এবার ইকুয়েডরে হয়ে গেল ভয়াবহ ভূমিকম্প৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটিতে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭২ জন মারা গেছে৷ রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করে দেশে ফিরে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Acosta
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে জাপানে হানা দিয়েছিল ভূমিকম্প৷ ভূমিকম্প পর্যবেক্ষকরা বলছিলেন, আরো এক সপ্তাহ আতঙ্কেই থাকতে হাবে এশিয়ার এই দেশকে৷ তবে রোববার ভোরে জাপান নয়, ভূমিকম্প দানবের মতো আবির্ভূত হয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে৷
৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প শুরু হলেও পরে মাত্রা আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৮ হওয়ায় বাড়ি-ঘর ধসে পড়তে থাকে৷ মানুষ চাপা পড়তে থাকে ভবনের নীচে৷ পরিণামে ভোরের ঘুম এ পর্যন্ত ২৭২ জনের চিরনিদ্রা হয়েছে৷
ভ্যাটিকান সফর বাতিল করে দেশে ফিরে এসেছেন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়া৷ ফিরেই ছুটে গেছেন উপদ্রুত এলাকায়৷ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সচক্ষে দেখে তিনি বলেছেন, ‘‘যা ঘটে গেল তার যন্ত্রণাটা বিশাল৷ অতি বিশাল ট্র্যাজেডি৷ আমরা তারপরও নিশ্চয়ই সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে পাবো৷'' নিহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়ে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমরা সবই পুনির্মাণ করতে পারবো৷ শুধু যাঁরা চলে গেলেন তাঁদের জীবন কখনো ফিরিয়ে আনতে পারবো না৷ সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি৷''
ছবি: picture-alliance/dpa/Usgs
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মান্তা, পোর্টোভিয়েও এবং গুয়াকুইল শহরে৷ উদ্ধার তৎপরতা এখনো চলছে৷ ভবনের নীচে চাপা পড়াদের তাঁদের স্বজনরা খালি হাতে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন – এমন মর্মান্তিক দৃশ্যের ছবিও প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম৷
আবার মা এবং তাঁর শিশু কন্যাকে উদ্ধার করতে পেরে পুলিশ নিজে থেকেই সেই সুসংবাদ টুইট করে জানাচ্ছে সবাইকে৷
এরই মাঝে বাড়তি আতঙ্ক হয়ে উঠেছে ভূমিকম্পের সুযোগে এক কারাগার থেকে কয়েদিদের পালিয়ে যাবার খবর৷ পোর্টোভিয়েওর কারাগার থেকে পালিয়ে যায় শতাধিক কয়েদি৷ পুলিশ জানিয়েছে ৩০ জন আত্মসমর্পন করে কয়েদখানায় ফিরলেও বাকিদের এখনো পাওয়া যায়নি৷
আরো বড় ভূমিকম্পে বাঁচবে কিভাবে ঢাকা?
ভূমিকম্পে আবারো কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ৷ ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন৷ ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও রাজধানী ঢাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন রেখে গেছে সোমবার ভোরের এই ভূমিকম্প৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S. Islam
আতঙ্কেই মারা গেছেন পাঁচজন
ভোর ৫টার দিকে শুরু হয় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্প৷ প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে ঘর-বাড়ি কেঁপে ওঠায় ঘুম থেকে উঠেই ঘর ছাড়ার চেষ্টা করে অনেক মানুষ৷ এ সময় আতঙ্কে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাটে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ছবিতে সন্তান হারানো এক নারীর কান্না৷
ছবি: picture alliance/landov/S. Islam
আহত শতাধিক
ভূমিকম্পে আহত হয়ে ২৯ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং ৩২ জন সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে৷ সারা দেশে শতাধিক বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Abdullah
আতঙ্কে পাঁচ তলা থেকে লাফ
নিহতদের সবাই-ই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে চিকিৎসক এবং নিহতদের স্বজনরা জানাচ্ছেন৷ আতঙ্কে কেউ কেউ ভবন থেকে ঝাঁপিয়েও প্রাণ রক্ষার চেষ্টা করেন৷ ঢাকায় আহতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও রয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যাদলয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে এবং পাঁচজন মহসিন ও কবি জসিম উদ্দীন হলের দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S. Islam
ভয়ংকর ঝুঁকির মুখে ঢাকা
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরের অন্তত ৭২ হাজার ছোট-বড় ভবনের ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে৷ এ অবস্থায় ভূমিকম্পে অনেকের আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/S. Islam
ভূমিকম্প মোকাবেলার প্রস্তুতি নেই
ভূমিকম্পের পরে উদ্ধারকাজ সুষ্ঠুভাবে না হলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বাড়ে৷ সুষ্ঠু উদ্ধার কাজের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সমন্বিত প্রয়াস ও যুগোপযোগী নীতিমালা থাকা দরকার৷ এ সব অনেকাংশে থাকলেও মাঠপর্যায়ে এগুলোর প্রয়োগ ও চর্চা নেই৷
ছবি: Reuters
তাহলে বিপর্যয় রোখার উপায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় বড় রকমের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ হতে পারে৷ পরিকল্পনাহীন ভবন ও রাস্তাঘাট, ঘনবসতি, উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত মহড়ার অভাবের কারণেই এমন আশঙ্কা তাঁদের৷