প্রায় দু’মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ইটালিতে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইয় জং গিল৷ দক্ষিণ কোরিয়ার একজন আইনজীবী কিম মিন-কি বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জনান৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোমের দূতাবাস থেকে পালিয়ে ইটালি সরকারের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন এ কূটনীতিক৷ তবে উত্তর কোরিয়ার এ রাষ্ট্রদূতের আশ্রয় চাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছে ইটালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনজীবী কিম মিন-কি জানান, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে রোমে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত এ রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ গত নভেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ নভেম্বর মাসের প্রথম দিকেই তিনি পরিবারসহ পালিয়ে যান৷ তবে নিখোঁজ রাষ্ট্রদূতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি৷ দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমে রাষ্ট্রদূত ইয় জং গিলের আশ্রয় চাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরই গণমাধ্যমের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন এ আইনজীবী৷
সৌলের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, রোমে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পরিবারসহ ইউরোপের একটি দেশে আশ্রয় চেয়েছেন৷ ইয়ংআং ইলবো নামে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত ইয় জং গিলকে তাঁর মেয়াদ শেষে ডিসেম্বর মাসে দেশে ফেরত আসতে বলা হলে তিনি ইউরোপের একটি দেশে পরিবারসহ আশ্রয়ের আবেদন করেন৷
পত্রিকাটি আরো বলছে, আশ্রয় আবেদনের পর এ রাষ্ট্রদূতকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিয়েছে ইটালি৷ তবে এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই জানিয়ে ইটালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উত্তর কোরিয়া নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাবে বলে জানিয়েছে৷এর আগে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত দক্ষিণ কোরিয়ায় আশ্রয় চেয়েছিলেন৷
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷