২০১৫ সালে শরণার্থীদের জন্য জার্মানির সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ শরণার্থীদের ঐ ঢেউ নিজের দলের জন্য একটি উপহার বলে তখন মন্তব্য করেছিলেন এএফডি নেতা আলেক্সান্ডার গাউলান্ড৷
বিজ্ঞাপন
এএফডি, অর্থাৎ ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’ দল জার্মানির একটি ডানপন্থি ও শরণার্থীবিরোধী দল৷ জার্মানিতে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমনকে কাজে লাগিয়ে গত বছরের নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পায় দলটি৷ এর মধ্যে প্রথম দুটো দল মিলে জোট সরকার গঠন করায় এএফডি এখন জার্মান সংসদের প্রধান বিরোধী দল৷
জার্মানি ছাড়াও ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও সুইডেনে ডানপন্থি দলগুলো এখন যার যার দেশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে৷ বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও গ্রিসে ডানপন্থি কয়েকটি দল সরকারের অংশ হয়ে আছে৷ আর পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র ও সবশেষ ইটালিতে ডানপন্থি দলগুলোই ক্ষমতায় আছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর খোলা মনের শরণার্থী নীতির কারণে নিজ জোটের মধ্যেই সংকটে পড়েছিলেন৷ এছাড়া সম্প্রতি ইটালি শরণার্থী বোঝাই একটি জাহাজ তাদের বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়৷ পরে স্পেন তাদের গ্রহণ করে৷
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি সমাধান খুঁজতে রবিবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসবেন জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, গ্রিস, অস্ট্রিয়া ও বুলগেরিয়ার নেতৃবৃন্দ৷ এরপর বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
কোন দেশে কেমন সুবিধা পান আশ্রয়প্রার্থীরা?
আশ্রয়প্রার্থীরা কেমন অর্থনৈতিক সাহায্য পান, তার পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একেক দেশে একেক রকম হয়৷ কোন দেশ কেমন সুবিধা দেয়, তা নিয়েই আমাদের এই ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
জার্মানি
আশ্রয়প্রার্থীদের সুবিধা সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী প্রতি মাসে ৩৫৪ ইউরো পেয়ে থাকেন আশ্রয়প্রার্থীরা৷ সোশ্যাল সিকিউরিটির অধীনে যারা নিয়মিত সহায়তা পেয়ে থাকেন, তাঁদের চেয়ে এই পরিমাণ প্রায় ৭০ ইউরো কম৷
ছবি: Getty Images/S. Gallup
ইটালি
ইটালিতে যারা আশ্রয়ের আবেদন করেন, তাঁদের আবেদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়৷ খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং কাপড়চোপড়ও তাঁরা পেয়ে থাকেন৷ আবেদন করার দুই মাস পর তাঁরা চাকরি নিতে পারেন৷ যেসব বেকার আশ্রয়প্রার্থী রিসেপশন সেন্টারে বাস করেন, তাঁদের প্রতি মাসে ৭৫ ইউরো দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Groder
সুইডেন
যেসব আশ্রয়প্রার্থীর সামর্থ্য আছে, তাঁদের সুইডেনে নিজেদের আবাসনের খরচ নিজেদেরই মেটাতে হয়৷ যাঁরা পারেন না, তাঁদের জন্য রাষ্ট্রের খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়৷ তাঁদের খাবার ও ৭০ ইউরো করে মাসিক ভাতা দেয়া হয়৷ সন্তান থাকলে, প্রতি সন্তানের জন্য আশ্রয়প্রার্থীরা পান আরো ৫৫ ইউরো করে৷
২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীরা মাসিক ২০৪ ইউরো ভাতা পেয়ে থাকেন৷ একই বাসায় একাধিক আশ্রয়প্রার্থী থাকলে মাথাপিছু ১০২ ইউরো করে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/M. Turner
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের বসবাসের স্থান বেছে নেয়ার অধিকার নেই৷ রাষ্ট্র তাঁদের আবাসনের ব্যবস্থা করে এবং খাবার, কাপড়চোপড় এবং অন্যান্য খরচের জন্য মাসে ১৭০ ইউরো করে ভাতা দেয়৷ আশ্রয়প্রার্থীদের কাজের অনুমতি দেয়া হয় না৷
ছবি: Brian Leli
স্পেন
আশ্রয়ের আবেদনের প্রথম ৬ মাস রাষ্ট্রীয় আবাসনে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে থাকতে হয় আশ্রয়প্রার্থীদের৷ এখানে তাঁদের খাবার দেয়া হয়৷ পাশাপাশি প্রায় ৫০ ইউরো দেয়া হয় ভাতা হিসেবে৷ প্রত্যেক সন্তানের জন্য দেয়া হয় অতিরিক্ত ১৯ ইউরো৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
অস্ট্রিয়া
রাষ্ট্রীয় আবাসনে আশ্রয়প্রার্থীরা খাবার পান, ভাতা পান ৪০ ইউরো করে৷ তবে রাষ্ট্রীয় আবাসনের বাইরে থাকতে বাধ্য হলে ১৫০ থেকে ২০০ ইউরো ভাতা দেয়া হয় তাঁদের৷
ছবি: Getty Images/J. Koch
গ্রিস
গ্রিসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর আশ্রয়প্রার্থীদের দেখভাল করে৷ তাঁরা যাতে স্বাস্থ্যসেবাসহ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু পায় তাও নিশ্চিত করে সংস্থাটি৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে বসবাসকারীদের মাসিক ৯০ ইউরো করে ভাতা দেয়া হয়৷
ছবি: DW/Diego Cupolo
8 ছবি1 | 8
‘ব্যবসার মডেল’
ব্রাসেলসের কার্নেগি ফাউন্ডেশনের ইউরোপ বিশেষজ্ঞ স্টেফান লেনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, এটা পরিষ্কার যে, শরণার্থী সংকট পপুলিস্ট দলগুলোর ব্যবসায়িক মডেলের একটি অংশ৷ ‘‘তারা (ডানপন্থি দল) এমন এক বিষয় পেয়েছে, যা আবেগকে উসকে দেয়৷ এবং তারা এই বিষয়কে শেষ হতে দেবে না৷’’
২০১৫ সালের পর শরণার্থী নীতিতে পরিবর্তন এসেছে এবং বিভিন্ন দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে৷ যেমন, জার্মানি ও বেলজিয়াম তাদের সীমান্তের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ আর অনেকদিন ধরেই ফ্রান্স ও ইটালি, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম এবং জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যকার সীমানা থেকে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে৷
এসব কারণে ২০১৫ সালের পর ইউরোপে শরণার্থী আসার সংখ্যা ৭৫ শতাংশ কমেছে৷ কিন্তু তারপরও পপুলিস্ট দলগুলো এখনও তার সুবিধা পাচ্ছে কেন? ইউরোপ বিশেষজ্ঞ লেনে মনে করেন, শরণার্থী আসার সংখ্যা অনেক কমে গেলেও মানুষের মনে এখনও এই ধারণা আছে যে, অভিবাসন সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে আছে৷ ‘‘আমার মনে হয় অস্ট্রিয়া কিংবা জার্মানির অধিকাংশ মানুষই শরণার্থী কিংবা অভিবাসীদের উপস্থিতির কারণে সরাসরি সমস্যায় পড়েনি, কিন্তু গণমাধ্যমে বিষয়টি বারবার আসায় সমাজে শরণার্থীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে৷’’
ব্যার্ন্ড রিগার্ট/জেডএইচ
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷