বিতর্কিত এক আইনের অনুমোদনের পর ইটালিতে সমকামীদের মধ্যে ‘পার্টনারশিপ' বা যৌথজীবন বৈধতা পেয়েছে৷ যদিও ক্যাথলিক চার্চ এবং আরো কয়েকটি গ্রুপ শক্তভাবে এর বিরোধিতা করেছিল৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহ থেকে ইটালির টাউনহলগুলোতে সমকামীদের মধ্যে সম্পর্ক নিবন্ধনের আবেদন জমা পড়তে শুরু করেছে৷ ইতিমধ্যে অনেকেই নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কের আইনি বৈধতা পেয়েছেন৷ যদিও এটি বৈধ হওয়ার পর সবার আগে কারা তাঁদের সম্পর্ক নিবন্ধন করেছেন সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে৷
কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রথম সমকামী দম্পতি হিসেবে হেলেন এবং দেবোরাহ ২৪শে জুলাই এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার ‘সিভিল ইউনিয়নের' আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন৷ ইটালির শহর বোলোগনার বাসিন্দা আলোচিত দম্পতি৷ তবে ইটালির দৈনিক রিপাবলিকা জানিয়েছে, নতুন আইনের আওতায় গত ২০ জুলাই প্রথম নিবন্ধনটি হয়ে গেছে৷ মিলানের একটি হাসপাতালে এক নারী তার অসুস্থ বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক আইনের চোখে বৈধ করে নেন৷
যেসব দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৩টি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৪টি দেশ ইউরোপের৷ তালিকায় এশিয়ার কোনো দেশ নেই৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নেদারল্যান্ডস
২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নেদারল্যান্ডসে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ছবিতে সমকামী দম্পতিকে বিয়ের পর কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার ১০ বছর পূর্তিতে তাঁরা বিয়ে করেন৷
ছবি: Evert Elzinga/AFP/Getty Images
ইংল্যান্ড
২০১৩ সালের জুলাইতে সমকামী বিয়ে বৈধ করে আইন পাস হয়৷ এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এলটন জন তাঁর সঙ্গীকে বিয়ে করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
ফ্রান্স
দেখছেন দেশটির প্রথম সমকামী জুটির বিয়ের ছবি৷ ২০১৩ সালের মে মাসে ফ্রান্সে এই বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters
লুক্সেমবুর্গ
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেয়া হয়৷ এর চার মাস পর সঙ্গীকে বিয়ে করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাভিয়ের বেটেল (ডানে)৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ড
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আয়ারল্যান্ডে ২০১৫ সালের মে মাসে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Crawley
ইউরোপের অন্যান্য দেশ
২০০৩ সালে বেলজিয়াম, ২০০৫ সালে স্পেন, ২০০৯ সালে নরওয়ে, একই বছর সুইডেন, ২০১০ সালে পর্তুগাল, একই সময়ে আইসল্যান্ড, ২০১২ সালে ডেনমার্ক, ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ড এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গ্রিসে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Blackwood
দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৬ সালে থেকে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ একই সময় থেকেই তাঁরা সন্তানেরও অভিভাবক হওয়ার অনুমতি পায়৷
ছবি: dapd
আর্জেন্টিনা
ল্যাটিন অ্যামেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ২০১০ সালে এরকম বিয়ের বৈধতা দেয় আর্জেন্টিনা৷ এরপর ঐ মহাদেশের ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও কলম্বিয়ায় সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রাজিল
ল্যাটিন অ্যামেরিকার তৃতীয় দেশ হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ব্রাজিলে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ ছবিটি ঐ বছরের ৮ ডিসেম্বর তোলা৷ সেদিন প্রায় ১৩০ সমকামী জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ এক অনুষ্ঠানে এতজন সমকামীর বিয়ে করার ওটিই ছিল তখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্র
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করে৷ উত্তর অ্যামেরিকার ক্যানাডা ও মেক্সিকোর পাঁচটি রাজ্যেও এখন এই বিয়ে বৈধ৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নিউজিল্যান্ড
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের একমাত্র দেশ যেখানে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ছবিতে নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন থেকে অকল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইটে এমন একটি বিয়ে পড়ানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
উল্লেখিত, বিতর্কিত আইনটি গত মে মাসে ইটালির সংবিধান অনুমোদন করে৷ তবে রোমান ক্যাথলিক চার্চের বাধার কারণে আইনটি গত কয়েকবছর আটকে রেখেছিল৷ এটি যাতে অনুমোদন না দেয়া হয়, সেজন্য চলতি বছর শুরুতে রোমে বড় ধরনের বিক্ষোভেরও আয়োজন করা হয়েছিল৷
আইনি অনুমোদনের পর রিপাবলিকা পত্রিকাকে একজন আর্চ বিশপ জানিয়েছেন, এটি ‘‘ক্রিপিং ফ্যাসিজমের'' এক উদাহরণ কেননা ‘‘দেশের একটি বড় অংশের আপত্তি সত্ত্বেও'' আইনটি পাস করা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, সমকামীদের মধ্যকার সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গতবছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার আদালতের সমালোচনার মুখে পড়ে ইটালি৷ এখন এ ধরনের সম্পর্কের বৈধতা দেয়ায় ইউরোপের আর কোনো বড় দেশ বাকি নেই যেটি সমকামীদের সম্পর্ককে আইনি বৈধতা দেয়নি৷ তবে এই বৈধতা বিয়ের মতো সমান অধিকার নিশ্চিত করে না৷ ফলে সম্পর্কের আইনি বৈধতা থাকলেও সন্তান দত্তক নিতে পারবে না সমকামী দম্পতি৷