আগামী শুক্রবার জার্মানিতে ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে৷ চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত৷ ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ আয়োজনের পর এটিই জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সবচেয়ে বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা৷
বিজ্ঞাপন
বুকমেকাররা এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছেন৷ গতবার তারা রানার আপ হয়েছিল৷ ইংল্যান্ডের পর ফেভারিট বিশ্বকাপের রানার আপ ফ্রান্স ও আয়োজক দেশ জার্মানি৷ ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইটালি আছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ফিফা ব়্যাংকিংয়ে ইউরোতে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে আছে ফ্রান্স (২)৷ এরপর আছে বেলজিয়াম (৩), ইংল্যান্ড (৪) ও পর্তুগাল (৬)৷ জার্মানির ব়্যাংকিং ১৬৷ সে হিসেবে ইউরোপের নবম সেরা দল তারা৷ ব়্যাংকিংয়ে সবার নিচে থাকা দেশ জর্জিয়া (৭৫)৷
মোট ২৪টি দেশ ছয় গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে৷ চার দেশের একেকটি গ্রুপ থেকে প্রথম দুটি দল শেষ ১৬তে যাবে৷ এছাড়া প্রতিটি গ্রুপে তৃতীয় স্থান পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে পয়েন্ট বিবেচনায় সেরা চার দেশও শেষ ১৬তে যাবে৷ কোনো গ্রুপে প্রথম দুটো দলের পয়েন্ট সমান হলে নিজেদের মধ্যে খেলার ফল বিবেচনায় প্রথম, দ্বিতীয় ঠিক করা হবে৷
১০টি স্টেডিয়ামে ৫১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে৷ বার্লিনের অলিম্পিয়া স্টেডিয়াম (আসনসংখ্যা ৭১ হাজার), মিউনিখ (৬৬ হাজার) ও ডর্টমুন্ডে (৬২ হাজার) সর্বোচ্চ ছয়টি ম্যাচ হবে৷ মিউনিখে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে জার্মানি ও স্কটল্যান্ড৷ ফাইনাল হবে বার্লিনে৷
পাঁচটি করে ম্যাচ হবে স্টুটগার্ট (আসনসংখ্যা ৫১ হাজার), হামবুর্গ (৪৯ হাজার), ড্যুসেলডর্ফ (৪৭ হাজার), ফ্রাঙ্কফুর্ট (৪৭ হাজার) ও কোলনে (৪৩ হাজার)৷ লাইপজিগ (৪০ হাজার) ও গেলসেনকিরশেনে (৫০ হাজার) হবে চারটি করে ম্যাচ৷ ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের সময় ড্যুসেলডর্ফে কোনো ম্যাচ হয়নি৷
টুর্নামেন্টের সময়সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ এছাড়া সন্ত্রাসী ও হুলিগানেরা যেন জার্মানিতে ঢুকতে না পারেন সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ৷ গত টুর্নামেন্টের আয়োজক ব্রিটেন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনায় ১,৬০০ দর্শককে সেই দেশে ঢুকতে দেয়নি৷
জার্মান পুলিশ ছাড়াও কয়েকশ বিদেশি পুলিশও নিরাপত্তায় থাকবেন৷ এর মধ্যে ফ্রান্স থেকে অনেক পুলিশ থাকবেন৷ কারণ ইউরোর পরপর ফ্রান্সে অলিম্পিক (২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট) ও প্যারালিম্পিক (২৮ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে৷
ইউরো ২০২২: অজেয় জার্মানিকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের ইতিহাস
ওয়েম্বলিতে জার্মানিকে হারিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড৷ শেষ মুহূর্তের গোলে এই জয়কে দেশটির নারী ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা হিসাবে দেখছেন অনেকে৷
ছবি: Michael Regan/Getty Images
রেকর্ড দর্শক উপস্থিতি
নারী-পুরুষ মিলিয়ে ইউরো কাপের কোনো ম্যাচে ইতিহাসে এত দর্শক হয়নি৷ ২০২২ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দর্শক উপস্থিতি ভাঙলো অতীতের সকল পরিসংখ্যানের রেকর্ড৷ টানটান উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচটি সরাসরি উপভোগ করতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রোববার জড়ো হয়েছিলেন ৮৭ হাজার ১৯২ জন দর্শক৷
ছবি: Dylan Martinez/REUTERS
শুরুর আগেই শেষ
জার্মানির শুরুটাই ছিল বেশ মন খারাপের৷ ফাইনাল ম্যাচের কিক অফের কিছুক্ষণ আগে খেলা থেকে সরে দাঁড়ান জার্মান অধিনায়ক আলেক্সান্ডার পপ৷ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনুশীলনের সময় পেশীতে আঘাত পাওয়ায় তিনি ফাইনালে অংশ নিতে পারছেন না৷ পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফ্রমে থাকা পপের উপস্থিতিই মাঠে নিজের দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিপক্ষ শিবিরে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷
ছবি: Colorsport/IMAGO
সমানে সমান
পুরো ম্যাচে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখাতে পারেনি কোনো দলই। ম্যাচ ইংল্যান্ড জিতলেও বল দখলে এগিয়ে ছিল জার্মানি। এমনকি গোলের জন্য ইংল্যান্ডের ১৩টির বদলে জার্মানি নিয়েছে ১৬ টি শট। তবে গোলের লক্ষ্য বরাবর শটে জার্মানির (৭টি) চেয়ে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড (৮টি)।
ছবি: Franck Fife/AFP/Getty Images
ফাউল-কার্ডের আধিপত্য
এবারের ইউরো কাপ আসরে সবচেয়ে বেশি ফাউল করেছে জার্মান দল৷ জার্মানির ৮২টি ফাউলের বিপরীতে ইংল্যান্ড পুরো আসরে ফাউল করেছে ৬০টি৷ ফাইনাল ম্যাচেও প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে জার্মানি আগ্রাসি ভূমিকায় মাঠে থাকবে, ধারণাই করা হচ্ছিলো৷ ডিফেন্ডার লেনা ওবারডর্ফের নেতৃত্বে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে জার্মানি৷ কেবল প্রথমার্ধেই দুই দল মিলিয়ে ফাউল হয় ১৪টি, হলুদ কার্ড দেখেন তিনজন খেলোয়াড়৷ ওবারডর্ফ নিজেও একটি হলুদ কার্ড পেয়েছেন৷
ছবি: Harriet Lander/Getty Images
হয়নি শেষ রক্ষা
প্রথমার্ধে জালে বল জড়াতে পারেনি কোনো পক্ষই৷ দ্বিতীয়ার্ধে ৫৬ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় হিসাবে মাঠে নেমে প্রথম গোল করেন ইংল্যান্ডের এলা টুন৷ আনন্দ বেশিক্ষণ টেকেনি৷ ৭৯ মিনিটের মাথায় খেলায় সমতা ফেরান জার্মানির লিনা মাগুল৷ নির্ধারিত সময়ে খেলার জয়-পরাজয় মীমাংসা না হওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে৷ অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে ১১০ মিনিটে ইংল্যান্ডের আরেক বদলি খেলোয়াড় ক্লোয়ে কেলি দুইবারের চেষ্টায় গড়েন ইতিহাস৷
ছবি: Harriet Lander/Getty Images
অজেয় জার্মানির পতন
জার্মানিকে এবারের কাপে দেখা হচ্ছিলো অজেয় এক শক্তি হিসাবে৷ ইংল্যান্ডকেও ফেবারিট মানা হলেও পরিসংখ্যান এবং শক্তি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই৷ সবশেষ ২০০৯ সালেপ ইউরো ফাইনালে ৬-২ গোলে ইংলিশদের উড়িয়ে দিয়েছিল জার্মানরা৷ কিন্তু এবার নিজেদের মাঠে ইংলিশ নারী ফুটবলের ইতিহাস নতুন করে রচনার সুযোগ হাতছাড়া করেনি সিংহীরা৷