ইটালির সম্ভাব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দ্য লিগ’ দলের প্রধান মাটেও সালভিনি এ প্রস্তাব দেন৷ তাঁর দল ‘ফাইভ স্টার মুভমেন্ট’ দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে এক চুক্তি করে, যাতে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেয়ার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইটালিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ কিন্তু এখনও সরকার গঠন সম্ভব হয়নি৷ তবে সম্প্রতি ডানপন্থি ও পপুলিস্ট ঐ দুই দল মিলে সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ তারা অল্প পরিচিত আইনের অধ্যাপক জুসেপে কন্টে’কে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছে৷ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নাম এসেছে মাটেও সালভিনির৷ তিনি ইটালি থেকে পাঁচ লক্ষ অবৈধ অভিবাসী তাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ শরণার্থীদের বেশিরভাগই অপরাধী বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
দুই দলের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে আরও আছে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী ইটালির নাগরিকদের মাসে কমপক্ষে ৭৮০ ইউরো করে দেয়া, রাশিয়ার সঙ্গে অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা বাড়ানো ইত্যাদি৷
ইটালির যে গ্রামের প্রাণ ফিরিয়েছেন শরণার্থীরা
দক্ষিণ ইটালির এসপ্রোমন্টে পর্বতমালার পাদদেশের এক গ্রাম ক্রমশ যেন নির্জীব হয়ে যাচ্ছিল৷ তবে এখন শরণার্থীদের পদচারণায় অনেকটাই সজীবতা ফিরেছে সেখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
শরণার্থী এবং স্থানীয়দের সুবিধা
দক্ষিণ ইটালির এসপ্রোমন্টের ছোট্ট সেন্ট’আলেসিও গ্রামের বাসিন্দারা গত তিন বছর ধরে পরিবার এবং অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছেন৷ এক প্রকল্পের আওতায় এটা করা হচ্ছে, যা শুধু মানবিক সহায়তাও নয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধাও দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
প্রায় মরুতে পরিনত হওয়া গ্রাম
শরণার্থীরা আসার আগের বছরগুলোতে সেন্ট’আলেসিও’র বাসিন্দার সংখ্যা ক্রমশ কমছিল৷ সেখানে ছিল মাত্র ৩৩০ জন বাসিন্দা, যাদের অধিকাংশই বৃদ্ধ৷ গ্রামের রাস্তাঘাটগুলো হয়ে যাচ্ছিল মরুভূমির মতো, ঘরবাড়ির জানালাও থাকতো অধিকাংশ সময় বন্ধ৷ আসলে ভালো কাজের আশায় গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা পাড়ি দেন টুরিন, মিলান এমনকি অস্ট্রেলিয়া অবধি৷ ফলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
অভিবাসীদের জন্য ইটালীয় রান্নার প্রশিক্ষণ
গ্রামের পরিস্থিতি বদলের জন্য স্থানীয় কাউন্সিল অভিবাসীদের জায়গা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থীদের নেটওয়ার্ক এসপিআরএআর’এর সহায়তায় ৩৫ অভিবাসীকে গ্রামের আটটি খালি ফ্ল্যাট ভাড়া দেয়া হয়৷ ছবিতে অভিবাসীরা রান্নার ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
‘একটু নড়াচড়া ভালো’
গ্রামের একমাত্র বারে স্থানীয় এবং অভিবাসীরা একত্রে সময় কাটান৷ বারটির মালিক ক্যালেস্টিনা বোরেলো, যার ছেলে ভালো কাজের আশায় গ্রাম ছেড়ে বেলজিয়ামে চলে গেছেন কয়েকবছর আগে৷ ক্যালেস্টিনা জানান, গ্রামটি ক্রমশ জনশূণ্য হয়ে যাচ্ছিল, তবে এখন যে অল্পবিস্তর ‘নড়াচড়া’ সৃষ্টি হয়েছে তা অবশ্যই ভালো৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
অভিবাসীদের দেয়া হচ্ছে সব সুযোগ
গ্রামটিতে বর্তমানে ইরাকি কুর্দিদের এক পরিবার, ঘানা, নাইজেরিয়া, মালি, সেনেগাল এবং গাম্বিয়ার কয়েকজন অল্পবয়সি অভিবাসী বসবাস করছেন৷ তাদের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে৷ বিশেষ করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে কাজের সুযোগ, ভাষা শেখার ব্যবস্থা, আইনি সহায়তা, এমনকি প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে৷ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও স্থানীয়দের সঙ্গে অভিবাসীদের যুক্ত করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
আশাবাদী মেয়র
গ্রামের মেয়র স্টেফেনো কালাবোরো মনে করেন, অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধাও নিশ্চিত হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬ জনের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে, যারা পার্টটাইম বা ফুলটাইম কাজ করছেন৷ ষোল জনের মধ্যে সাতজন স্থানীয় বাসিন্দা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
খেলার মাঠে সখ্যতা বাড়ানো
স্থানীয় এবং অভিবাসীদের মধ্যে সখ্য বাড়ানোর এক উপায় এই ফুটবল খেলার মাঠ৷ পাশাপাশি গ্রামের অধিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার বার, সুপারমার্কেট, চিকিৎসকের চেম্বার, যেগুলো কিনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, সবই এখন চালু রাখা যাবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Solaro
7 ছবি1 | 7
‘সম্ভব নয়’
সম্ভাব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সিমোনে আন্দ্রেওত্তি৷ তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা এনজিও ‘ইন মিগ্রাৎসিওনে’-র প্রধান৷ কারণ এত সংখ্যক মানুষকে (পাঁচ লাখ) খুঁজে বের করা এবং তারপর তাদের গ্রহণ করবে এমন দেশ পাওয়া কঠিন হবে, বলে ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ ‘‘নীতিটা জনপ্রিয়, তবে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন,’’ বলে বিশ্বাস করেন আন্দ্রেওত্তি৷ তাঁর ধারণা, সালভিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশকে শরণার্থী গ্রহণের জন্য অনুরোধ করতে পারেন৷ কিন্তু পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রিয়া অতীতে শরণার্থী নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল৷ এখনও সেসব দেশে পপুলিস্ট, জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ওখানে শরণার্থী পাঠানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি৷
তবে সালভিনির মন্তব্যের (শরণার্থীদের বেশিরভাগই অপরাধী) কারণে অভিবাসী ও বিদেশি চেহারার নাগরিকদের উপর হামলা বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন আন্দ্রেওত্তি৷