ইটালির ম্যাগনা গ্রেটসিয়া এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মিলেছে৷ এই এলাকাতে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকে প্রথমবার পা রেখেছিলেন গ্রিকরা৷
বিজ্ঞাপন
ইটালির দক্ষিণাঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ মিলেছে৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, এগুলি আসলে গ্রিকদের তৈরি ‘প্রোটো টেম্পল’৷ ইটালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, ভেলিয়া এলাকায় একটি রঙ করা প্রাচীর এবং শিরোস্ত্রাণগুলির সন্ধান মিলেছে৷ রোমান সভ্যতার জন্মের সময় গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর ছিল এই ভেলিয়া৷
বর্তমানে ভেলিয়া সালেরনো প্রদেশের আসেয়া শহরের অংশ৷ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সেরা-সংরক্ষিত প্রাচীন গ্রীক মন্দিরগুলির জন্য বিখ্যাত পেইস্টুম৷ সেই পেইস্টুম থেকে ৪০ কিমি (২৫ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এটি৷
হারিয়ে যাওয়া পম্পেইর দিনগুলো
২০০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির লাভায় ঢেকে যায় প্রাচীন রোমান নগরী পম্পেই৷ তবে থ্রিডি প্রযুক্তিতে সেই শহরের জীবনযাত্রা দেখার সুযোগ মিলছে প্যারিসে৷
ছবি: Colourbox
সময়ের পিঠে অতীতে ভ্রমণ
পম্পেইর রাস্তায় খেলছে শিশুরা৷ অভিজাত কোনো নারী হয়তো বেরিয়েছেন ভ্রমণে৷ ৭৯ সালের কোনো এক বিকেল হয়তো এমনই ছিল পম্পেইতে৷ প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শহরের খ্যাতি ছিল তার৷ ভিসুভিয়াসের পাদদেশে সেখানকার উর্বর মাটিতে আঙ্গুরের চাষ হতো৷ সমুদ্রের তীর ঘেঁষে মনোরম পরিবেশে থাকতেন শহরের অনেক বাসিন্দা৷
ছবি: GEDEON Programmes
বিলাসী নগর
৬০ হেক্টরজুড়ে ছিল পম্পেইর বিস্তৃতি৷ নগরবাসীর নিরপত্তায় ছিল আটটি ফটক আর ১১ টি ওয়াচ টাওয়ার৷ অভিজাতদের জন্য ছিল উষ্ণ আর শীতল জলের সুইমিং পুলের ব্যবস্থা৷ ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য থিয়েটার, খেলাধুলার স্টেডিয়াম৷ শহরের কেন্দ্রে ছিল জুপিটারের মন্দির৷
ছবি: picture-alliance/Jens Köhler
দৃষ্টিনন্দন ভবন
২০০০ হাজার বছর আগের পম্পেইর প্রচলিত বাড়িগুলো দেখতে এমনই ছিল৷ ধনীরা অবশ্য আরো বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করতেন৷ কয়েকতলা ভবনের মেঝে আর দেয়াল সুসজ্জিত ছিল মোজাইক পাথরের ম্যুরালে৷
ছবি: Beaux-Arts de Paris, Dist. Rmn-Grand Palais/image Beaux-arts de Paris
রহস্যজনক বাড়ি
পম্পেইর অক্ষত স্থাপনাগুলোর একটি এটি৷ ওয়াইন ও আনন্দের দেবতা ডায়োনিসাসের পূজা হতো এখানে৷ তবে ১৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে ডায়োনিসাসের উৎসব বাতিল করে সেনেট৷ যদিও গোপনে ঠিকই উদযাপন চলত৷
ছবি: picture-alliance
দেবী ডায়নার আশীর্বাদ
পম্পেইর সব নাগরিক যে স্বচ্ছল ছিলেন তা নয়৷ কৃষক আর বেকারি কিংবা মিলের শ্রমিকরা দরিদ্রের জীবনই যাপন করতেন৷ ছবির এই ভাস্কর্যটি দেবী ডায়নার৷
পুননির্মাণ
৭৯ খ্রিষ্টপূর্বে পম্পেই পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার ১৭ বছর আগে আরো একবার জেগে উঠেছিল ঘুমন্ত ভিসুভিয়াস৷ তখনো অনেক ভবন ধসে পড়েছিল৷ পরবর্তীতে সেগুলো আরো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়৷ তখন কে ভেবেছিল তাদের এই নগরী কয়েক বছরের মাথায় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে!
ছবি: Colourbox
বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা
২৪ আগস্ট ভিসুভিয়াসের লাভার উদগীরণ ঘটলো৷ কাদা আর পাথরের স্রোত নেমে এলো পম্পেইর উপরে৷ প্রস্তরখণ্ডে চাপা পড়ে কিংবা ছাইয়ে দম বন্ধ হয়ে মারা গেলেন অনেকে৷ যারা সেখান থেকে কোনোরকমে বাঁচতে পারলেন তাদের অনেকের সমাধি ঘটলো জ্বলন্ত লাভার নীচে৷ পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ ছিল সেটি আজও টের পাওয়া যায় ভাস্কর্যে পরিণত মানুষগুলোকে দেখে৷
ছবি: picture-alliance/C. Dixon
হারিয়ে যাওয়া নগরী
পম্পেইর ২০ হাজার বাসিন্দার দুই হাজার শেষ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন৷ তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন অন্য শহরগুলোতে৷ ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতায় বিস্মৃত হলো পম্পেই৷ ১৫৯৪ সালে খাল খনন করতে গিয়ে শ্রমিকরা প্রাচীন শিলালিপি আর মূর্তি খুঁজে পান৷ তারও ২০০ বছর পর স্পেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের অধীনে প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়৷
ছবি: Parco Archeologico di Pompei, Archivio fotografico
অক্ষত প্রাচীন নগরী
সাত মিটার বা ২৩ ফুট ছাইয়ের স্তর সরিয়ে পম্পেইকে তুলে আনার মূল কাজ শুরু হয়েছিল ১৮৬০ সালে৷ এমনকি এখনো পম্পেইর অনেকটাই চাপা পড়ে আছে৷ তবে ভিসুভিয়াসের লাভায় পম্পেই বলতে গেলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণার জন্য অক্ষত এক নগরী হিসেবেই টিকে আছে৷
ছবি: GEDEON Programmes
ত্রিমাত্রিক পম্পেই
লাভায় চাপা পড়া পম্পইকে নতুন করে দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে দ্য গ্র্যান্ড প্যালেস মিউজিয়াম ইন প্যরিস৷ বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শনতো আছেই, সাথে ত্রিমাত্রিকে প্রাচীন শহরটি ঘুরে দেখতে পারছেন দর্শনার্থীরা৷ এক জুলাই থেকে শুরু হয়ে প্রদর্শনী চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷
ছবি: GEDEON Programmes/Stéphane Compoint
10 ছবি1 | 10
গ্রেটার গ্রিস অর্থাৎ ম্যাগনা গ্রেটসিয়ার অংশ ছিল ভেলিয়া এবং পেইস্টুম৷ খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকে গ্রিসের অসংখ্য মানুষ এখানে বসতি গড়েছিল৷ হেলেনিক সংস্কৃতির বিকাশে এই গ্রিক বসতির জরুরি ভূমিকা রয়েছে৷ প্রাচীন রোমান সভ্যতাও বিস্তার লাভ করেছিল৷
৫৪০ খ্রিস্টপূর্বে ভেলিয়া শহরের জন্ম৷ প্রখ্যাত দার্শনিক পারমিনিদেস এবং জেনোর বাসভূমি ছিল এই ভেলিয়া৷
স্টেট মিউজিয়ামের মাসিমো ওসান্না জানান, টিরেনিয়ান সাগরের কাছে প্রাচীন আমলে বডসড় একটি নৌ-যুদ্ধ হয়েছিল৷ এরপর দেবী অ্যাথেনাকে যে নৈবেদ্য ও উপহার দেওয়া হয়েছিল, খুব সম্ভবত তারই ধ্বংসাবশেষ মিলেছে ভেলিয়ায়৷ গ্রিকদের যুদ্ধ এবং জ্ঞানের দেবী হিসেবে পরিচিত অ্যাথেনা৷
যদিও এখন এটি ধ্বংসাবশেষ৷ প্রাচীন আমলের ‘অ্যাক্রোপলিস’ ছিল এটি৷ উঁচু সেই শহর থেকে দেখা যেত সমুদ্রের নীল জলরাশি৷
প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বিনিয়োগের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন ইটালির সংস্কৃতি মন্ত্রী দারিও ফ্রান্সশেৎসকিনি৷ খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলির কথাও বলেন তিনি৷ তার কথায়, এর ফলে ভূমধ্যসাগরীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি জানা যাবে৷