ইটালির এবারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন মধ্য-বামপন্থি দল তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, আর বেশিরভাগ ভোট পড়েছে ডানপন্থিদের ঝুলিতে৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনির ডানপন্থি জোট সরকারের নেতৃত্ব দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জোট জয় পেয়ে গেলেও কর কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত ৮১ বছরের বার্লুসকোনি আগামী বছরের আগে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারবেন না৷
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বার্লুসকোনির দল ‘ফোরসা ইটালিয়া', কট্টর ডানপন্থি দল নর্দার্ন লিগ এবং ব্রাদার্স অফ ইটালি– এই তিন দলের জোট পেয়েছে ৩৭ ভাগ ভোট৷ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অতিবামপন্থি ফাইভ স্টার মুভমেন্ট বা এমফাইভএস পেয়েছে ৩১ ভাগ ভোট৷ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পেয়েছে ২৩ ভাগ ভোট৷ মাত্তেও সালভিনি'র অ্যান্টি-ইমিগ্র্যান্ট নর্দার্ন লিগ পেয়েছে ১৮ ভাগ ভোট৷ বার্লুসকোনির দল ‘ফোরসা ইটালিয়া' একা পেয়েছে ১৪ ভাগের কম ভোট৷
ঝুলন্ত পার্লামেন্ট?
যদিও বার্লুসকোনির জোট এগিয়ে আছে, কিন্তু সরকার গঠনের জন্য যে পরিমাণ ভোট দরকার, তা নেই তাদের৷ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৪০ ভাগ ভোট৷ চূড়ান্ত ফলাফল যদি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের আভাস দেয়, তবে প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেল্লা পরবর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেবেন৷ ২০১৩ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল, তৎকালীন প্রেসিডেন্টকে সরকার গঠনের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল৷
বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট মাতারেল্লা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাওলো জেন্টিলোনিকে তাঁর দল পিডি'র নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে বলবেন৷ এবারের নির্বাচনে অনেক কম ভোটার ভোট দিয়েছেন৷ গতকাল ভোট পড়েছে মাত্র ৫৮ ভাগ, যেখানে ২০১৩ সালে পড়েছিল ৭৫ ভাগ ভোট৷
ফিরলেন সিলভিও বার্লুসকোনি
ইটালির সাবেক প্রেসিডেন্ট সিলভিও বার্লুসকোনির উপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারের কোনো অবস্থানে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ তবে ইটালির রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব কমেনি৷
১৯৩৬ সালে জন্ম নেয়া বার্লুসকোনির প্রথম পেশা ছিল ক্রুজশিপে গান গাওয়া৷ এরপর তিনি নিজেকে মিডিয়া মোঘল হিসেবে গড়ে তুলতে সমর্থন হন৷ এছাড়া ১৯৮৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইটালির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব এসি মিলানের মালিক ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/M.Gangne
ফোরসা ইটালিয়া
ইটালির সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনিটো ক্রাক্সির সঙ্গে বার্লুসকোনির ভালো সম্পর্ক ছিল৷ তারপর এক দুর্নীতি কেলেংকারিতে রাজনীতি থেকে ক্রাক্সির সরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বার্লুসকোনি৷ ১৯৯৩ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘ফোরসা ইটালিয়া’ নামের একটি দল৷
ছবি: picture-alliance/Ropi/Luigi Mistrulli
প্রধানমন্ত্রী
ফোরসা ইটালিয়া দলের হয়ে ১৯৯৪ সালে সংসদে প্রবেশ করেন তিনি৷ সেই বছরই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন বার্লুসকোনি৷ ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত৷ ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের অভিযোগ উঠেছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্রভাবশালী বন্ধু
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে নেতাদের নিজের মতো মনে করেছেন তাঁদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন বার্লুসকোনি৷ যেমন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তবে যে নেতারা তাঁর সমালোচনা করতেন তাঁদের সঙ্গে বার্লুসকোনির সুসম্পর্ক ছিল না৷ যেমন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Metzel
বুঙ্গা বুঙ্গা
ঘুস দেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর ফাঁকি ইত্যাদি অভিযোগে ২০১১ সালে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বার্লুসকোনি৷ তাঁর বিরুদ্ধে ‘বুঙ্গা বুঙ্গা’ পার্টি আয়োজনেরও অভিযোগ উঠেছিল৷ এসব পার্টিতে নাকি অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা হতো৷ ছবিতে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম করিমা এল-মাহরুগ৷ তাঁকে ঘিরে একটি কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বার্লুসকোনি৷ প্রথমে অপরাধী প্রমাণিত হলেও ২০১৪ সালে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি৷
ছবি: Getty Images
অভিযুক্ত
২০১৩ সালে কর ফাঁকির মামলায় অভিযুক্ত হন বার্লুসকোনি৷ রায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনো পদে আসীন হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ মামলার রায়ের সময় তাঁর বয়স সত্তরের বেশি ছিল৷ তাই জেলে যাওয়ার পরিবর্তে তাঁকে কমিউনিটি সেবায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়৷ এখন তিনি সপ্তাহে চার ঘণ্টা বয়স্ক ডিমেনশিয়া রোগীদের সেবায় কাটান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সক্রিয় রাজনীতি
ইটালির রাজনীতিতে বার্লুসকোনির দলের প্রভাব এখনো আছে৷ তাঁর দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে অভিবাসন ও ইউরোপবিরোধী দল লেগা নর্ড৷ ফলে মার্চের ৪ তারিখে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে পরিচালিত এক জরিপে বার্লুসকোনির দল ও লেগা নর্ডের জোট এগিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/S. Rellandini
আবার নির্বাচন
ইতিমধ্যে বার্লুসকোনি জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন না৷ তাই ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷