ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগি বলেছেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন৷ ওদিকে সাম্প্রতিক তথ্য-পরিসংখ্যান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ইউরোপের পুঁজিবাজার৷
ছবি: Reuters
বিজ্ঞাপন
ইসিবি প্রধান মারিও দ্রাগি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সামনে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এক রূপরেখা তুলে ধরেছেন৷ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসিবি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বলেন দ্রাগি৷ ইসিবি-র নতুন ‘স্টিমুলাস' কর্মসূচির পক্ষে সওয়াল করে তিনি বলেন, ইউরো এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির প্রয়াস তার গতি হারাচ্ছে৷ একদিকে ইউক্রেন ও ইরাকের মতো সংকটের ফলে ক্ষতি হচ্ছে৷ অন্যদিকে ইউরো এলাকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারছে না৷ এই ঐক্যের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছেন দ্রাগি৷
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগিছবি: Reuters
তথ্য ও পরিসংখ্যানের বিচারে ইউরো এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটছে৷ এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে ইউরোপের পুঁজিবাজারের উপরেও৷ শুক্রবার থেকে পর পর তিন দিন ধরে শেয়ারের দরপতন ঘটেছে৷ সেপ্টেম্বর মাসে ইউরোজোন ব্যবসায়িক কার্যকলাপ গত ন'মাসে সবচেয়ে কম মাত্রা ছুঁয়েছে৷ এই পিএমআই সূচক অর্থনৈতিক দুর্বলতার পরিচয় দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ ফলে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ অন্যদিকে কনজিউমার কনফিডেন্সও গত চার মাস ধরে কমে চলেছে৷ একদিকে বেকারত্বের উচ্চ হার, অন্যদিকে সরকারি স্তরে ব্যয় সংকোচের ফলে মানুষ কেনাকাটা কমিয়ে দিচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখবর নয়৷
জার্মান নির্বাচন বদলে দিল অনেক হিসাব
জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী শিবির বিপুল জয় অর্জন করেছে৷ তবে বদলে গেছে অনেক হিসাবনিকাশ৷ চলুন দেখা যাক নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা৷
ছবি: Reuters
বিজয়ী হাসি
২০১৩ সালের জার্মান নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং তাঁর দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী শিবির৷ তবে ভবিষ্যতে তাদের আগাতে হবে মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপির সঙ্গ ছাড়াই৷ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল বলছে, অন্তত একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে হলেও জোট বাঁধতে হবে ম্যার্কেলকে৷
ছবি: Reuters
একদিকে জয় অন্যদিকে বেদনা
২২শে সেপ্টেম্বর ভোটাভুটির পর জরিপের ভিত্তিতে প্রকাশিত আনুমানিক ফলাফলই বলে দিচ্ছিল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের সমর্থনে ভোট পড়েছে প্রচুর৷ স্বভাবতই এই ফলাফলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে দলের সমর্থকরা৷ কিন্তু অন্যদিকে এফডিপি ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ভেঙে গেছে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের জোট৷
ছবি: Reuters
উদারপন্থিদের বড় ব্যর্থতা
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, এফডিপি পাঁচ শতাংশ ভোটও পায়নি৷ ফলে ১৯৪৯ সালের পর এই প্রথম বারের মতো জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ থেকে বাদ পড়লো সে দল৷ একই সঙ্গে তাদের নিয়ে সিডিইউ/সিএসইউ-র গড়া জোটও ভেঙে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বপ্ন ভঙ্গ
সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী পেয়ার স্টাইনব্রুক সবুজ দলের সঙ্গে জোট গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ কিন্তু নির্বাচনে এসপিডি আগের বারের চেয়ে খানিকটা ভালো করলেও সবুজ দল খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি৷ ফলে জোট গড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি তারা৷ আর বাম দলকে সঙ্গে নিয়ে এসপিডি-সবুজ-বাম জোট গড়ার ইচ্ছা নেই স্টাইনব্রুকের৷
ছবি: Reuters
আপেক্ষিক বিজয়
সর্বশেষ নির্বাচনে আগের বারের চেয়ে আরো খারাপ করেছে বাম দল৷ তা সত্ত্বেও সামান্য ব্যবধানে সবুজ দলের ঠিক পরেই তাদের স্থান হয়েছে৷ প্রাথমিক ফলাফলে কিছুক্ষণের জন্য তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল দলটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুটা মন্দ নয়
ইউরো বিরোধী দল ‘আল্টারনেটিভে ফ্যুর ডয়চলান্ড’ বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দল প্রথম বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রায় পাঁচ শতাংশ জনসমর্থন জুটিয়ে ফেলেছে৷ পুরো পাঁচ শতাংশ সমর্থন অর্জন হলে জার্মান সংসদে যেতে পারতো সে দল৷ এই অর্জনকে মোটেই খাটো করে দেখছেন না সে দলের চেয়ারম্যান ব্যার্ন্ট ল্যুকে৷ বরং নতুন একটি দলের জন্য এই অর্জন অনেক৷
ছবি: Reuters
অনেক সুযোগ
জার্মানিতে ভোটারের সংখ্যা ৬১.৮ মিলিয়নের মতো৷ সর্বশেষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৭৩ শতাংশ ভোটার৷ মোট ৩৪টি দলের ৪,৫০০ প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন৷ প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, সিডিইউ, সিএসইউ, এসপিডি, সবুজ এবং বাম দল জার্মান সংসদে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
সংকটগ্রস্ত দেশগুলি মোটামুটি মাথা তুলে দাঁড়ালেও ফ্রান্স ও ইটালির মতো দেশকে নিয়েই বর্তমানে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷ অতীতের দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে সংস্কারের মাধ্যমে ফ্রান্সের অর্থনীতিকে মজবুত করতে চান নতুন প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স৷ এ কাজে তিনি জার্মানির সহায়তা চাইছেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর উদ্যোগের প্রতি আস্থা ও সমর্থন দেখিয়েছেন৷ তবে বাজেট সংক্রান্ত কড়া নিয়ম শিথিল করার প্রশ্নে ম্যার্কেল অনড়৷ তিনি চান, সব দেশই সংস্কার ও ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতির ভীত মজবুত করুক৷ শুধু স্টিমুলাসের মাধ্যমে সাময়িক সাফল্য তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ তবে নিয়ম-নীতির কাঠামোর মধ্যে থেকেও অর্থনৈতিক স্টিমুলাসের পক্ষে সওয়াল করছে অনেক মহল৷