মোরেনো ফিলান্ডি একটি গাড়ির ওয়ার্কশপের মালিক৷ কিন্তু অবসর সময়ে তৈরি করেন এমন সব গাড়ি যেগুলো দেখলে জেমস বন্ড কিংবা ব্যাটম্যানের জিভেও জল আসবে৷
বিজ্ঞাপন
মোরেনো ফিলান্ডির বাস ইটালির বোলোনিয়া শহরের উত্তরে অ্যাপেনাইন পর্বতাঞ্চলের একটি ছোট শহরে৷ পাহাড়ি এলাকার সার্পেন্টাইন রাস্তা, সেই রাস্তায় চলেছে মোরেনো ফিলান্ডির তৈরি এক অদ্ভুত গাড়ি৷ মোরেনো নিজে গাড়ির কোচের ফিটার ও গাড়ি-পাগল৷ তাঁর চিরকালের স্বপ্ন একটি সুপার স্পোর্টস কার-এর, অথচ কেনার সম্বল নেই৷ তবে গাড়িটা ঠিক কেমন হবে, সেটা তিনি ভালোভাবে জানেন৷ তাই গত চার বছর ধরে কাজ করছেন তাঁর ‘ফিলান্ডি এভার এস' গাড়িটি নিয়ে৷
ফিলান্ডির বক্তব্য হলো: ‘‘কীভাবে জানি না, আমি আমার নিজের গাড়ি তৈরি করতে শুরু করি৷ আমার নিজের যা ভালো লাগে, ঠিক সেইভাবে একটা গাড়ি তৈরি করার মজাই আলাদা, দারুণ একটা স্বাধীনতার অনুভূতি৷''
ট্রেডমার্ক: সিংহের মাথা
ফন্টানেলিচে মিউনিসিপালিটিতে মোরেনোর গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ৷ ‘এভার এস'-এর বডির প্রতিটি খুঁটিনাটি তিনি নিজে ডিজাইন করেছেন এবং অ্যালুমিনিয়ামের পাত কেটে তৈরি করেছেন৷ তাঁর ট্রেডমার্ক হলো: সিংহের মাথা৷ তাঁর এই মডেলটিতে তথাকথিত গাল-উয়িং দরজা আছে, যেমন পঞ্চাশের দশকের মার্সিডিজ ৩৩০ এসএল স্পোর্ট মডেলে থাকতো৷ বাকি ডিজাইনটা পুরোপুরি মোরেনোর৷ মোরেনো বলেন, ‘‘এটা আমার নিজস্ব স্টাইল, তা কারো ভালো লাগুক আর না লাগুক৷ আমার নিজের ভালো লাগলেই হলো৷ আমার কাছে এটা একটা ভাষ্কর্য এবং এটা সম্পূর্ণ এককই থাকবে৷ আমিতো আর গাড়ি নির্মাতা নই, আমি শুধু এই সব ভাষ্কর্য গড়ি৷''
শিক্ষার্থীদের গাড়ি তৈরির প্রতিযোগিতা
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরি করেছিলেন৷ গত বছর প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
পরিবেশবান্ধব গাড়ির প্রতিযোগিতা
২০১৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় ‘ইকোরান বাংলাদেশ ২০১৩’ নামে পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরির একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ জাপান সরকারের উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা জাইকা ও বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে৷
ছবি: Mazadur Rahman Masum
জাপানের প্রতিযোগিতা ইকোরান
১৯৮৩ সাল থেকে জাপানে ‘ইকোরান’-এর আয়োজন হয়ে আসছে৷ এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য এমন গাড়ি তৈরির উপায় বের করা যেটা কম তেল খরচ করে বেশি দূর যেতে পারবে৷ উপরের ছবিটি বাংলাদেশে ইকোরান প্রতিযোগিতায় উদ্বোধনীর৷
ছবি: Mazadur Rahman Masum
চার চাকার সেরা ‘নাইপটা ৮’
প্রতিযোগিতার চার চাকা বিভাগে সেরা হয় বুয়েটের নাইপটা ৮৷ প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিজেদের উদ্ভাবিত গাড়ি সম্পর্কে তাউসিফ বলেন, ‘‘গাড়ির বডি তৈরি করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিলের ফাঁপা পাইপ দিয়ে৷ চেসিস তৈরিতে অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যালভানাইজিং মাইল্ড স্টিল৷ আর ইঞ্জিন হিসেবে যেহেতু ব্যবহার করা হয়েছে মোটরবাইকের ইঞ্জিন, তাই জ্বালানি খরচ হবে কম৷’’
ছবি: Mazadur Rahman Masum
তিন চাকার সেরা ‘মার্কাস’
তিন চাকা বিভাগে সেরা হয় বুয়েটেরই মার্কাস৷ এই দলের সদস্য মাজেদুর রহমান মাসুম ‘বুয়েট টেকনোলজি রিভিউ’-তে একটি লেখায় জানান, ‘‘মার্কাসের মেইন ফ্রেম বানানো হয়েছে খুবই হালকা এসএস স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ফাঁপা কাঠামো ব্যবহার করে৷ ইঞ্জিন হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়ালটনের ১০০সিসি ইঞ্জিন৷ গাড়ির বাহ্যিক কাঠামো বানানো হয়েছিল রেক্সিন এবং এসএস ফাঁপা পাইপের মাধ্যমে৷’’
ছবি: Mazadur Rahman Masum
অন্যান্য বিজয়ী
চার চাকা বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছিল চুয়েটের ‘প্রোটোটাইপ’ আর তৃতীয় স্থান ছিল রুয়েটের ‘গ্রাফিঞ্জ’-এর৷ তিন চাকা বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছিল রুয়েটের ‘অ্যাভেঞ্জারস’ আর তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল চুয়েটের ‘এক্সআর ওয়াগন’৷ বুয়েট, চুয়েট, রুয়েট ছাড়াও কুয়েট, এমআইএসটি এবং আইইউটি থেকে আসা দলও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল৷
ছবি: Mazadur Rahman Masum
শিল্প গড়ে ওঠেনি
বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর কিছু স্থানীয় কোম্পানি গাড়িগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছিল৷ কিন্তু পরে আর সেই আলোচনা এগোয়নি৷ এর কারণ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের অটোমোবাইল শিল্প আসলে এখনো গাড়ি তৈরির মতো অবস্থায় পৌঁছায়নি৷’’
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ড. মো. এহসান জানান, আগামী বছরের শুরুতে আবারও ইকোরান প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা আছে৷ তবে তহবিল সংগ্রহ করা না গেলে সেটা সম্ভব নাও হতে পারে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
7 ছবি1 | 7
স্বপ্নের গাড়ি...
তাঁর ওয়ার্কশপে মোরেনো সাধারণত অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি সারিয়ে থাকেন৷ অবসর সময়ে তাঁর কাজ হলো নিজের ‘স্বপ্নের গাড়ি' তৈরি করা৷ ১৯৯০ সালের একটি লালরঙা মার্সিডিজ ৫০০ এসএল ছিল মোরেনোর এভার এস মডেলের ভিত্তি৷ তবে গাড়ির বাইরেটা তিনি পুরোপুরি বদলে দিয়েছেন৷
২০০৮ সালেই তিনি ‘উরাগানো' গাড়িটি তৈরি করেছিলেন, চার বছর ধরে কাজ করে৷ খরচ পড়েছিল মাত্র বারো হাজার ইউরো, যেখানে ফেরারি কিংবা পর্শের কোনো সুপার স্পোর্টস কার কিনতে কয়েক লাখ ইউরো ব্যয় করতে হয়৷ উরাগানোর টপ স্পিড হল ঘণ্টায় ৩৪০ কিলোমিটার৷ ৬০০ অশ্বশক্তির পাওয়ার কিন্তু আসে জাঙ্কইয়ার্ড থেকে তুলে আনা একটি আউডি ভি-এইট ইঞ্জিন থেকে, মোরেনো যাতে একটি ট্রাকের টার্বোচার্জার যোগ করেছেন৷ বাকি সবটাই তাঁর নিজের সৃষ্টি৷
বিক্রির নয়
চালকবিহীন গাড়ি
গুগল সহ কয়েকটি কোম্পানি স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি নিয়ে গবেষণা করছে৷ ফলে সামনের দিনগুলোতে রাস্তায় হয়ত চালকবিহীন গাড়ি দেখা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি
গুগলের ‘সেলফ-ড্রাইভিং কার প্রজেক্ট’-এর পরিচালক ক্রিস উর্মসন গুগল ব্লগে জানিয়েছেন, কয়েক বছরের মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রিক গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা করছে তারা৷
ছবি: Getty Images
গবেষণা চলছে
অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে নিজেদের সদর দফতরে পরীক্ষামূলকভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালিয়ে আসছে গুগল৷ তবে গাড়ি নিজে চললেও এখনো সবসময় একজন ড্রাইভার পাশে থাকছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্ঘটনা এড়ানো
সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির স্তূপ এটি৷ চোখে স্পষ্ট দেখতে ব্যর্থ হওয়া সহ নানা কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে৷ তবে গুগল আশা করছে বুদ্ধিমান রোবট দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্সরযুক্ত গাড়ি
গুগল-এর স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে অনেক ধরনের সেন্সর থাকবে৷ যেমন এই লেজার সেন্সরটি রাস্তার ত্রিমাত্রিক ছবি তুলবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
জার্মান প্রযুক্তি
একটু আগে গুগল-এর যে লেজার সেন্সরের কথা বলা হলো, সেটা জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটিও তাদের স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ব্যবহার করছে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লেজার সেন্সর যে ত্রিমাত্রিক ছবি তুলেছে সেটা গাড়িতে থাকা কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিয়েছে৷
ছবি: Universität der Bundeswehr/TAS
৬ডি-ভিশন
ছবির এই বস্তুটি একটি ক্যামেরা৷ গাড়ির উইন্ডশিল্ডের পেছনে লাগানো আছে এটি৷ রাস্তায় যা কিছু ঘটে তার ছবি তোলে এই ক্যামেরা৷ ডাইমলারের একদল গবেষকের ‘৬ডি-ভিশন’ প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবিত এই ক্যামেরা ২০১১ সালে ‘জার্মান ফিউচার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল৷ এর কাজ সম্পর্কে জানা যাবে পরের ছবিতে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
আলোর খেলা
আগের ছবিতে যে ক্যামেরাটি দেখা গেছে সেটির তোলো ছবিগুলো গাড়ির কম্পিউটারে চলে যায়৷ এই ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে সামনে কোনো ঝুঁকি আছে কিনা – তা বুঝতে পারেন চালক৷ এই ছবিতে পথচারীকে কমলা রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ আর সবুজ চিহ্নটি চলমান একটি গাড়ির৷ অর্থাৎ কোনো বিপদ নেই৷ এভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালক ছাড়াই সামনে চলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: Deutscher Zukunftspreis/Ansgar Pudenz
কম্পিউটার নাকি মানুষ?
রোবট চালিত গাড়ি যদি দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে তার জন্য কাকে দায়ী করা হবে? এর নির্মাতা, নাকি সফটওয়্যার প্রোগ্রামারকে৷ নাকি গাড়ির মালিককে? রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের ভবিষ্যতে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
অন্য কাজে
যুদ্ধের সময় পণ্য পরিবহণ কাজে কোনো চালককে কাজে না লাগিয়ে কিংবা পরমাণু দুর্ঘটনার পর সেই বিষাক্ত অঞ্চলে কোনো মানুষকে না পাঠিয়ে সেখানে স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি পাঠানো যেতে পারে৷
ছবি: DW/Fabian Schmidt
9 ছবি1 | 9
বহু মোটরগাড়ির প্রদর্শনীতে মোরেনোর উরাগানো প্রদর্শিত হয়েছে৷ যেমন ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে ২০১০ সালের একটি প্রোটোটাইপ এক্সিবিশনে৷ সেখানে তাঁর এই আজব গাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন অনেকে৷ অথচ মোরেনো বলেন: ‘‘আমি কোনোদিন আমার গাড়ি বিক্রি করার কথা ভাবিনি৷ এই গাড়িগুলো হলো আমার প্যাশন, আমি এগুলোর পিছনে অনেক সময় দিয়েছি৷ সেজন্যই আমি এগুলোকে বিদায় দিতে পারব না৷''
মোরেনো চান তাঁর এভার এস মডেল গাড়িটি লোকের চোখে পড়ুক৷ তাঁর সবচেয়ে মজা লাগে, যখন মানুষজন জিজ্ঞাসা করে, এটা কোন মডেলের গাড়ি! ওদিকে মোরেনো ফিলান্ডি এখনও তাঁর গাড়ি নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন৷ তিনি ড্রয়িং বোর্ডের কাজ জানেন না বলে স্কেচ অথবা কম্পিউটারের বদলে শুধুমাত্র চোখের দেখা দিয়ে গাড়ির ডিজাইন তৈরি করেন৷ সবটাই থাকে তাঁর মাথায়৷
আর বছর খানেকের মধ্যেই এভার এস শেষ হবে৷ অ্যালুমিনিয়ামের পাতটাকে পালিশ করে গাড়িটাকে সিলভার লুক দিতে হবে৷ তারপর আবার ফন্টানেলিচের সবার চোখ যাবে মোরেনো ফিলান্ডির গাড়িটার দিকে৷