ে মাত্র ২ হাজার ২০০ শরণার্থী নিতে রাজি ছিল৷ তবে ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী সংকট বেড়ে যাওয়ায় পোল্যান্ড আরো বেশি শরণার্থী গ্রহণ করার চিন্তা করছে৷ ছবিতে পোল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া এক চেচেন পরিবার৷
ছবি: WOJTEK RADWANSKI/AFP/Getty Images
সাইকেল চালিয়ে....!
সিরিয়া থেকে অনেকে নাকি সাইকেলেই পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ৷ রাশিয়ায় প্রবেশ করেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ ঢুকে পড়েছেন নরওয়েতে৷ নরওয়ের কিরকেনস শহরের পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, এ পর্যন্ত দেড়শ-র মতো সিরীয় সে দেশে ঢুকেছে৷ ইউরোপের দেশ হলেও নরওয়ে বা রাশিয়া ইইউ-র সদস্য নয়৷ তবে নরওয়ে সেঙেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই সেখান থেকে ইইউভুক্ত যে কোনো দেশে অনায়াসে ঢুকে পড়া যায়৷
ছবি: Reuters/J. Prakash
7 ছবি1 | 7
দায়িত্ব কার?
এনজিও এবং বেসরকারি মালিকানার জলযানের পাশাপাশি ইটালির উপকূলরক্ষী বাহিনীও ভূমধ্যসাগর থেকে নিমজ্জমান অভিবাসীদের উদ্ধার করার কাজে সংশ্লিষ্ট থেকেছে৷ অবশ্য জুকারো বলেছেন যে, যেসব এনজিও ইটালির উপকূলরক্ষীবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে, তাদের সকলেরই যে মানব পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজস আছে, এমন নয়৷
জুকারো বলেছেন, ‘‘সন্দেহভাজন এনজিওগুলির ক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে, তারা কী করছে৷ ভালো এনজিওগুলির ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যাবে, ভূমধ্যসাগরে কোথায় এবং কিভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব এনজিওদের উপর ছেড়ে দেওয়াটা ইউরোপীয় সরকারবর্গের পক্ষে ঠিক এবং স্বাভাবিক কিনা৷''
২০১৭ সালে অভিবাসীদের লিবিয়া থেকে ডিঙি বা বোটে চড়ে সাগর পার হয়ে ইটালি আসার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ যাবৎ প্রায় ৩৬,০০০ অভিবাসীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্বার করা হয়েছে, যা কিনা ২০১৬ সালের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি৷ শুধুমাত্র ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসেই অন্তত ১,০০০ অভিবাসী সাগরপাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংগঠন আইওএম৷ এভাবে চললে বছর শেষ হওয়ার আগে আড়াই লাখ অভিবাসী ইটালির উপকূলে পৌঁছতে পারে বলে জুকারোর ধারণা৷
প্রাণের মায়া না করে ইউরোপে আসার প্রচেষ্টা
লিবিয়ার উপকূলে আটশো’র বেশি উদ্বাস্তু নড়বড়ে জাহাজে ইউরোপে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন৷ এই ঘটনা ইউরোপের মানুষদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু ট্র্যাজেডির বোধহয় এখানেই শেষ নয়৷...
ছবি: REUTERS
প্রাণে বাঁচা
২০শে এপ্রিল, ২০১৫: একটি ছোট পালের নৌকা গ্রিসের রোডোস দ্বীপের কাছে চড়ায় আটকালে সীমান্তরক্ষী আর স্থানীয় মানুষেরা বেশ কিছু উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করেন৷ তা সত্ত্বেও এই দুর্ঘটনায় তিনজন উদ্বাস্তু জলে ডুবে মারা যান৷
ছবি: REUTERS/Argiris Mantikos/Eurokinissi
সীমান্তরক্ষীদের ডিঙিতে
১৩ই এপ্রিল, ২০১৫: উদ্বাস্তুরা কোস্ট গার্ডের ইনফ্ল্যাটেবল বোটে চড়ে সিসিলি-র একটি বন্দরে পৌঁছচ্ছে৷ সীমান্তরক্ষীরা লিবিয়ার উপকূলে একটি ডোবা নৌকা দেখতে পেয়ে ১৪৪ জন উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করেন – এবং যুগপৎ ন’টি মৃতদেহকে সাগরের জলে ভাসতে দেখেন৷ আবহাওয়া ভালো থাকায় এপ্রিলের শুরু থেকে উদ্বাস্তুরা আরো বেশি সংখ্যায় আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে আসার চেষ্টা করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Montanalampo
বাহন
১২ই এপ্রিল, ২০১৫: ওপিয়েলক অফশোর ক্যারিয়ার কোম্পানির ‘জাগুয়ার’ নামধারী মালবাহী জাহাজের অতি কাছে ডুবে যায় একটি উদ্বাস্তু বোট৷ এই কোম্পানির জাহাজগুলি গত ডিসেম্বর মাস যাবৎ দেড় হাজারের বেশি উদ্বাস্তুকে সমুদ্রবক্ষ থেকে উদ্ধার করেছে৷
ছবি: Opielok Offshore Carriers/dpa
হাঁটাপথে
২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫: পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আসা উদ্বাস্তুরা ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের দিকে হেঁটে চলেছেন৷ আশা, এইভাবে ‘খিড়কির দরজা’ দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ – যদিও সে প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Bennett
ব্রিটেন যাওয়ার শেষ পন্থা
১৭ই ডিসেম্বর, ২০১৪: ফ্রান্সের ক্যালে বন্দর-শহরের কাছের হাইওয়েতে ব্রিটেনগামী লরিতে ওঠার সুযোগের অপেক্ষায় উদ্বাস্তুরা৷ সে আমলে ক্যালে-র পাঁচ-পাঁচটি বেআইনি ক্যাম্পে প্লাস্টিকের ঝুপড়িতে বাস করছিল তিন থেকে পাঁচ হাজার উদ্বাস্তু, শুধুমাত্র ইংল্যান্ড যাবার আশায়৷
ছবি: Reuters/P. Wojazer
‘সেভ আওয়ার সোলস’
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪: ভূমধ্যসাগরে সাইপ্রাসের কাছে একটি শরণার্থী নৌকা বিপদ সঙ্কেত পাঠানোর পর সাগরে ভাসতে থাকে – ৩০০ উদ্বাস্তু নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যারা কোনো বাধা মানে না
১৭ই মে, ২০১৪: আফ্রিকান উদ্বাস্তুরা মরক্কোর উপকূলে স্পেনের এক্সক্লেভ মেলিলা-র চারপাশের উঁচু তারের বেড়া পার হওয়ার চেষ্টা করছে৷ প্রায় ৫০০ মানুষ সীমান্ত পার হবার চেষ্টা করে, তাদের মধ্যে জনা ত্রিশেক সফলও হয়, কিন্তু পরে তাদের আবার মরক্কোয় ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
পপুলিজমের পালে হাওয়া
ইটালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো কিছু এনজিওর অপরাধী করা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ এনজিওগুলো ‘‘জীবন বাঁচায় ও তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ'', বলেছেন পাওলো৷ কিন্তু ২০১৮ সালের গ্রীষ্মের আগেই ইটালিতে সাধারণ নির্বাচন৷ উদ্বাস্তুদের চাপে ইটালিতে এনজিওগুলোর প্রতি জনসহানুভূতি কমতির দিকে৷ ওদিকে বিভিন্ন পপুলিস্ট দল ও তাদের নেতারা এনজিওদের নিন্দায় মুখর৷
ফাইভ-স্টার মুভমেন্ট দল এনজিও-দের কাজকে অভিবাসীদের জন্য ‘‘ট্যাক্সি সার্ভিস'' বলে অভিহিত করেছে৷ সাম্প্রতিক জরিপে এই দল ক্ষমতাসীন মধ্যম-বামপন্থি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চেয়ে এগিয়ে৷ এছাড়া পপুলিস্ট পন্থি নর্দার্ন লিগ ও ফর্ৎসা ইতালিয়া দল দু'টিও এনজিগুলোর বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ তুলেছে৷