এক চিকিৎসক বলেছেন, ‘‘আমাদের শক্তি প্রায় শেষ৷ আমাদের সহকর্মীরাও সংক্রমিত হচ্ছেন৷ এ পর্যন্ত তিনজন ডাক্তারসহ মোট ৩২০ জন মারা গেছেন ইটালির লম্বার্ডি অঞ্চলে৷ তারপরও অনেকেই অসতর্ক৷’’
বিজ্ঞাপন
নভেল করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ এখন ইটালি৷ ইউরোপের এই দেশে এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৯২৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ছয় হজারেরও বেশি মানুষের৷
করোনা ভাইরাসের কারণে স্তব্ধ ইউরোপ
সামাজিক দূরত্ব ও ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের বড় শহরগুলির রাজপথ প্রায় খালি৷ করোনা ভাইরাসের প্রসার থামাতে ইউরোপে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
প্যারিসে লকডাউন
গত মঙ্গলবার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর প্যারিসের ব্যস্ত রাজপথ জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ কেনাকাটা, ডাক্তারের কাছে বা কাজে যাওয়া ছাড়া বাসার বাইরে যাবার নিয়ম নেই৷ বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলায় প্যারিসের মেয়র অবশ্য আরও কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/T. Camus
জার্মানির রাজধানীতে জনজীবন স্তব্ধ
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল রবিবার জার্মানিতে আরও কড়া পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন৷ প্রকাশ্যে দুই জনের বেশি একসঙ্গে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার৷ নয় দফার এই পদক্ষেপের আওতায় মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ রেস্তোরাঁ, সেলুন ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে রোববার ম্যার্কেল নিজে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
বিদেশিরা অনাকাঙ্ক্ষিত, সীমান্ত বন্ধ
দেশের মধ্যে মানুষের চলাচলের উপর কড়া নিয়ম চালু করার পাশাপাশি জার্মানি দেশে বিদেশিদের প্রবেশ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে৷ সে কারণে দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্টে কার্যকলাপ অনেক কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বাভেরিয়ার মানুষ গৃহবন্দি
করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে জার্মানির দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে গত সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত পদক্ষেপের আওতায় মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ৷ রেস্তোরাঁসহ অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/S. Babbar
ব্রিটেনে সামাজিক দূরত্বের আবেদন
করোনা ভাইরাসের হুমকি রুখতে ব্রিটেন সব বার, পাব ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সব নাগরিকের উদ্দেশ্যে অতি প্রয়োজনীয় নয়, এমন ভ্রমণ বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন৷ সেইসঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মানুষে-মানুষে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলেছেন জনসন৷
ছবি: AFP/T. Akmen
মহামারির কেন্দ্রস্থল মিলান
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কেন্দ্রস্থল চীন থেকে ইটালিতে স্থানান্তরিত হয়েছে৷ সে দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ ১০ই মার্চ ইটালিতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Bruno
ভ্যাটিকানের দরজা বন্ধ
ইটালির উত্তরে লম্বার্ডি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পর দেশের বাকি অংশেও জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ রোম ও ভ্যাটিকান সিটিতে মানুষের সমাবেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে৷ সেন্ট পিটার্স চত্বরের মতো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago Images/Zuma/E. Inetti
স্পেনের অবস্থা গুরুতর
রোববার স্পেনের সরকার দেশে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আগামী ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ ফলে ১৪ই মার্চ থেকে প্রায় এক মাস পর্যন্ত স্পেনেল জনজীবন স্তব্ধ থাকবে৷ ইউরোপে ইটালির পর স্পেনেই করোনা ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে বার্সেলোনা ও মাদ্রিদ শহরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/X. Bonilla
অস্ট্রিয়ায় সংক্রমণের হার কমছে
সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ তবে এর আগে ৪০ শতাংশ সংক্রমণের হারের তুলনায় তা অনেক কম৷ সরকার দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ নেবার ফলে সুফল দেখা যাচ্ছে৷ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: AFP/H. Neubauer
9 ছবি1 | 9
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা প্রশাসনিক অঞ্চল লম্বার্ডির৷ লম্বার্ডিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বারগোমা শহরের৷ সেই শহরের ৬০০ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৩৪ জনই এখন করোনায় সংক্রমিত৷ তিনজন ডাক্তারের মৃত্যুও হয়েছে করোনায়৷
গত ৯ মার্চ চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচ শেষে উৎসবে মেতেছিল বারগামো৷ সেদিন স্পেনের ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল লম্বার্ডি অঞ্চলের ক্লাব আতালান্তা৷ ধারণা করা হয়, সেই ম্যাচের গ্যালারিভর্তি দর্শকের মাধ্যমেই ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে সংক্রমণ৷ খেলোয়াড়রাও রেহাই পাননি৷ ভ্যালেন্সিয়ার ৩৫ ভাগ খেলোয়ার-কর্মকর্তাও তাই এখন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছেন৷
ছোট্ট শহর বারগোমাতে এখন লাশ দাফনের জায়গা পেতে সমস্যা হচ্ছে৷ দাফনের কাজে নেমেছে সেনাবাহিনী৷
এতকিছুর পরও বারগোমার অনেক মানুষই সচেতন হননি৷ স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক ওলে-কে আতালান্তা ফুটবল দলের অধিনায়ক আলেহান্দ্রো গোমেস জানান, সবার জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে ফুটবলার হয়েও তিনি বাইরে দৌড়াতেও যাচ্ছেন না, কিন্তু অনেকেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মেনে হাঁটছেন, পার্কে গিয়ে ব্যায়াম করছেন, সুপার মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন৷
এসিবি/কেএম (রয়টার্স)
করোনা থেকে বাঁচতে যা কিছু সাবধানে ধরবেন
কোন কোন জিনিসে করোনা ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে? কোন জিনিসগুলোতে বুঝেশুনে হাত দিতে হবে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
দরজার হাতল
গবেষণা বলছে, দরজার হাতলে পাঁচ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে করোনা ভাইরাস। সুতরাং, সাবধান! সব সময় পরিষ্কার রাখুন দরজার হাতল। অথবা হাত দিলে সেই হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নিন।
ছবি: picture-alliance/dpa Themendienst/F. Gabbert
চামচ
আপনার এলাকায় এখনো রেস্তোরাঁ বা অফিসের ক্যাফেটেরিয়া খোলা আছে? করোনার আতঙ্কের এই সময়েও সেখানে খেতে হয়? তাহলে চামচ বা কাঁটাচামচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান। অনেকেই বলছেন, করোনায় সংক্রমিত কেউ ব্যবহার করলে চামচে অনেকক্ষণ জীবাণু থেকে যেতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
টেডি বিয়ার
এমনিতে টেডি বিয়ার নিরাপদ। এমন খেলনার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকির কথা কোনো গবেষণায় উঠে আসেনি। তবে খেলনা তৈরিতে প্লাস্টিক, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ব্যবহার করলে তার মাধ্যমে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
প্যাকেট, চিঠি ইত্যাদি
যুক্তরাষ্ট্রের রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরির এক গবেষণা বলছে, কার্ডবোর্ড বা কাগজে তৈরি কোনো দ্রব্যে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে করোনা ভাইরাস।
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Weller
পোষা প্রাণীতেও ঝুঁকি?
না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে পোষা প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কথা এখনো গবেষকরা নিশ্চিত করে বলেননি।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Tarantino
ফলমূল, শাকসবজি
না, ভালো করে ধুয়ে নিলে ফলমূল, শাক সবজির মাধ্যমেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি নেই। সুতরাং প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করে নিশ্চিন্তে খান।
ছবি: picture-alliance/Kontrolab/IPA/S. Laporta
ফ্রোজেন ফুড
করোনা ভাইরাস তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নীচে নেমে গেলেও তরতাজা থাকে। সুতরাং ফ্রিজে রাখা প্যাকেটজাত খাবার খুব ভালো করে গরম না করে একদম খাবেন না।