টাইপ্যান আর ব্ল্যাক মাম্বা – এই দু'টি সাপের কোনো একটি কাউকে কামড়ালে কয়েক মিনিটের মধ্যে তার মৃত্যু হওয়ার কথা৷ অথচ টিম ফ্রিডি এই দুই সাপের কামড় খেয়ে এখনও বেঁচে আছেন!
বিজ্ঞাপন
৩৭ বছরের এই মার্কিন নাগরিক টাইপ্যান আর ব্ল্যাক মাম্বাকে দিয়ে নিজ ইচ্ছেতেই তাঁর হাতে কামড় খাইয়েছেন৷ এটি নাকি তাঁর গবেষণার একটি অংশ৷ এভাবে সাপের বিষের ভ্যাকসিন তৈরি করতে চান শৌখিন এই বিজ্ঞানী৷
সেই লক্ষ্যে গত ১৬ বছর ধরে প্রায় ১৬০ বার বিষধর সাপের কামড় খেয়েছেন তিনি৷ গত জানুয়ারি মাসে টিম ফ্রিডির সাপের কামড় খাওয়ার দৃশ্য সম্বলিত একটি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা হয়৷ এখন পর্যন্ত (২০-০৪-২০১৬) সেটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৯ লক্ষ বার৷
আজব এই নেশার কারণে টিম ফ্রিডিকে ছেড়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী৷ প্রায় ২০ বছর পর গত অক্টোবরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করেন৷ তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে৷
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানী ড. ব্রায়ান হানলে টিম ফ্রিডিকে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, তাঁর শরীরে এখন অ্যান্টিবডির সংখ্যা স্বাভাবিকের দ্বিগুণ৷
সাপের কামড় খেতে গিয়ে ২০১১ সালে একবার কোমায় চলে গিয়েছিলেন টিম ফ্রিডি৷ সেবার পরপর দু'বার কোবরা সাপের কামড় খেয়েছিলেন তিনি৷ ‘‘প্রথম কামড়ে পর সব ঠিক ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় কামড়ের পর অজ্ঞান হয়ে যাই'', জানান ফ্রিডি৷ তিনি বলেন, ‘‘ওটা একটা বড় ভুল ছিল৷ কিন্তু কখনও কখনও আপনাকে ওরকম ভুল করতে হয়৷''
উল্লেখ্য, সাপের কামড়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ভারতে৷ দেশটির সরকারের এক হিসাবে জানা যায়, সেখানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৬ হাজার বলে ২০১৪ সালে সংসদে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক৷
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী বলা হয় এদের৷ এসব প্রাণীর নিঃসৃত এক ফোঁটা রস হয়ত মানুষের প্রাণ নাশের কারণ হতে পারে৷
ছবি: cc-by/Ester Inbar
সি ওয়্যাসপ্স
এরা জেলিফিশের একটি প্রজাতি৷ কয়েক স্তরের কর্ষিকা এবং লক্ষ লক্ষ স্নিডোসাইট রয়েছে এদের৷ কেউ যদি এটা স্পর্শ করে তাহলে এই কর্ষিকার মাধ্যমে কয়েক লাখ সূক্ষ্ম বিষাক্ত হুল ফুটিয়ে দেয় দেহে৷ যেখানে হুল ফোটানো হয় সেখানে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়৷ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা না নিলে ৩ মিনিটের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ঐ ব্যক্তি৷ সি ওয়্যাসপ্স-এর লেজে এ পরিমাণ বিষ থাকে যে তাতে ২৫০ জন মানুষ মারা যেতে পারে৷
ছবি: AP
বিষাক্ত ব্যাং
এই উজ্জ্বল হলুদ রংয়ের প্রাণীটি বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ব্যাং৷ এরা দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকায় পাওয়া যায়৷ এরা একবারে দশজন মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে৷
ছবি: Fotolia/DWaEbP
রিফ ফিশ
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে সাগরের তলদেশে পাথরের মধ্যে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ এখানে এরা পাথরের সাথে এমনভাবে মিশে থাকে চেনাই যায় না৷ এই মাছটি যখন কাউকে আক্রমণ করে তখন কাঁটা ফুটিয়ে দেয়, এর বিষের কারণে রক্তে নিম্নচাপ, ভেনট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন এবং পক্ষাঘাত হয়, যা পরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে৷
ছবি: gemeinfrei
ইনল্যান্ড তাইপান
এই সাপের বিষ ভারতের গোখরো সাপের বিষের চেয়ে ৫০ গুন বেশি শক্তিশালী৷ এ কারণে অস্ট্রেলিয়ার ল্যান্ড স্নেক সবচেয়ে বিষধর হিসেবে পরিচিত৷ ইনল্যান্ড তাইপান ২৩০ বয়স্ক ব্যক্তিকে ধরাশায়ী করতে পারে৷ তবে স্বস্তির কথা হলো এই সাপের আবাস প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে মানুষের চলাচল কম৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Benchill
সি স্নেকস ডুবোয়া
সামুদ্রিক সাপের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিষাক্ত৷ এরা ছোবল দিলে কোথায় ছোবল দিয়েছে এবং কখন দিয়েছে সেটা টেরই পাওয়া যায়না৷ কেবল আধঘণ্টা পরে সাপের দংশের শিকার ঐ ব্যক্তির গলা শুকিয়ে যায়, এরপর সে তার হাত পা নাড়াতে পারে না৷ ধীরে ধীরে পুরো শরীর অচল হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়৷
ছবি: cc-by-3.0/Aloaiza
সামুদ্রিক শামুক কোন
সামুদ্রিক শামুকের খোলের বর্ণ বৈচিত্রের কারণে ব্যাপক চাহিদা৷ কিন্তু এই যে শামুকটিকে দেখছেন এর সৌন্দর্য্যের পেছনে আছে মারাত্মক বিষ ভাণ্ডার৷ সেই বিষের এক ফোঁটায় ২০ জন মানুষ প্রাণ হারাতে পারে৷
ছবি: picture-alliance
ব্লু রিং অক্টোপাস
সাধারণ পরিবেশে এটি হালকা বাদামী রংয়ের৷ কিন্তু যখন আগ্রাসী হয়ে ওঠে তখন এর গায়ে উজ্জ্বল নীল রংয়ের রিঙ দেখা যায়৷ যখন একটি কামড়ায় তখন এর বিষাক্ত লালা স্নায়ুতন্ত্রকে আঘাত করে৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মানুষটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে৷
ছবি: imago/OceanPhoto
লাবা সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে এই মাকড়সাদের পাওয়া যায়৷ এ ধরনের মাকড়সার বিষ মাংসপেশী ও শাসতন্ত্রকে অচল করে দেয়৷ আর বিষ যদি হৃদযন্ত্রে ঢুকে পড়ে তাহলে নির্ঘাত মৃত্যু৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Ianmacm
প্রটোপ্যালিথোয়া
এটি এক ধরনের সামুদ্রিক ফুল, যা দেখতে অনেকটা শামুকের খোলের মত৷ এই ফুল থেকে নিঃসৃত ০.০২ মিলিগ্রাম বিষ ৭০ কেজি ওজনের মানুষকে মেরে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট৷ হাওয়াই-এর আদিবাসীরা এই বিষ শিকারের জন্য বল্লমের মাথায় লাগায়৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Nick Hobgood
ডেথস্টকার কাকড়া বিছা
সবধরনের কাকড়া বিছা মানুষের জন্য হানিকর নয়৷ তুরস্ক, আরব উপত্যকা এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে এদের বসবাস৷ পটাসিয়াম সায়ানাইডের চেয়ে ১৮ গুণ বেশি শক্তিশালী এই কাকড়া বিছা’র বিষ৷