1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইচ্ছামৃত্যুকে স্বাগত জানালো ভারত

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১২ মার্চ ২০১৮

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ইউথেনেসিয়া বা ইচ্ছামৃত্যুকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ চিকিৎসকরা এবং মরণাপন্ন রোগীর আত্মীয়স্বজনরাও কিন্তু এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানাচ্ছেন৷

Palliativmedizin
ছবি: picture-alliance/dpa

আত্মহত্যা নয়, কিন্তু জীবনের যখন আর কোনো আশাই নেই, তখন স্বেচ্ছামৃত্যু৷ রোগযন্ত্রণা থেকেই রেহাই পাওয়া নয়, কিন্তু জীবন্মৃত অবস্থায় থাকতে না চাওয়ার অধিকার৷ যে কারণে ডাক্তারি পরিভাষায় ইউথেনেসিয়াকে নিষ্কৃতি মৃত্যুও বলেন অনেকে৷ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে এই অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিলো৷ জানালো, ভারতীয় সংবিধানে জীবনের অধিকারকে যে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই স্বেচ্ছামৃত্যুও তার মধ্যেই পড়ে৷ কারণ কেবল বেঁচে থাকা নয়, একজন মানুষ কীভাবে বেঁচে আছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ ফলে কোমায় চলে যাওয়া, বা লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের ভরসায় নাম কা ওয়াস্তে বেঁচে থাকার চেয়ে মর্যাদার সঙ্গে মারা যাওয়াটাই যদি কেউ বাঞ্ছনীয় মনে করেন, তবে তিনি আগাম নির্দেশ দিয়ে যেতে পারেন৷ যদি সেইরকম পরিস্থিতি আসে, তা হলে যাতে তাঁর আত্মীয়স্বজন সেই নির্দেশ কার্যকর করতে পারেন৷

চিকিৎসকরা সবাই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ ডা. চিত্রিতা গুপ্ত মুখার্জি যেমন ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘অবশ্যই দরকার ছিল এই অধিকার৷ অ্যাক্টিভ ইউথেনেসিয়া, অর্থাৎ যেখানে একজন রোগীকে মারা যেতে সাহায্য করা হয়, তার নানা রকম অপপ্রয়োগ হতে পারে৷

ড. চিত্রিতা

This browser does not support the audio element.

সেই কারণেই প্যাসিভ ইউথেনেসিয়া এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আদালতের ঠিক করে দেওয়া মেডিকেল বোর্ডের হাতে৷ এটাই ঠিক পদ্ধতি৷ কারণ একজন মরণাপন্ন রোগীকে শুধু তাঁর রোগযন্ত্রণা থেকে রেহাই দেওয়াই নয়, যেখানে তাঁর সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কোনো আশা নেই, সেখানে এটাই একমাত্র নিষ্কৃতির পথ৷''

ভবিষ্যতে যদি প্যাসিভ ইউথেনেসিয়ার মতো অ্যাক্টিভ ইউথেনেসিয়াও ভারতে স্বীকৃত হয়?‌ তা হলে চিকিৎসক হিসেবে কি দায়িত্ব পালনে রাজি থাকবেন?‌ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল অ্যানাসথেটিস্ট ডা. নির্মল হালদারকে৷ ইনি প্রতিদিনই অপারেশন থিয়েটারে ওষুধের সাহায্যে রোগীদের অচেতন করেন, অস্ত্রোপচার শেষে আবার চেতনা ফিরিয়ে আনেন৷ ডা. হালদার পরিষ্কারই জানালেন, তিনি অ্যাক্টিভ ইউথেনেসিয়ার শরিক হতে রাজি হতেন না, কারণ ওষুধের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের যে প্রশিক্ষণ তিনি পেয়েছেন, সেই অচেতন প্রক্রিয়াকে আবার ফিরিয়ে আনাও তাঁর সেই শিক্ষার অঙ্গ৷ চিকিৎসক হিসেবে তার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়৷

সুবীর নাগ

This browser does not support the audio element.

তবে প্যাসিভ ইউথেনেসিয়াকে পুরোপুরি সমর্থন করেন ডা. হালদার এবং সেটাও পুরোপুরি ব্যবহারিক দিক থেকে৷ তাঁর বক্তব্য, যে রোগীর সুস্থ হওয়ার কোনো আশাই নেই, তিনি মাসের পর মাস একটা হাসপাতালের একটা বেডে থেকে যাওয়া মানে আরও অনেক রোগী, যাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাদের জন্য ওই একটা বেড কম পড়ে যাওয়া৷ অনেক সময়ই এটা একটা বাস্তবিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷

পেশায় অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সুবীর নাগের বাবা মারা গেছেন ক্যানসারে৷ তাঁর মা-ও ক্যানসারের রোগী এবং মরণাপন্ন৷ সুবীর বাবার ক্ষেত্রেও যা করেছেন, মায়ের ক্ষেত্রেও তাইই করছেন৷ অর্থাৎ যতটুকু চিকিৎসা তাঁদের যন্ত্রণা লাঘব করতে জরুরি, সেটাই করার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক্তারদের৷ কিন্তু খুব আগ্রাসি মনোভাব নিয়ে এক অসম যুদ্ধ লড়ে যাওয়ার পক্ষপাতী তিনি নন৷ বিশেষত যে যুদ্ধের শেষে পরাজয় সম্পূর্ণ নিশ্চিত৷ ডয়চে ভেলেকে সুবীর বললেন, শুধু বেঁচে থাকাই নয়, কীভাবে বেঁচে আছেন তাঁর বাবা-মা, সেটা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ' যদি নিশ্চিত না করা যায়, তা হলে ক্যানসারের রোগযন্ত্রণা এবং কষ্টকর কেমোথেরাপি, ইত্যাদি চিকিৎসা পদ্ধতি চালিয়ে নিয়ে গিয়ে বেঁচে থাকার কষ্টকে দীর্ঘায়িত করার কোনো যুক্তি তিনি দেখেন না৷ কাজেই সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তাঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যে একজন মানুষ আগাম এই নির্দেশ দিয়ে যেতে পারেন যে তিনি কীভাবে বেঁচে থাকবেন এবং কীভাবে থাকতে চান না৷

আপনি কি ‘ইচ্ছামৃত্যু’ সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ