1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইকুয়েডরে অরগ্যানিক খামারের কলা

১১ এপ্রিল ২০১৮

দক্ষিণ অ্যামেরিকার ইকুয়েডরে বড় বড় খামারে কলার চাষ চলছে৷ জাহাজে করে এই কলা যাবে ইউরোপে, জার্মানিতে৷ ওদিকে মাত্রাধিক কীটনাশক ব্যবহারের দাম দিচ্ছেন খামারকর্মীরা৷ সমাধান হলো অরগ্যানিক খামার৷

Überreife Bananen mit dunklen Flecken
ছবি: picture-alliance/dpa/Food and Drink Photos

কলাবাগান, মানে কলা চাষের খামার৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ ইকুয়েডর-এর দক্ষিণে মাচালায় কলাচাষিদের বিভীষিকা হল সিগাটোকা নামের এক ধরনের ছত্রাক – বাংলায় আমরা যাকে ছাতা ধরা বলি৷ কলাগাছে ছাতা ধরা আটকানোর জন্য সপ্তাহে দু'-তিনবার করে বিমান থেকে ফাংগিসাইড বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়৷

ডারউইন পালাসিওস চারটি কলাবাগানের মালিক – দু'প্রজন্ম ধরে পালাসিওস পরিবার কলাচাষের খামার চালাচ্ছে৷ তাঁর অভিজ্ঞতায়, ‘‘সিগাটোকা নেগ্রা কোনো সাধারণ অসুখ নয়, যা সারানো যায়৷ রোগটার সাথে যোঝার পন্থা শিখতে হয়৷ এ এমন একটা ছত্রাক, যা তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা অনুযায়ী চিরকালই থাকবে৷ নিয়মিত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা দেখার চেষ্টা করি, রোগটা যাতে না ছড়ায় আর ফসলের ক্ষতি না করে; কলাগাছের পাতাগুলো যেন সুস্থ থাকে, যাতে ফলগুলোও সুস্থ থাকে৷''

সিগাটোকা একবার দেখা দিলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব৷ ইকুয়েডরের আবহাওয়া একটু অন্যরকম হওয়ার দরুন এখানে সিগাটোকা এ-পর্যন্ত বিশেষ ক্ষতি করতে পারেনি৷ ইকুয়েডরের আবহাওয়া মধ্য অ্যামেরিকার অন্যান্য দেশের মতো অতোটা আর্দ্র ও বৃষ্টিপ্রধান নয় – সে সব দেশে ইকুয়েডরের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়৷

জার্মানিতে ইকুয়েডরের অরগ্যানিক কলা

05:32

This browser does not support the video element.

ক্লোন করা কলাগাছ 

কলাগাছের বংশবৃদ্ধি প্রজনন ছাড়াই ঘটে: মূল গাছটার পাশে ছোট ছোট স্ত্রী গাছ গজায়, যারা ন'মাসের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে৷ পালাসিওস জানালেন, ‘‘সেরা গাছগুলো বেছে নেওয়া যায়৷ আমরা আবার সেগুলোকে ল্যাবরেটরিতে ক্লোন করতে দিই, যাতে তাদের  জিন-গত বৈশিষ্ট্য এক হয়৷ তা থেকে আমরা নিশ্চিত হই যে, আমরা সবসময় সেরা ফসল পাব, সবচেয়ে বেশি ওজনের সেরা কলা গজাবে; যাতে আমরা কলার খামারে হেক্টর প্রতি সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করতে পারি৷''

প্রজনন ব্যতীত বংশবৃদ্ধির বিপদ হল এই যে, জিন-গত উপাদানের দিক দিয়ে গাছগুলো নিজেদের বদলাতে পারে না – অন্তত নিজে থেকে নয়৷ কাজেই প্রাকৃতিক শত্রুর হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর ক্ষমতা এই সব গাছের নেই৷ ওদিকে সারা বিশ্বে আজ প্রায় এক ধরনের কলাই অবশিষ্ট আছে: ক্যাভেন্ডিশ জাতের কলা, অথচ ঠিক এই কলারই আবার সিগাটোকা ছত্রাক প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই৷

কীটনাশক, নাকি অরগ্যানিক?

ইকুয়েডরে  কলার খামারগুলোর উপর যে ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ছড়ানো হয়, কলা যারা কেনেন অথবা খান, তাদের জন্য তা থেকে কোনো বিপদ নেই – বিপদ হল কলার খামারের কর্মীদের৷ আশার কথা: অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইকুয়েডরে অরগ্যানিক চাষ প্রসূত কলা ক্রমেই আরো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ও দেশে কলার উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ আজ আসছে অরগ্যানিক চাষ থেকে৷

‘এল পিনকো'-র মতো অরগ্যানিক খামারগুলিতে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে৷ কৃষি প্রযুক্তিবিদ গনসালো মার্ক্স পেনিয়ারেতা আগে তিন বছর ধরে কীটনাশকের পাইকারি ব্যবসায় কাজ করেছেন৷ তারপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পেনিয়ারেতা শোনালেন সে কাহিনি৷

 ‘‘কীটনাশক ইত্যাদি কৃষিকাজের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে, এমন একটা সংস্থায় আমি কাজ করতাম৷ আমার কাজের জায়গায় বিমান থেকে কীটনাশক ছড়ানো হতো৷ তা থেকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে খামারকর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ একটা বয়সে পৌঁছানোর পর তাদের হাতের নখ পড়ে যায়, তাদের ক্যানসার হয়, মাথার চুল পড়ে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়৷ অসহ্য লাগে৷''

কীটনাশকের ফলে স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া শক্ত, কিন্তু এ অঞ্চলে সকলেই কাউকে না কাউকে চেনেন, যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ অপরদিকে অরগ্যানিক খামারগুলিতে শুধুমাত্র অরগ্যানিক সার ও ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালজির সার, কিংবা সিগাটোকা ছত্রাকের মতো শ্যাওলা দূর করার জন্য এক ধরনের বিশেষ তেল ব্যবহার করা হয়৷ পেনিয়ারেতা বললেন, ‘‘প্রথাগত খামারে রাতের অন্ধকারে হাঁটতে গেলেও কোনো অসুবিধে নেই, কেননা জমি একেবারে খালি, কোনো কিছু পড়ে নেই৷ কিন্তু অরগ্যানিক খামারে হেঁটে বেড়ালে আগাছা, কেঁচো, পিঁপড়ে ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে – নানা ধরনের পোকামাকড়৷''

পালাসিওস পদ্ধতি

‘আসিয়েন্দা মিদাহা'-য় ডারউইন পালাসিওস তাঁর নিজস্ব পদ্ধতি চালু করেছেন৷ কলাবাগানের এক একটা প্লটের ফসলের ওপর নিয়মিতভাবে নজর রাখা হয়: কাজেই পালাসিওস আরো কার্যকরিভাবে সার, পানি ও কলাগাছের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন৷ এর ফলে অর্থের সাশ্রয় হয়৷ কীভাবে, পালাসিওস তা বর্ণনা করলেন: ‘‘কোন প্লটে কতো ফসল হয়েছে, তার সব খবর আমরা এখানে বসে পাই৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল কলার ওজন৷ কলার কাঁদি থেকে আমরা কলার বয়স আর সেটা কোনো প্লট থেকে এসেছে, তা বলে দিতে পারি – এছাড়া সেখানে যদি কোনো গোলমাল থাকে, তাও আমরা দেখতে পাই আর সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারি৷''

 এবার কলাগুলোকে কনটেনার জাহাজে করে মাচালা থেকে জার্মানির হামবুর্গে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ কলা সবুজ থাকাকালীনই সেগুলোকে চালান দেওয়া হয়; পরে অকুস্থলে ইথিলেন সহযোগে সেগুলোকে পাকানো হয়৷

গবেষণা চলেছে৷ সিগাটোকা ছত্রাক পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে সক্ষম, এমন কলাগাছ নাকি তৈরি হতে চলেছে, যাতে কীটনাশক ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই না পড়ে – অবশ্য অন্য কোনো রকমের বিপদ দেখা দেবার আগে৷

ব্লুট/টুরিনা/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ