1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইকো-ইসলাম সম্মেলন যে কারণে করাচিতে

২১ নভেম্বর ২০১৯

ডয়চে ভেলে মুকালামা (#Mukalama) ও পাকিস্তানের নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন টিটুএফ (T2F) যৌথভাবে করাচিতে আয়োজন করেছে ইকো-ইসলাম সম্মেলন৷ ২৩ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের লক্ষ্য নিয়ে লিখেছেন আতিফ তৌকির৷

Karachi Stadtansicht
ছবি: picture-alliance/Zumapress

হিমালয় পাদদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম থেকে আমার পরিবার যখন করাচিতে স্থানান্তরিত হয় তখন আমার বয়স বড়জোর পাঁচ বছর৷ সেদিনকার করাচি ছিল আজকের থেকে অনেকটাই ভিন্ন৷

এত গাড়ি ছিল না রাস্তায়, দোকানের সংখ্যা ছিল কম, মানুষ, যানবাহন সেই সঙ্গে হইচইও ছিল না অত৷ তারপরও শহরের নিজস্ব একটি মাধুর্য ঠিকই ছিল৷

এখন এই শহরে দুই কোটি মানুষের বসবাস৷ দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় শহরটির পরিবেশের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে৷ গত কয়েক যুগে সবুজ প্রকৃতির জায়গায় গড়ে উঠেছে নগর কাঠামো, পার্কগুলো পরিণত হয়েছে কংক্রিটের ভবনে, সবুজ ভূমি রূপান্তরিত হয়েছে আবাসিক প্রকল্প, সড়ক কিংবা সেতুতে৷ মনে আছে বাবা তখন অফিসে যেতেন বাইসাইকেলে চড়ে, কিন্তু এখন এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া দুস্কর৷ বিদ্যালয়ে আমরা জেনেছি, ইসলাম পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে তার চর্চা নেই৷

খোলা নর্দমা, দূষিত পানি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শিল্প ও নগরের কঠিন বর্জ্য, বায়ু দূষণ, বাস্তুসংস্থান ধ্বংস করা আর সেই সঙ্গে জনসংখ্যার চাপ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গোটা শহরের উপরই গভীর প্রভাব ফেলেছে৷ 

ছবি: DW/A. Tauqeer

সম্প্রতি আমি ইকো-ইসলাম সম্মেলনে যোগ দিতে জাকার্তায় গিয়েছিলাম৷ সেখানে নগরায়নের সমস্ত উপসর্গ সত্ত্বেও সবার মধ্যে দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেয়েছি, সেটা শুধু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নয়, শহরের ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেও৷ যেমন সেখানে আয়োজনটি করেছে ওয়াহিদ ফাউন্ডেশন নামের একটি ইসলামিক সংগঠন৷ তারা ইসলামের সহনশীলতা এবং সম্প্রীতির শিক্ষাগুলো প্রচারই করছে না, প্রকৃতি রক্ষায়ও কাজ করছে৷ জাকার্তায় পরিবেশবান্ধব মসজিদগুলোর কথাই ধরা যাক, যেখানে পানির অপচয় রোধ করতে চমৎকার সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কোরানের বিভিন্ন আয়াত এবং নবী মোহাম্মদ (সাঃ)-এর বাণীতেও প্রকৃতি সংরক্ষণের কথা রয়েছে৷ সংগঠনগুলো প্রকৃতিবান্ধব জীবন যাপনের জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে৷

দুই কোটি মানুষ নিয়ে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ করাচি শহরে এই বিষয়গুলো আরো মনযোগ আকর্ষণের দাবি রাখে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বায়ু দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে পাকিস্তানসহ গোটা বিশ্বে বোধ এবং সচেতনতা বেড়েছে৷ চলতি বছর সেপ্টেম্বরে আয়োজিত জলবায়ু ধর্মঘটে প্রথমবারের মতো ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে৷ এই ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ শুধু স্লোগান আর পদযাত্রায় সীমাবদ্ধ নেই, নতুন নতুন উদ্যোগও চোখে পড়ছে৷ এমনকি গত নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের বিষয়গুলো উঠে এসেছে ৷ নির্বাচনি প্রচারে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) শত কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়৷ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাছ লাগানোর অভিযানে অংশ নিয়েছে৷

করাচিতে হিন্দু খ্রিষ্টান শিখদের দিনকাল

03:10

This browser does not support the video element.

ভূগর্ভস্থ ও পানীয় জল সংরক্ষণ, হিমবাহ রক্ষা, বনভূমি সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো এখন পাকিস্তানের জাতীয় ইস্যুর অংশ হয়ে উঠেছে৷ সেই সঙ্গে পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বেড়েছে৷

বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির সূচক ২০১৯ অনুযায়ী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান অষ্টম৷ তথ্য-উপাত্ত বলছে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনে বছরে গড়ে ৫১২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে বছরপ্রতি ৩৮২ কোটি ৬০ লাখ ডলার৷

করাচি বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র৷ এ কারণে শহরটির ক্ষতি হলে তার প্রভাব গোটা দেশের উপরে পড়বে৷ স্বাস্থ্য, কঠিন বর্জ্য, বায়ু দূষণ বা পানি- যে ইস্যুই বলা হোক না কেন, শহরের বেশিরভাগ সমস্যাই জলবায়ু ও পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত৷ এ কারণে কোটি মানুষের জীবন রক্ষায় একটি সম্মিলিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি৷ শুধু এনজিও, পরিবেশ আন্দোলনকারীদের নিয়ে এই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে না৷ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বাস ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে হাত মেলাতে হবে৷ টিটুএফ (T2F)-এর সহযোগিতায় ডয়চে ভেলের মুকালামা (#Mukalama) সেই লক্ষ্যেই করাচিতে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারকারীরা সম্মিলিত একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন৷

মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও ইন্দোনেশিয়ার সমাজের বিভিন্ন পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে একমত জাকার্তা সম্মেলনে৷ এ কারণে এই সম্মেলনটিও সফল হয়েছিল৷ করাচিরও তেমনটাই করা প্রয়োজোন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ