ইটালির উত্তরে পাহাড়ে ঘেরা গার্ডা হ্রদ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ৷ অথচ চিরকাল এমনটা ছিল না৷ তার উপর বিশেষ জিনের কারণে সেখানকার অনেক মানুষ দীর্ঘজীবী হয়৷
বিজ্ঞাপন
গার্ডা হ্রদ: যেখানে মানুষ বেশিদিন বাঁচে
03:58
ইটালির উত্তরে গার্ডা লেকের আয়তন প্রায় ৩৭০ বর্গ কিলোমিটার৷ আলপ্স পর্বতের সীমানার পাহাড়ে ঘেরা হ্রদের উত্তর পাড়ের সৌন্দর্য রুক্ষ প্রকৃতি ও ছবির মতো গ্রামগুলির এক অসাধারণ মিশ্রণ৷ অন্যতম পরিচিত শহরের নাম লিমোনে সুল গার্ডা৷ গত শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত শুধু নৌকায় চেপে জেলেদের এই গ্রামে যাওয়া যেত৷
প্রাক্তন আইসক্রিম বিক্রেতা ফ্রাংকো উসারডি সারা জীবনই লিমোনে শহরে কাটিয়েছেন৷ ৭৬ বছর বয়স্ক এই মানুষটি পর্যটকদের প্রথম ঢলের কথা এখনো মনে করতে পারেন৷ ‘‘১৯৩২ সালে মুসোলিনি যখন গার্ডেসেনা নামের পাড়ের রাস্তা তৈরি করিয়েছিলেন, তখনই পর্যটনের উন্নতি শুরু হলো৷ আগে যেখানে লেবুর বাগান ছিল, পঞ্চাশের দশকে সেখানে হোটেল তৈরি শুরু হলো৷''
লিমোনে সুল গার্ডা নাকি পৃথিবীর উত্তরতম প্রান্ত, যেখানে লেবু গজায়৷ কিছু প্রাচীন লেবুর ঝোপ এখনো দেখা যায়৷ লেবু ছাড়াও সেখানকার আকর্ষণ হ্রদের মাছ৷ ভোরেই নানা রকমের মাছ ধরা হয়৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বিশেষ এক জিন শনাক্ত করা হয়, যা তাদের দীর্ঘ আয়ুর কারণ৷ খাদ্যাভ্যাস কি তার অন্যতম কারণ? ফ্রাংকো উসারডি-র ছেলে মারিও বলেন, ‘‘তাঁর রক্তে আরও একটি জিন খুঁজে পাওয়া গেছে, যা রক্ত থেকে ফ্যাট তুলে নেয়৷ ফলে ধমনী ও শিরায় রক্ত সহজেই চলাচল করতে পারে৷ এতে করে আল্সহাইমার বা হার্ট অ্যাটাক এড়ানো যায়৷ এখন গোটা লিমোনে শহরে এবং সম্ভবত গোটা বিশ্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের মধ্যে এই জিন-বিকৃতি দেখা যায়৷''
পর্যটকদের আকর্ষণ করে জার্মানির যে দ্বীপগুলি
জার্মানিতে প্রায় ৮০টি দ্বীপ রয়েছে এবং বেশিরভাগের অবস্থান পূর্বে বাল্টিক সাগর এবং পশ্চিমে উত্তর সাগরে৷ এই ছবিঘরে জার্মানির দ্বীপপুঞ্জের কিছু নমুনা পাওয়া যাক৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
জার্মানির উত্তরে
উত্তরে শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলের কাছে ওয়াডেন সাগরে অবস্থিত উত্তর ফ্রিসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কিছু দ্বীপ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ স্যুল্ট জার্মানি থেকে ডেনিশ উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত৷ এখানকার মানুষরা ইংরেজি, ডেনিশ এবং ডাচ ভাষার মিশ্রণে অদ্ভুত এক আঞ্চলিক ভাষা ‘স্যালরিং’-এ কথা বলে৷
ছবি: Sven Hoppe/AFP/GettyImages
গভীর সাগরের গ্ল্যামার
নিউইয়র্কের হ্যামস্টনস যেমন,জার্মানিতে স্যুল্ট-ও তেমনি দ্বীপ৷ জার্মানির এলিট শ্রেণি এবং পর্যটকরা আসেন রেড ক্লিফ-এর মতো একটি ক্লাবে গ্ল্যামার উপভোগ করতে এবং সেলিব্রেটিদের দেখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুগেন দ্বীপের দুর্লভ সময়
জার্মানির রুগেন দ্বীপের অবস্থান জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বাল্টিক সাগরের কাছাকাছি৷ ২০১৩ সালে এই দ্বীপে এক কোটিরও বেশি মানুষ রাত কাটান৷ এখানে আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত সাগরপাড়ের অবসর যাপন কেন্দ্র সেলিন-এ পর্যটকরা আনন্দের সাথে কনসার্ট উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যযুগীয় উত্তরাধিকার
রাইশেনাউ দ্বীপটির অবস্থান জার্মানির দক্ষিণের সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটানৎস-এর কাছাকাছি৷ এই দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ৭২৪ সালে আর ২০০২ সাল থেকে এটি বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেদারল্যান্ডস-এর উত্তরে
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে সরকারিভাবে বরকুম দ্বীপের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৩৯৮ সালে৷ সে সময় দ্বীপটি ছিলো জলদস্যুদের স্বর্গ৷ বর্তমানে উত্তর সাগরের এই দ্বীপে বসবাস করে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষ৷ হোটেলগুলোর অবস্থান একেবারে সাগরের গা ঘেঁষে৷ ১৮৩০ সাল থেকে এই সমুদ্র সৈকত অবসর যাপন কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
হেলগোলান্ড-এর প্রাকৃতিক টাওয়ার
জার্মানির উপকূল থেকে একমাত্র হেলগোলান্ড দ্বীপে যেতেই নৌকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে৷ পরিবেশ রক্ষার জন্য এখানে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ বালির পাথর ‘টল আনা’ এই দ্বীপের বড় চিহ্ন৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
6 ছবি1 | 6
গার্ডা লেকের উত্তর প্রান্তে অতিথিরা আজ আর শুধু তরুণ ইটালীয়দের টানে আসেন না৷ বিশেষ ধরনের বাতাসের কারণে হ্রদটি সার্ফার ও নৌকাচালকদের স্বর্গ হয়ে উঠেছে৷ কেবেল কার-এ চেপে লেকের অপর প্রান্তে মন্টে বালডো পাহাড়ে চলে যাওয়া যায়৷ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রিজ বা ঢাল দেখতে আসেন৷ অথবা বাতাস কাজে লাগিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করেন৷
কেবেল কার কোম্পানির কর্মী পাওলো ফরমাজোনি বলেন, ‘‘এই কেবেল কার ইউরোপের অন্যতম সুন্দর গার্ডা লেক থেকে প্রায় ১,৮০০ মিটার উঁচুতে মন্টে বাল্ডো-য় যায়৷ শূন্য থেকে ১,৮০০ মিটার, মন্টে বাল্ডোর ইউরোপীয় বাগানে৷''
মন্টে বাল্ডো পাহাড়ের পাদদেশে মালচেসিনে শহর৷ লিমোনে সুল গার্ডা-র পরেই উত্তর পাড়ের অন্যতম পরিচিত শহর৷ মধ্যযুগীয় ছোট্ট শহরটিকে ‘গার্ডা লেকের মুক্তো' বলা হয়৷ বিখ্যাত জার্মান কবি-সাহিত্যিক ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে অষ্টাদশ শতাব্দীতেই তাঁর ‘ইটালি ভ্রমণ' বইয়ে শহরটিকে অমর করে দিয়েছেন৷
ইউরোপের যে সব সমুদ্রসৈকতে নামে পর্যটকদের ঢল
ইউরোপের পর্যটকরা গ্রীষ্মের ছুটিতে ছোটেন সমুদ্রসৈকতের দিকে৷ ‘বিচে’ সময় না কাটালে তাঁদের ছুটি যেন পূর্ণতা পায় না৷ আর ইউরোপে আছে ১০,০০০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল৷ চলুন দেখে নেই তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্রতটগুলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
আলগার্ভ, পর্তুগাল
অসাধারণ পাথুরে গঠন, সোনালি বালি আর মায়াময় সব বাঁক – বলছি পর্তুগালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণ আলগার্ভের কথা৷ ইউরোপের যেসব এলাকায় সূর্যের আলো সবচেয়ে বেশি মেলে, তার মধ্যে পড়ে এই অঞ্চল৷ ফলে পর্যটকদের ভিড় থাকে সেখানে নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
সিসিলি, ইটালি
ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সিসিলিতে আকর্ষণীয় অনেক কিছুই রয়েছে৷ তবে দ্বীপটির বালুময় সমুদ্রতট পর্যটকদের টানে সবচেয়ে বেশি৷ আর শুধু গ্রীষ্মকালে নয়, শরৎকাল বা বসন্তেও ঘোরা যায় সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/W. Thieme
সাউথ আটল্যান্টিক, ফ্রান্স
হোসেগর হচ্ছে ফ্রান্সের প্রধান ‘সার্ফিং লোকেশন’৷ সেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়, যা সার্ফারদের জন্য আদর্শ৷ গত শতকের সত্তরের দশক থেকে সেখানে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সার্ফিং মিটের আয়োজন করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ASA/F. Faugere
ক্রেট, গ্রিস
গ্রিসের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপটিতে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির দেখা মেলে৷ আর্থিক মন্দার শিকার দেশটির জন্য পর্যটকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন সব সমুদ্রসৈকতের জন্যই অবশ্য আজও পর্যটকদের সেদেশে যেতে উদ্বুদ্ধ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Knosowski
হাইডেনসি, জার্মানি
জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকূলের এই দ্বীপটি ছুটি কাটাতে আগ্রহী পর্যটক এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়৷ সেখানে ‘প্রাইভেট’ গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ৷ সাইকেল কিংবা ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে হয় সেখানে৷ তবে হাঁটতেও মানা নেই৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
ডেভোন, ব্রিটেন
ব্রিটেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উককূল ডেভোন হালকা আবহাওয়া, বালুরতট এবং পাম গাছের জন্য বিখ্যাত৷ সার্ফাররা নিয়মিত ভিড় করেন সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Birchall
ডালিয়ান, তুরস্ক
যাঁরা পর্যটকদের ভিড় বেশি পছন্দ করেন না, কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যেতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ ডালিয়ান৷ শুধু মানুষ নয়, সামুদ্রিক কাছিমসহ বিপন্ন আরো অনেক প্রাণির দেখা মেলে এখানে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Kalaene
7 ছবি1 | 7
মালচেসিনে শহরের মাঝে চতুর্দশ শতাব্দীর স্কালিগার কেল্লায় গোটা এলাকার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়৷ প্রথম জার্মান পর্যটক হিসেবে সেখানে গ্যোটে-র জন্য আলাদা ফলক শোভা পাচ্ছে৷ ভিটোরিও ডাপ্রেটো বলেন, ‘‘তখন তো ক্যামেরা ছিল না৷ তাই তিনি একেঁছেন, স্কেচ তৈরি করেছেন৷ লোকে ভেবেছিল, তিনি একজন গুপ্তচর এবং তাঁকে কেল্লার কারাগারে পুরে দিতে চেয়েছিল৷ মালচেসিনে শহরের একজন মানুষ ফ্রাংকফুর্ট শহরে এক রেস্তোরাঁয় ওয়েটারের কাজ করেছিলেন৷ তিনিই জানালেন, যে গ্যোটে অত্যন্ত বিখ্যাত এক কবি৷ তখন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ তখন বন্দরে থাকতেন তিনি৷''
মালচেসিনে শহরে সন্ধ্যা নামলে এক জাদুময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ এর টানেই শত শত বছর ধরে মানুষ এখানে আসছেন৷