নব্য-ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে পরিচিত এমএসআই-এর সাবেক প্রধান কার্যালয়ের সামনে গত রোববার সমাবেশ করেছে কট্টর ডানপন্থিরা৷ এমএসআই থেকেই পরবর্তীতে ব্রাদার্স অব ইটালির উত্থান হয়, যার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷
দক্ষিণ পূর্ব ইটালিতে নব্য-ফ্যাসিস্ট তিন নেতার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশ আয়োজন হয়৷ তাদের দুইজনকে গুলি করে হত্যা করেছিল সন্দেহভাজন কট্টর বামপন্থি বিদ্রোহীরা৷ এর ফলে সৃষ্ট দাঙ্গায় পুলিশের গুলিতে তৃতীয়জনের মৃত্যু হয়৷
রোববারের সমাবেশের ভিডিওতে অংশগ্রহণকারীদের‘ফ্যাসিস্ট কায়দায়’ স্যালুট ও স্লোগান দিতে দেখা যায়৷ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন সরকারবিরোধীরা৷ মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত অ্যাকশন পার্টির প্রধান কার্লো ক্যালেন্ডা বলেন, ‘‘এটি ইউরোপীয় গণতন্ত্রের জন্য অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য৷''
নব্য-ফ্যাসিস্টরা তাদের পূর্বসুরীদের স্মরণে প্রতিবছর এই আয়োজন করলেও সেখানে ফ্যাসিস্ট ভাবধারার বহিঃপ্রকাশের বিরোধিতা করে আসছে বিভিন্ন দল৷ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা এলি শ্লাইন বলেন, ‘‘দেখে মনে হয় এটা ১৯২৪ সাল৷’’ ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনির নির্বাচনে জয়লাভ ও বহুদলীয় গণতন্ত্র নিষিদ্ধের বছর ছিল ১৯২৪৷ শ্লাইন বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য৷ সংবিধান অনুযায়ী নব্য-ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে৷''
কালে কালে জাতীয়তাবাদ
কোনো দেশ বা জাতির প্রতি আনুগত্য যেমন হতে পারে জাতীয়তাবাদ, তেমনি যে কোনো কিছুর প্রতি আনুগত্য বা বিরাগও হতে পারে এর অংশ৷ কখনোবা ক্ষমতার উত্থান-পতনের সঙ্গে রচিত হয়েছে জাতীয়তাবাদের ইতিহাস৷
ছবি: Imago/IPON
নাৎসিতে পিষ্ট ইহুদি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর চালানো হয় গণহত্যা৷ হিটলারের নেতৃত্বে জার্মান নাৎসি বাহিনী ইউরোপের ইহুদি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে৷
ছবি: Getty Images/AFP
মুসোলিনি ফ্যাসিবাদ
‘ইটালির ফ্যাসিবাদের জনক’ বলা হয় বেনিতো মুসোলিনিকে৷ ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টির এই নেতা ১৯২২-১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ ১৯২৫ সালে গণতন্ত্রপ্রথা বাতিল করে চালু করেন একনায়কতন্ত্র এবং পুলিশের সহায়তায় দমন করনে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের৷
ছবি: AP
ট্রাম্পের দেয়াল
মেক্সিকো থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের সন্তানদের আলাদা করার ঘোষণা দিয়ে সমালোচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
নিন্দিত মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলে দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে৷ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পরিবর্তন আনতে মোদী সরকার হিন্দুদের উৎসাহিত করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
এরদোগানের রোষানলে
২০১৬ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থান সামাল দেয়ার পর আরো শক্তি সঞ্চয় করা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সরকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে, সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষকে এবং বন্ধ করে দেয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে শঙ্কা
উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন দেশে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে৷ অনেকই মনে করেন ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব থেকে এসব ঘটনা ঘটছে৷
ছবি: Reuters/M. Mitchell
উগ্র বামপন্থা
ইউরোপে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ইউরোপলের এক প্রতিবেদনে বামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টি সামনে আসে৷ ইটালি, গ্রিস ও সুইডেন, জার্মানির কয়েকটি স্থানে নৈরাজ্য সৃষ্টিতে উগ্র বামপন্থিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/N.Liponne
সতর্ক ইইউ
ইউরোপে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান টের পেয়ে জনগণকে নাৎসিবাদ ও স্টালিনবাদের নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২০১৭ সালে বিবৃতি দিয়েছেন ইইউ-র নেতারা৷ উগ্র জাতীয়তাবাদ, বিদেশিদের সম্পর্কে অহেতুক ভয় সৃষ্টি এবং ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: DW/T. Sparrow
8 ছবি1 | 8
যুদ্ধ পরবর্তী ইটালির সংবিধান মুসোলিনির দলকে নিষিদ্ধ করে৷ কিন্তু কট্টর ডানপন্থিরা একই ভাবধারায় ভিন্ন নামে নতুন নতুন দলের আত্মপ্রকাশ করেছে৷
নব্য-ফ্যাসিস্টদের সমাবেশ নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদার ব্রাদার্স অব ইটালি৷ তবে কিছুটা মধ্যপন্থি হিসেবে পরিচিত ফোর্ৎজা ইটালিয়ার নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্টনিও টাজানি বলেছেন, ‘‘একনায়কতন্ত্রের যেকোন উদযাপন নিষিদ্ধ করা উচিত৷'' তিনি বলেন, ‘‘ইটালিতে আইনে বলা আছে আপনি ফ্যাসিবাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারবেন না৷''
মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সাম্য ও গণতন্ত্র৷ ইউরোপীয় মূল্যবোধের কথা বললে এমন সব চেতনাগত ধারণা উঠে আসে৷ কিন্তু সবাই কি এই মূল্যবোধ ধারণ করে? মোটেও তা নয়৷
পুরুষরা নারীদের চেয়ে ভালো রাজনীতিবিদ!
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন ঘিরে এখন আলোচনায় ইউরোপের মূল্যাবোধের বিষয়টি৷ কিন্তু এর আসল অর্থ কী? ১০০ জন ইউরোপিয়ানের মধ্যে কতজন এই মূল্যবোধে বিশ্বাসী, কতজন নন? পুরো ইউরোপের কয়েক হাজার নাগরিকের উপর এ নিয়ে একটি জরিপ চালানো হয়েছে৷ তাতে উঠে এসেছে, ১০০ জনের মধ্যে ২৯ জনই বিশ্বাস করেন, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা ভালো রাজনীতিবিদ৷
রাজনৈতিক সহিংসতা পছন্দ না
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশই রাজনৈতিক সহিংসতা আর ঘুস আদান-প্রদানের বিরোধী৷ ইউরোপীয় মূল্যবোধ নিয়ে এই জরিপে ১৪ টি দেশের নাগরিকদের তথ্য এসেছে৷ এর মধ্যে আছেন অস্ট্রিয়া, বেলারুশ, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, জার্মানি, আইসল্যান্ড, পোল্যান্ড, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের অধিবাসীরা৷
ভিডিও নজরদারি
জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকের বেশি মানুষ মনে করেন, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে সরকার নজরদারি ক্যামেরা বসাতে পারে৷ অর্ধেকের কাছাকাছি এর বিরোধী৷ তবে পোল্যান্ড, স্লোভেনিয় ও ক্রোয়েশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ ভিডিও নজরদারির বিরোধী৷
স্বর্গ-নরকে বিশ্বাস
১০০ জনের ৩৮ জন স্বর্গে বিশ্বাস করেন৷ এই ৩৮ জনের ৩৩ জন ধর্ম পালন করেন৷ বাকিরা নাস্তিক অথবা নিজেদের ধর্মানুরাগী মনে করেন না৷ ১০০ জনে ২৯ জন নরকে বিশ্বাস করেন৷
সমকামীরা যখন বাবা-মা
সমকামীরা বাবা-মায়ের ভূমিকায় কেমন হবেন তা নিয়ে মত পার্থক্য আছে দেশভেদে৷ আইসল্যান্ডে ১০০ জনের ৮৮ জন মনে করেন নারী-পুরুষ বাবা-মায়ের মতো সমকমীরা সন্তান পালন করতে সক্ষম৷ তবে রাশিয়ায় এমনটা মনে করেন ১০ ভাগ মাত্র৷ যদিও সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণা বলছে সমকামী বাবা-মায়েরা সন্তান পালনে খারাপ নন৷
মুসলিম প্রতিবেশী চান না সবাই
প্রতিবেশী হিসেবে খ্রীষ্টানে সমস্যা বোধ করেন স্বল্প সংখ্যক মানুষ৷ অন্যদিকে এক চতূর্থাংশের বেশি বলেছেন, তারা প্রতিবেশী হিসেবে অভিবাসীদের পছন্দ করেন না৷ একই কথা প্রযোজ্য মুসলিমদের জন্য৷ ১০০ জনে ২৫ জনই মুসলিম প্রতিবেশী অপছন্দ করেন৷ ইহুদিদের ক্ষেত্রে এই হার ১২ আর প্রতিবেশী হিসেবে খ্রীষ্টান অপছন্দ পাঁচ জনের৷
ইউরোপীয় মুল্যবোধের ধারণা জরিপ
তথ্যগুলোর সবই উঠে এসেছে ‘ইউরোপিয়ান ভ্যালুস স্টাডি’ নামের একটি গবেষণা থেকে৷ এ গবেষণার মাধ্যমে ইউরোপীয়দের মূল্যবোধ, রাজনীতি, ধর্মসহ বিভিন্ন বিষয়ের ভাবনা নিয়ে প্রতি দশ বছরে কয়েকশ’ প্রশ্ন করা হয়৷ নতুন জরিপটি শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে৷ ১৬ টি দেশ থেকে এরই মধ্যে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে৷ সেখানে প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েছেন ২০ হাজার নাগরিক৷ আরো ১০ টি দেশে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে৷