প্যারিসের রাস্তায় জঞ্জাল জমছে৷ ট্রেন ঠিকমতো চলবে কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই৷ সরকার পদক্ষেপ নেবার হুমকি দিচ্ছেন৷ স্টাড দ্য ফ্রঁস-এ শুক্রবার রাত্রে ফ্রান্স-রোমানিয়ার উদ্বোধনী ম্যাচে পাহারায় থাকবে নব্বই হাজার পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার সকালেও প্যারিসের মেয়র আন হিদালগোকে বলতে শোনা গেছে, ‘‘সমস্ত জঞ্জাল সরিয়ে ফেলা হবে....কাজ শুরু হয়ে গেছে৷'' দেশের পরিবহণ মন্ত্রী অ্যালঁ ভিদালি ঘোষণা করেছেন যে, শুক্রবারের ম্যাচে যাতে ফ্যানরা স্টেডিয়াম অবধি পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য সর্বরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ শনিবার যাতে ট্রেন চলে, সেজন্য দরকার হলে আদেশ জারি করা হবে৷
তবে আসল ভয় ছিল – এবং আছে – সন্ত্রাসের৷ তার একটি পরীক্ষা হয়ে গেল বৃহস্পতিবার রাত্রে৷ আইফেল টাওয়ারের নীচে ৯২ হাজার মানুষের পাবলিক ভিউয়িং-এর জন্য যে ভেন্যু সৃষ্টি করা হয়েছে, সেখানে ফরাসি ডিজে দাভিদ গেত্তার একটি ফ্রি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল৷ এসেছিলেন ৮০ হাজার সংগীতমোদী৷ তাদের সকলকেই দু'টি চেকপয়েন্ট দিয়ে পাশ করতে হয়েছে৷ শুক্রবারের উদ্বোধনী ম্যাচে নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে ৯০ হাজার পুলিশ ও বেসরকারি সিকিউরিটি৷ এই বেসরকারি সিকিউরিটি টিমগুলির সদস্যদের সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজখবর নিয়ে তাদের ৩০০ জনকে খারিজ করা হয়েছে – এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী বের্নার কাজন্যোভ গত বুধবার৷
প্যারিসে ইতিমধ্যেই লাখ খানেক ফ্যান এসে পৌঁছেছেন৷ সব মিলিয়ে বিশ লাখ বিদেশি ফুটবল ফ্যান ইউরো ২০১৬ চলাকালীন ফ্রান্সে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই দক্ষিণের মার্সাই শহরে ইংল্যান্ড ফ্যানদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের গোলযোগ বাঁধে, পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয়৷ দু'জন ব্রিটিশ ফ্যান ও চারজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন, বলে প্রকাশ৷ মার্সাইতে শনিবার ইংল্যান্ডের প্রথম খেলা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
ফরাসি দল থেকে এবার করিম বেনজেমা বাদ পড়ার ফলে অলিভিয়ের জিরু এবার ফরাসি দলের স্টার হবার সুযোগ পাবেন৷ তার সাথে থাকবেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এর অ্যান্টনি মার্শাল, বায়ার্ন মিউনিখের কিংসলে কোম্যান আর ওয়েস্টহ্যামের দিমিত্রি পাইয়ের মতো তরুণ উইংগার৷
স্টারপাওয়ার: ইউরো ২০১৬-র তারকাবৃন্দ
একটি বড় টুর্নামেন্টে প্রতিবারই কিছু নতুন তারকার উদয় হয়, তেমনই আবার পুরনো তারকারাও দীপ্তি ছড়ায়৷ ইউরো ২০১৬-তে এবার চোখে পড়ার মতো খেলোয়াড়ের কোনো অভাব নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
ডেভিড আলাবা, অস্ট্রিয়া
বায়ার্ন মিউনিখে ‘শুধু’ ডিফেন্ডার হলেও তিনি অস্ট্রিয়ার মিডফিল্ডের প্রাণ৷ কোয়ালিফাইংয়ে আলাবার তিনটি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্টের কল্যাণে অস্ট্রিয়া এই প্রথম সরাসরি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল৷
ছবি: Reuters
গ্যারেথ বেল, ওয়েলস
২৬ বছর বয়সেই গ্যারেথ বেলকে ওয়েলসের চিরকালের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে ফেলা চলে৷ ১৯৫৮ সালের পর ওয়েলস এই প্রথম একটি বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে৷ রেয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড বেল সেই অভিযানের একটা বড় অংশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Guez
হাকান শালহানলু, তুরস্ক
বায়ার্ন লেভারকুজেনের এই ফ্রি কিক এক্সপার্টটির উপযোগিতা তুরস্কের দলে তার চেয়ে অনেক বেশি৷ ২২ বছর বয়সের শালহানলু তুরস্কের অ্যাটাকে আর্দা তুরানের সঙ্গে মিলে হবে একটি শক্তিশালী জুটি৷ কাজেই নকআউট স্টেজে তুরস্ক এবার চমকে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/empics/O. Humphreys
ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, পর্তুগাল
ক্লাব পর্যায়ে যা কিছু খেতাব জেতা সম্ভব, তার সব ক’টি জয় করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো৷ কিন্তু স্বদেশের হয়ে কোনো ট্রফি জিততে পারেননি৷ বলতে কি, রোনাল্ডো ছাড়া পর্তুগালের তূণে আর কোনো তীর নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Leong
কেভিন ডে ব্রয়নে, বেলজিয়াম
দু’বছর আগে ব্রাজিলের ফুটবল বিশ্বকাপে কেভিন ডে ব্রয়নে বেলজিয়ামকে কোয়ার্টারফাইনাল অবধি উঠতে সাহায্য করেন৷ এবারও তিনি রেড ডেভিলদের অ্যাটাকের মধ্যমণি৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Thys
আটিওম জিউবা, রাশিয়া
রাশিয়া একবার মাত্র কোনো বড় টুর্নামেন্টে গ্রুপ স্টেজ পার হতে পেরেছে৷ এবার হয়তো তাদের ভাগ্য বদলাতে পারে, কেননা, জেনিট সেন্ট পিটার্সবার্গের স্ট্রাইকার আটিওম জিউবা দলে রয়েছেন৷ রাশিয়া যে অবলীলাক্রমে বাছাইপর্বের বেড়া পার হয়েছে, জিউবা’র আটটি গোল তার একটা কারণ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Perez
স্লাটান ইব্রাহিমোভিচ, সুইডেন
ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলছেন সুইডেনের প্রবাদপ্রতিম খেলোয়াড়৷ যেমন সুইডেনে, তেমন ইউরোপের বিভিন্ন নামকরা ক্লাবে খেলার সময় দেখা গেছে, স্লাটান একটি ব্যক্তিত্ব, যেমন মাঠে, তেমন মাঠের বাইরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Nackstrand
আন্দ্রেস ইনিয়োস্তা, স্পেন
এটাই সম্ভবত ইনিয়েস্তার শেষ ইউরোপীয় চ্যম্পিয়নশিপ,কিন্তু ফ্রান্সে স্পেনের সাফল্য-অসাফল্যের একজন বড় ভাগীদার হবেন এই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়৷ স্প্যানিশ দলে সাবি-র সঙ্গে তাঁর দীর্ঘকালীন জুটি আজ ইতিহাস হলেও, দেখা যাক ইনিয়েস্তা স্পেনকে তার তৃতীয় ইউরো খেতাব জিততে সাহায্য করতে পারেন কিনা৷
ছবি: picture alliance/Demotix
লোরেঞ্জো ইনসিনিয়ে, ইটালি
সিরিয়ে আ-তে নাপোলির সঙ্গে ভেলকি দেখানোর পর ইটালির হয়েও কি এই ২৪-বছর-বয়সি ফরোয়ার্ড সফল হতে পারবেন? দু’বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপে মাত্র একবার মাঠে নেমেছিলেন ইনসিনিয়ে - কিন্তু এ মওসুমে সিরি আ-তে তাঁর খতিয়ান হলো ১২টি গোল ও ১০টি অ্যাসিস্ট৷ ইটালির কোচ আন্তোনিও কোনে এবার ইনসিনিয়ে-কে বেঞ্চে বসিয়ে রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না৷
ছবি: Getty Images
হ্যারি কেন, ইংল্যান্ড
প্রিমিয়ার লিগে ২০১৪-২০১৫ সালের মরশুমে ধূমকেতুর মতো উদয় হন টটেনহ্যামের এই প্লেয়ারটি৷ পরে ইংল্যান্ডের পাঁচটি কোয়ালিফাইং ম্যাচে তিনটি গোল করেছেন৷ লিস্টার সিটির জেমি ভার্ডি-কে জুটি করে এবার ফ্রান্সে আরো অনেক বল নেটে ঝুলিয়ে দিতে পারেন হ্যারি কেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. West
রবার্ট লেভান্ডোভস্কি, পোল্যান্ড
বুন্ডেসলিগায় গত ৩৯ বছর ধরে যা কেউ পারেনি, তা’ই করে দেখিয়েছেন রবার্ট লেভান্ডোভস্কি, এক মরশুমে ৩০টি গোল করে৷ পোল্যান্ডের কোয়ালিফাইং পর্যায়ের ১০টি ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন লেভান্ডোভস্কি৷ দেখা যাক, ইউরো ২০১৬-তে তাঁর দল তাঁকে কতোটা সাহায্য করে আর তিনি তাঁর দলকে কতোটা সাহায্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Zborowski
মানুয়েল নয়ার, জার্মানি
জার্মানিতে জার্মান দলের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করবে এই অসাধারণ গোলরক্ষকের উপর৷ তাঁর ফর্মের কথা নয়, কথা হচ্ছে বাকিরা কেমন খেলবেন ও গোল লাইন থেকে সর্বক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নয়ারের পক্ষে সম্ভব হবে কিনা, তাই নিয়ে৷
ছবি: A. Hassenstein/Bongarts/Getty Images
পোল পগবা, ফ্রান্স
এই তরুণ মিডফিল্ডার ইউভেন্তুসে যাবার পর একজন স্টার হয়ে উঠেছেন৷ এবার দেখা যাক তিনি ফ্রান্সকে ইউরো খেতাব জিতিয়ে সুপারস্টার হয়ে উঠতে পারেন কিনা৷
ছবি: imago/MIS
আন্দ্রি ইয়ারমোলেঙ্কো, ইউক্রেন
ডায়নামো কিয়েভের এই প্লেয়ারটির উপর ইউরোপের বহু বড় ক্লাবের নজর পড়েছে৷ কাজেই ইউক্রেনের হয়ে তাঁর পার্ফর্মেন্সের ওপরেও অনুরূপ নজর রাখবেন ক্লাব কর্মকর্তারা৷ ইয়ারমোলেঙ্কোর সহায়তায় ডায়নামো কিয়েভ চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ স্টেজ পার হয়৷ দেখা যাক, এবার ইউরো ২০১৬-তে ইউক্রেন সেটা পারে কিনা৷