1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরো ব্যর্থ হলে ইউরোপও ব্যর্থ হবে: ম্যার্কেল

১২ সেপ্টেম্বর ২০১১

ইউরো এলাকার বর্তমান সংকটের সমাধানের চাবিকাঠি জার্মানির হাতে, এমন একটা ধারণা যখন চালু আছে, তখন জার্মানির মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপের জন্য কতটা সাহায্য দেওয়া উচিত? জার্মান নেতৃত্বও সঠিক উত্তর খুঁজছে৷

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলছবি: dapd

সংকটের প্রেক্ষাপট

সংকটে পড়ছে ইউরো মুদ্রার ভবিষ্যৎ৷ শোনা যাচ্ছে নানা রকমের বিকল্প প্রস্তাব৷ একদল বলছে, ইউরো তুলে দিয়ে সবাই আবার যে যার জাতীয় মুদ্রা চালু করুক, নিজেদের সমস্যা একাই সামলাক৷ আরেকদল বলছে, ইউরো শুধু শক্তিশালী দেশগুলিতেই থাকুক, দুর্বলরা ইউরো এলাকা ছেড়ে চলে যাক৷ অথবা দুর্বলদের হাতে ইউরো ছেড়ে দিয়ে শক্তিশালীরাই এই কাঠামো ছেড়ে বেরিয়ে আসুক৷ ইউরোর সমর্থকরা অবশ্য এই ধরণের আপাত সহজ সমাধানসূত্রের প্রস্তাবে কান দিতে প্রস্তুত নয়৷ তারা শুধু বর্তমান সংকট কাটানোর পথের সন্ধান করছে৷ কিন্তু ইউরো এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ জার্মানিতে চলছে অন্য এক বিতর্ক৷ পরিবারে সংকট দেখা দিলেই বড় ভাইয়ের মতো জার্মানিকেই এতকাল ছোট ভাইদের টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করতে হয়েছে৷ অনেকে বলছে, এমনটা আর চলতে পারে না৷ গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগালের পর আবার নতুন করে জরুরি তহবিলের জন্য জার্মান করদাতাদেরই টাকার সিংহভাগ দিতে হবে, এটা আর গ্রহণযোগ্য নয়৷ এমনকি সরকারি জোটের মধ্যেও অনেক নেতা খোলামেলাভাবেই এমন কথা বলছেন৷

জার্মানির কাছে ইউরোপের গুরুত্ব

ইউরো ব্যর্থ হলে ইউরোপও ব্যর্থ হবেছবি: dapd

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এমন চরম সংকটের সময়েও ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন৷ বুধবার জার্মান সংসদে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউরো ব্যর্থ হলে ইউরোপও ব্যর্থ হবে৷ এই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে দিলে চলবে না – প্রয়োজন এক স্থিতিশীল ইউনিয়ন৷ এর জন্য প্রয়োজন ইইউ চুক্তির আরও পরিবর্তন৷ তাছাড়া যেসব দেশ নিয়ম ভেঙে বাজেট ঘাটতি করবে, প্রয়োজনে তাদের ইউরোপীয় আদালতে নিয়ে যাবারও বিধান থাকতে হবে বলে ম্যার্কেল মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেকারণেই আমি বলবো, আমরা যদি ইউরোপ সম্পর্কে আরও ভাবনা-চিন্তা করি; বলি যে ইউরোপীয় স্তরে আমাদের আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন, ইউরোপকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত এক ইউরোপের প্রয়োজন – সেক্ষেত্রে চুক্তির পরিবর্তন নিয়েও কথা বলতে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়৷''

অত্যন্ত কড়া ভাষায় ম্যার্কেল সাফ জানিয়ে দিলেন, যে ১৭টি দেশে ইউরো চালু আছে, তাদের সরকারগুলিকে ঋণ সংকটের সমাধান করতেই হবে৷ জার্মানির ভবিষ্যৎ ইউরোপের ভবিষ্যতের সঙ্গে একই সূত্রে বাঁধা রয়েছে৷ ফলে জার্মানি ও ইউরোপকে আরও শক্তিশালী অবস্থায় সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে জার্মানির বিশেষ দায়িত্বের কথাও তিনি উল্লেখ করতে ভোলেন নি৷ ম্যার্কেল'এর ভাষায়, ‘‘আমার সরকারের বর্তমান কার্যকালের মূল দায়িত্ব একটাই৷ জার্মানি সংকটের মধ্যে পড়ার আগে যে অবস্থায় ছিল, তার তুলনায় আরও অনেক শক্তিশালী হয়ে সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছে৷ এখন ইউরোপকেও আরও শক্তিশালী অবস্থায় সংকট থেকে বের করে আনতে হবে৷''

ম্যার্কেল এপ্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেন যে ইউরো শুধু একটা মুদ্রা নয়, ইউরোপীয় ঐক্যের গ্যারেন্টি৷ গণতান্ত্রিক ইউরোপ জার্মানির জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই ইউরোর পতন ঘটতে দেওয়া চলে না, বলেন ম্যার্কেল৷

বিকল্প পথের সন্ধানে

বর্তমান সংকটের ফলে জার্মানিতে অনেকেই ইউরো ছেড়ে আবার ডয়চে মার্কের যুগে ফিরে যেতে চাইছে৷ তাদের যুক্তি, জাতীয় মুদ্রা ফিরে পেলে বাকিদের সমস্যা নিয়ে অত ভাবতে হবে না৷ ম্যার্কেল এই যুক্তি খণ্ডন করে সুইজারল্যান্ডের উদাহরণ তুলে ধরেন৷ বিচ্ছিন্ন দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল, যে তার মুদ্রা সুইস ফ্রাঁ'র বিনিময় মূল্যও হু হু করে বেড়ে যাচ্ছিল৷ ক্ষতি হচ্ছিল সেদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের৷ এখন সেদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফ্রাঁ ও ইউরো'র বিনিময় মূল্য সীমিতভাবে বেঁধে দিতে বাধ্য হয়েছে৷ আজকের যুগে গোটা বিশ্ব তথা ইউরোপের অর্থনীতি পরস্পরের সঙ্গে এতটাই সম্পৃক্ত, যে ‘একলা চলো রে' নীতির ফল আখেরে ভালো হতে পারে না, এমনটাই মনে করেন ম্যার্কেল৷ ইউরো এলাকার জরুরি তহবিলে জার্মানির অবদানের বিরুদ্ধে যারা জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিল, তাদের সতর্ক করে দেন ম্যার্কেল৷ উল্লেখ্য, বুধবার সংসদে ম্যার্কেল'এর ভাষণের ঠিক আগে আদালত এই অভিযোগ নীতিগতভাবে খণ্ডন করে দিলেও এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সংসদকে আরও সম্পৃক্ত করারও নির্দেশ দেয়৷ এই রায়ে সন্তুষ্ট ম্যার্কেল সরকারি জোটের সাংসদদের প্রতিও বিরোধিতা তুলে নেওয়ার ডাক দেন৷ কিন্তু ম্যার্কেল সরকার যখন আগামী দিনগুলিতে ইউরো'র সুরক্ষার জন্য সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেবে, তখন তারা কতটা সমর্থন জানাবে সেবিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ