বাংলাদেশিদের জন্য ইটালিতে প্রবেশে নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার৷ সেই সঙ্গে সেখানকার প্রবাসীরাও এখন স্থানীয়দের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির স্বীকার হচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে বাংলার ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' অনুষ্ঠানে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইটালি প্রবাসী সাংবাদিক পলাশ রহমান৷ তিনি বলেন, ইটালিতে বাংলাদেশিদের সুনাম ছিল৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেশটির গণমাধ্যমে বাংলাদেশিদের নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার হয়েছে৷ যার কারণে সেখানকার স্থানীয়রা এখন প্রবাসীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন৷
সম্প্রতি বিশেষ ফ্লাইটে ইটালিতে ফিরেছেন কয়েকশো বাংলাদেশি৷ পলাশ বলেন, ‘‘প্রথম দুইটা ফ্লাইট যখন রোমে অবতরণ করে, ঐ যাত্রীদের তখন ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিন করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল৷ কারণ তারা জানিয়েছে যে তারা বাংলাদেশ থেকে পরীক্ষা করে এসেছেন৷ কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেল বাংলাদেশি কমিউনিটিতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকারে বাড়তে শুরু করলো৷ তখন ইটালির প্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে এরপর যে দুইটা ফ্লাইট আসে তাদের জন্য এয়ারপোর্টেই পরীক্ষার কড়াকড়ি আরোপ করে এবং সেখানে ১৩ শতাংশ যাত্রীর মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়৷''
তিনি বলেন, আগে ফিরে আসাদের অনেকেই দেশটির কোয়ারান্টিনের নিয়ম মানেননি৷ অনেককে পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে তাদের দেয়া ঠিকানায় খুঁজে পায়নি৷ এমন তিনজনের নামে পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তি দেয় ইটালির পুলিশ ৷ এছাড়াও রোমে একজনকে পুলিশ ট্রাম স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করে৷ তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারান্টিন অমান্য করে কয়েকটি শহর ঘুরেছেন৷ এর মধ্যে তিনি প্রায় এক হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছেন৷
সাত জুন বাংলাদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার৷ বাংলাদেশসহ ১৩ টি দেশে ছিলেন বা ভ্রমণ করেছেন এমন কাউকেই দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না, শুক্রবার নতুন এই সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন ইটালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ এই পরিস্থিতি কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায়া এমন প্রশ্নের জবাবে পলাশ বলেন, ‘‘বিষয়টি এখন আর বাংলাদেশি কমিউনিটির উপর নির্ভর করছে না৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হচ্ছে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা৷ ইটালির সরকারের সাথে প্রশাসনের সাথে যোগাযোগটা বাড়াতে হবে৷ এবং তাদের যে ক্ষোভের জায়গাটা সেখানেই মনোযোগ দিতে হবে৷ তাদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগটা করতে হবে, তাদেরকে বোঝাতে হবে মূল ব্যাপারটা কী৷’’
তিনি বলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে৷ এ ধরনের কোথায় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উস্কে দেয়া হচ্ছে৷ তার মতে বাংলাদেশের সক্ষমতার যে অভাব ছিল সেটা না লুকিয়ে ভুল স্বীকার করা উচিত৷
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি হিসেবে গণস্বাস্থ্যের গবেষক দলের প্রধান ড. বিজন কুমার শীল৷ তাদের উদ্ভাবিত কিটের পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সমস্ত পরীক্ষায় যে থার্ড পার্টির পদ্ধতিটা অনুসরণ করবে সেটি বাংলাদেশে আগে ছিল না৷ ইউএসডিএ এফডিএ এর গাইডলাইন ওনারা এডাপ্ট করেছে ১৪ তারিখে৷ কিন্তু আমাদের স্টাডিটা তার আগেই হয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ পরবর্তীতে আমাদের যখন এটা অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল তখন আমাদের কিছুটা দেরি হচ্ছে এজন্য৷ আমাদের নতুন করে আরেকটা স্টাডি করতে হবে৷ আমরা আমাদের ল্যাবরেটরির কাজ শেষ করেছি৷ এখন থার্ড পার্টি কাজটা করবে৷ একইভাবে এন্টিজেনের ক্ষেত্রেও কোন গাইডলাইন ছিল না৷ আরেকটা গাইডলাইন তারা করেছে৷ দুটো পরীক্ষাই এখন নতুন করে করতে হবে৷ যেটা থার্ড পার্টি করবে যে এটা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে৷’’
করোনার কবলে প্রবাসীরা
বিদেশে প্রায় ১৬৮ টি দেশে ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশিরা৷ সেসব দেশের প্রায় সবই এখন করোনায় কম-বেশি আক্রান্ত৷ আক্রান্ত হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও৷ অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন৷
ছবি: Reuters/E. Su
হাজার পেরিয়ে
ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে বিদেশের মাটিতে মোট ১৯টি দেশে অন্তত ১ হাজার ৩৭৭ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন৷ বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ হাজার৷ ৫ জুলাই পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ পরিসংখ্যান দিয়েছে ব্র্যাক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Scrobogna
সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রাচ্যে
বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবাসী রয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে৷ সেখানকার ছয়টি দেশেই এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/Stringer
সৌদি আরবে মোট মৃতের ২৫ ভাগই বাংলাদেশি
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে মোট সোয়া দুই লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত৷ ৫ জুলাই পর্যন্ত মারা গেছেন দুই হাজার ১০০৷ এর মধ্যে ৫২১ জনই বাংলাদেশি। অর্থাৎ, সৌদি আরবে করোনায় মৃতদের এক চতুর্থাংশই প্রবাসী বাংলাদেশি। ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী সৌদিতে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি সংক্রমিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বড় অংশই অবশ্য সুস্থ হয়ে গেছেন।
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ghani Bashir
আমিরাতে মোট মৃতের এক তৃতীয়াংশ
সৌদি আরবের পর করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ উপসাগরীয় দেশটিতে করোনায় মৃত্যুবরণকারী ৩২৮ জনের ১২২ জনই বাংলাদেশি৷ দেশটিতে মোট আক্রান্ত সাড়ে চার হাজার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
কুয়েতে আক্রান্ত চার হাজার
কুয়েতে চার হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত৷ এর মধ্যে ৫ জুলাই পর্যন্ত ৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ গোটা দেশটিতে ৯ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৮০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৩৮২ জন৷
ছবি: picture-alliance/AA/J. Abdulkhaleg
ওমানে কুড়ি
ওমানে করোনায় এ পর্যন্ত ২০ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন৷ দেশটিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৩৬, পজিটিভ হয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. alHasani
কাতারেও অনেক আক্রান্ত
কাতারে ১২ হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত৷ এরমধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন৷ ৯ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে সর্বমোট এক লাখের উপরে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১৪২ জন৷
ছবি: Imago Images/M. Gattoni
বাহরাইনে যেমন
বাহরাইনে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার বাংলাদেশি৷ এরমধ্যে মারা গেছেন নয় জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ১৫ হাজার, মৃত্যুও বাড়ছে
যুক্তরাজ্যে ৩০৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Cliff
সিঙ্গাপুরে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, মৃত্যু শূন্য
এখন পর্যন্ত প্রবাসে সবচেয়ে বেশি ২৩ হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে৷ তাদের বেশিরভাগই শ্রমিক৷ তবে সেখানে তারা সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন৷ দেশটিতে বাংলাদেশের কারো প্রাণহানির তথ্যও মিলেনি৷ একইভাবে প্রায় এক হাজার জন্য আক্রান্ত হলেও মালদ্বীপেও কোনো বাংলাদেশি মারা যাননি৷
ছবি: Reuters/E. Su
যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশিরা বিপাকে
সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্তের দেশ যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ২৭২ জন৷ এই দেশটিতেও আক্রান্ত ১৫ হাজারের উপরে৷
ছবি: AFP/J. Eisele
ইটালিতে যথেষ্ট কম
ইউরোপে করোনায় সবচেয়ে বেশি ভুগেছে ইটালি৷ দেশটিতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪ জন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/M. Scrobogna
অন্যান্য
৫ জুলাই পর্যন্ত ক্যানাডায় নয় জন, সুইডেনে আট জন, ফ্রান্সে সাত জন, স্পেনে পাঁচ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন৷ ভারত, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় একজন করে বাংলাদেশির করোনায় মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷