ইউরো কাপ
১৯ মে ২০১২৩৫ বছর বয়সী জর্জোস কারাগুনিস'কে দিয়েই শুরু করা যাক৷ পানাথিনাইকোস এথেন্সের মিডফিল্ডার৷ গ্রিসের হয়ে ১১৫ বার খেলেছেন এবং আজও খেলছেন, যদিও কোচ ফের্নান্দো সান্টোস তাঁকে রয়ে-সয়ে কাজে লাগান৷
জার্মান কোচ অটো রেহাগেল, যাকে গ্রিকরা নাম দিয়েছিল ‘রেহাক্লিস', তিনি বিদায় নেবার পরও, এবং ইউরো ২০০৪'এ গ্রিসের আশ্চর্য জয়ের আট বছর পরেও কারাগুনিস এখনও স্বপ্ন দেখছেন৷ শুধু স্পেন, জার্মানি, ইটালি বা নেদারল্যান্ডস কেন, ‘‘আমাদেরও উচ্চাকাঙ্খা আছে,'' এএফপি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন কারাগুনিস৷ তিনি বিশেষ করে বলেছেন গ্রিক দলের টিম স্পিরিটের কথা৷ বলেছেন, দেশের হয়ে খেলার মধ্যে যে ‘প্যাশন' আছে, নেশা, উত্তেজনা, প্রেরণা আছে, তার কথা৷
গ্রুপ পর্যায়ে গ্রিস এবার মাঠে নামছে পোল্যান্ড, রাশিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে৷ এবং এই গ্রুপের চূড়ান্ত ফালাফল যে কি হবে, তা পণ্ডিতদের পক্ষেও বলা অসম্ভব৷ কাজেই কারাগুনিস যদি কোনো পুরাতন গ্রিক গাথার মতো ইউরো ২০০৪'এর ফাইনালের কথা স্মরণ করে প্রেরণা পেতে চান, তাহলে দোষের কিছু নেই: ‘‘আমরা বহু বাধার সঙ্গে লড়েছি, শেষ অবধি ন'জন প্লেয়ার নিয়ে খেলে একটি অসাধারণ জয় পেয়েছি, যা কিনা আমাদের জাতীয় দলের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ জয়৷''
রুশিদের ‘শাভা'
আন্দ্রেই আর্শাভিন'এর বয়স আজ ত্রিশ৷ রুশ দলের ক্যাপ্টেন৷ পেশাগতভাবে খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব আর্সেনালের হয়ে৷ ইউরো ২০০৮'এ আগুন ছুটিয়েছিলেন এই আর্শাভিন, রুশিদের প্রিয় ‘শাভা'৷ গত ফেব্রুয়ারি মাসে আর্সেনাল তাকে ধার দেয় জেনিট সেন্ট পিটার্সবার্গ'কে, যে জেনিট থেকেই আর্শাভিন গানার'দের কাছে এসেছিলেন৷ জেনিট'এ থাকবেন জুলাই অবধি৷ তাতে আর্শাভিন'এর আপত্তি থাকার কথা নয়৷ পেশাদারি জীবনে খেলেছেন মাত্র এই দু'টি ক্লাবের হয়ে৷ সেন্ট পিটার্সবার্গে তাঁর জন্ম, দেশ, মানে রাশিয়াকে ভালোবাসেন মনপ্রাণ দিয়ে৷
২০০৯ সালে আর্শাভিন যখন আর্সেনালে যান, তখন তাঁর কাছ থেকে এক ধরণের প্রত্যাশা ছিল৷ কিন্তু লন্ডনে আর্শাভিন কোনোদিনই স্বচ্ছন্দ বোধ করেননি৷ এছাড়া বাদ সাধে ইনজুরি৷ বলতে কি, আর্শাভিন এ বছর জেনিটে ফিরেছেন শুধুমাত্র একটিমাত্র লক্ষ্য নিয়ে: তিনি আবার রুশ দলে থাকতে চান, খেলতে চান৷
দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার ওলন্দাজ কোচ ডিক আডভোকাট'এর উপস্থিতি আর্শাভিনের খেলোয়াড়ি জীবন জুড়ে, কেননা আডভোকাট ২০০৬ সাল যাবৎ জেনিট'এরও কোচ৷ এই তো, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি'তে আর্শাভিন বহুদিন পরে তাঁর প্রথম ‘আন্তর্জাতিক' গোলটি করার পর সাইডলাইনে কোচ আডভোকাট'এর দিকে ছুটে যান - এবং আডভোকাট সস্নেহে আর্শাভিন'এর মস্তকচুম্বন করেন৷ ফুটবলের একটি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত৷
চেকদের ‘খুদে মোৎসার্ট'
ইনজুরির সমস্যা তো শুধু একা আর্শাভিন'এর নয়, চেক প্রজাতন্ত্র দলের ক্যাপ্টেন টোমাস রসিচকি সম্পর্কেও এককালে অনেকের উচ্চাশা ছিল৷ রসিচকি'ও আজ খেলেন গানার'দের হয়ে৷ ৩১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার৷ মাসের পর মাস ইনজুরির জন্য বেঞ্চে বসে কাটানোর পর সম্প্রতি রসিচকি'কে যেন তার পুরনো ফর্মে ফিরতে দেখা গেছে৷ ফ্যানরা তাঁকে মার্চ আর এপ্রিলে ‘আর্সেনালের সবচেয়ে সৃজনীশীল খেলোয়াড়' হিসেবে নির্বাচন করেছে৷
অন্যরা ভাবছেন ইউরো ২০০৪ সালের চেক দলের কথা: মাঝমাঠে পাভেল নেডভেড, কারেল পোবোর্স্কি, ভ্লাদিমির স্মিশার ও রসিচকি স্বয়ং৷ ডিফেন্স-সর্বস্ব গ্রিকরা এই দলকে সেমিফাইনালে আটকায়৷ রসিচকি সে সময় জার্মানির ডর্টমুন্ড দলের ধ্বজা উড়োচ্ছেন৷ স্বদেশের মানুষ তাঁকে ‘খুদে মোৎসার্ট' নাম দিয়েছে৷ ইনজুরির ছায়া পড়েনি তখনও এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়টির জীবনে৷
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে একটি তলপেটের ইনজুরির ফলে রসিচকি ইউরো ২০০৮ থেকেই বাদ পড়েন৷ ১৮ মাস ধরে চলে সেই পর্ব৷ তবে ইউরো ২০১২'র কোয়ালিফাইং অভিযানে রসিচকি চেকদের নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন এবং চেক দল এই নিয়ে পর পর পঞ্চমবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য কোয়ালিফাই করতে পেরেছে৷
‘‘এবারেও আমরা সকলের পক্ষে অস্বস্তিকর প্রতিদ্বন্দ্বী হব,'' ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন টোমাস রসিচকি৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী (এএফপি)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ