জার্মানির ইউরো-বিরোধীরা
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দল যে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দলের পক্ষে একটা মাথাব্যথা হয়ে উঠবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল! কিন্তু পরিস্থিতি বস্তুত তাই, বিশেষ করে সিডিইউ দলের প্রথাগত জোট সহযোগী মুক্ত গণতন্ত্রীদের হাঁড়ির হাল হওয়ার ফলে৷ যে এফডিপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-ডিট্রিশ গেনশার ২৫ বছর আগে জার্মান ঐক্যের চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যুদ্ধোত্তর জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্তটিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, সেই এফডিপি দলের আজ সংসদে তে দূরের কথা, কোনো রাজ্য বিধানসভাতেও একটি আসন নেই৷ কল্পনা করা যায়?
কিন্তু সেটাই সত্য, এবং এমন একটি সত্য, যা বারংবার ম্যার্কেলের সিডিইউ দলকে তাদের চির-প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে – তা যেমন ফেডারাল পর্যায়ে, তেমনই রাজ্য পর্যায়ে৷ অথচ সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য এফডিপি-র সাবেক ভূমিকাটা এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' সহজেই পালন করতে পারত৷ কিন্তু ‘আপাতত' সেটা কল্পনীয় নয়, যার কারণ দ্বিবিধ৷ প্রথমত, এএফডি-তে যেমন রক্ষণশীল ইউনিয়ন দলগুলির প্রাক্তন সদস্যরা যোগ দিয়েছেন, তেমন তার চেয়েও ডান-ঘেঁষা মনোবৃত্তির কিছু নেতা-কর্মীকে এএফডি-র পংক্তিতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ আছে৷ তা যদি না-ও হয়, সেক্ষেত্রেও ম্যার্কেল তাঁর সিডিইউ দলের চেয়েও বেশি ডানে কোনো নতুন রাজনৈতিক শক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছে, তা দেখে সুখি হবেন না বলেই ধরে নেওয়া যায়৷ এক কথায়, ‘জার্মানির জন্য বিকল্প'-কে জোট সহযোগী করে তাদের প্রতিষ্ঠা বাড়ানোর অভিপ্রায় ম্যার্কেলের আপাতত নেই৷
‘‘এএফডি সব দলের পক্ষেই একটি সমস্যা,'' এ সপ্তাহেই রেডিও বার্লিন-ব্রান্ডেনবুর্গ নামধারী সরকারি বেতার-টেলিভিশন সংস্থাকে বলেছেন ম্যার্কেল৷ এএফডি-র জনপ্রিয়তার অর্থ, ‘‘জনতা যে সব সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন, আমাদের সে-বিষয়ে কিছু করতে হবে৷ (জনতা) অপরাধবৃত্তি ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত৷ আমাদের এই সব প্রশ্নগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং সমস্যার সমাধান করতে হবে৷ তাহলে আজ যে সব ভোটার অসন্তুষ্ট, তাদের ফেরৎ পাবার ভালো সুযোগ থাকবে৷''
এটাকে ম্যার্কেলের পেশাদারি আশাবাদিতা বললে খুব ভুল করা হবে না, কেননা তাঁর সিডিইউ দল তাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ক্রমেই ডান থেকে মধ্যের দিকে সরে দাঁড়িয়েছে – বলতে কি, বেশ কিছু সাবেক সামাজিক গণতন্ত্রী অবস্থানকে আত্মসাৎ করে নিয়েছে৷ ফলে রাজনীতির বর্ণালীর অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীদের ডান পাশে একটি জায়গা খালি হয়ে গেছে এবং এএফডি ঠিক সেই ফাঁকটিতে ঢুকে পড়েছে৷ এখানে তাদের সুবিধা হলো: চরম দক্ষিণপন্থি এনপিডি দলের কিছু ভোটও স্যাক্সিনি-তে এএফডি-র ভাঁড়ারে এসে পড়েছে – আগামী রবিবার ব্রান্ডেনবুর্গ ও থুরিঙ্গিয়ার নির্বাচনেও যা ঘটতে পারে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ)