বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলেকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার আন্দোপান্ত তুলে ধরেছেন এই অ্যাথলেট৷
মোল্লাই অভিযোগ করেন, গত মাসে অনুষ্ঠেয় টোকিওর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাকে ইসরায়েলের সাগি মুকির সঙ্গে যেন ফাইনালে খেলতে না হয় সেজন্য সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়৷ এই নির্দেশ মান্য না করলে আমি আমার দেশে ফিরতে পারার এমন কোনো গ্যারান্টি ছিল না৷''
ইসরায়েলের প্রতিপক্ষদের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে হেরে যেতে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের অ্যাথলেটদের অলিখিতভাবে আদেশ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে মোল্লাই বলেন, এটি লিখিত কোনো আইন না হলেও কর্তৃপক্ষ আমাদের এটা করতে বলে এবং আমরা তা পালন করি৷
মোল্লাই জানান, তিনি সেমিফাইনালে হেরেছিলেন, কারণ তিনি বেশ চাপে ছিলেন৷ ‘‘বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ আমাকে, আমার কোচকে ডেকেছিল এবং বলেছিল যে আমার কাছে তারা... আমাকে কি করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল..কিন্তু তার আগে আমি দেখিয়েছিলাম আমি যে কাউকেই মারতে পারি৷ কিন্তু ওই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমি আমার পরিবার ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজেকে হারিয়ে ফেরি, আমি ঠিকমত লড়াই করতে পারিনি এবং হেরে যাই৷''
৭০-এর দশকে শিয়া অধ্যুষিত ইরানে মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইরানের জনগণ৷ সেই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় নেতা ইমাম খোমেনী ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থান ঘটান৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemiইরানের শাসক রেজা শাহ পাহলভির একনায়কতন্ত্র ও অত্যাধিক আমেরিকাপ্রীতিকে বিপ্লবের বীজ বপনের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷ ইরানের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারেনি দেশটির জনগণ৷ সে কারণেই খোমেনিকে সমর্থন দিয়েছেন হাজারো জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collectionইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভি৷ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্রের বংশধর ছিলেন তিনি৷ তাঁর বংশ আড়াই হাজার বছরের পুরোনো পারস্য রাজতন্ত্রের ধারক ছিল৷ ১৯৫৩ সালে জনভোটে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে হটিয়ে ব্রিটিশ ও মার্কিন মদতে সর্বময় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করেন রেজা শাহ পাহলভি৷ ৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ছবি: picturealliance/AP Photoঅ্যামেরিকার পাপেট বা পুতুল বলে পরিচিত ছিলেন রেজা শাহ পাহলভি৷ তাঁর শাসনামলে ইরানের সংস্কৃতিগত সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও পরিলক্ষিত হচ্ছিল৷ বিশেষ করে তেল ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কোম্পানি৷ সংস্কৃতিগত অবক্ষয়ে ধর্মপ্রাণ ইরানি মুসলমানদের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/H. Vassal৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তাঁর নির্বাসিত জীবন শেষে ইরানে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন৷ খোমেনি ছিলেন ইরানের ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৭৮ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত ছিলেন৷ পরে ইরাক থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়৷ তখন তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় নেন এবং পরে ইরানের বিপ্লবে ভূমিকা রাখেন৷
ছবি: Imago/Zuma/Keystone১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তেহরানে শাহবিরোধী এক বিশাল জনসমাবেশ হয়৷ সেদিন শাহের বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারীকে৷ সেই সমাবেশে ৬০-৭০ লাখ জনসমাগম হয়৷ ইরানের বিপ্লবের পর সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নাম দেওয়া হয়৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পালিয়ে যান শাহ৷ এর আগে জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ৪ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শাপর বখতিয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ঘোষণা করেন৷ শাহ পালিয়ে পরিবারসহ তিনি মিশরে চলে যান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসেই নির্বাসিত খোমেনিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান শাপর বখতিয়ার৷ ১৫ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন খোমেনি৷ সেই সময় বিমানবন্দরে লাখো লোক তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে শাহের ক্ষমতাসীন প্রশাসনকে হটানো হয়৷ সেই সময় ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতা হিসেবে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খোমেনি৷ এরপর থেকেই ১১ ফেব্রুয়ারিকে ইরানের বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
ছবি: atraknews.comইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ৩০ মার্চ দেশটিতে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন৷ সেই সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল৷ এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi সেমিফাইনালে হেরে গিয়ে আর ইরানে ফিরে যাননি মোল্লাই৷ দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে জার্মানি এসেছেন তিনি এবং দেশটির এসলিংগেন ১৯৮৪ ক্লাবের হয়ে জার্মানির বুন্দেসলিগা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন৷
নতুন জুডো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইসরায়েলের সাগি মুকি সম্পর্কে মোল্লাই বলেন, সে আমার বন্ধু এবং আমি আশা করি একদিন আমরা এই বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে এটিকে ভাগ করে নিতে সক্ষম হব, কে জয়ী হলো সেটা বড় কথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্ধুত্ব৷
পরবর্তী অলিম্পিকে জুডোতে স্বর্ণপদক জেতাই তাঁর মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মোল্লাই৷ আগামী বছর টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক জুডো ফেডারেশন (আইজেএফ) তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি৷
ফরিদ আশরাফিয়ান, চাক পেনফোল্ড/এসআই