ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে উড়োজাহাজ ও কৃষি পণ্য আমদানিতে নতুন শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ ইইউ উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী এয়ারবাসকে অন্যায্য ভর্তুকি দিয়ে আসায় দীর্ঘ পনের বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল মার্কিনিরা৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডাব্লিউটিও) ঘোষণা দেয় যে, মার্কিন যু্ক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে সাত দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ( ছয় দশমিক আট বিলিয়ন ইউরেো)-র সমপরিমাণ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করবে৷ এর কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াশিংটনও জানায়, যেহেতু ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাসকে ইইউর দেয়া অন্যায্য ভর্তুকির কারণে মার্কিন উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী বোয়িংয়ের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে, তাই তারা এই শুল্ক আরোপ করবে৷
বোয়িং ৭৪৭-এর ৫০ বছর
৫০ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল জাম্বো জেট বিমান বোয়িং ৭৪৭৷ ৫০ বছরে যাত্রী পরিবহনে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বিমান৷ ছবিতে দেখুন তারই গল্প...
ছবি: Reuters/T. Melville
নামেই পরিচয়
বোয়িং ৭৪৭ জাম্বো জেট নামেই বেশি পরিচিত৷ ৪ ইঞ্জিনের এই বিমান সবচেয়ে সুপরিসরের প্রশস্ত বিমান৷ এভিয়েশন খাতে এই বিমান ‘কুইন অফ দ্য স্কাই’ বা আকাশের রানি নামেও পরিচিত৷
ছবি: Reuters/T. Melville
বিমানের বন্ধু
একসঙ্গে বিমান তৈরিতে উদ্যোগ নিয়ে অমর হয়ে গেলেন দুই বন্ধু৷ বোয়িংয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল অ্যালেন ও অ্যামেরিকার জনপ্রিয় এয়ারলাইন প্যান অ্যাম-এর প্রধান জুয়ান ট্রিপ্পে৷ জুয়ান ট্রিপ্পে বিল অ্যালেনকে বলেছিলেন, ‘‘আপনার কোম্পানি একটি বিশাল বিমান বানালে, সেটি কিনে নিতাম৷’’ বন্ধুর কথা রাখতে গিয়েই বিল অ্যালেন এই বিশাল বিমান তৈরির পরিকল্পনা করেন৷ ১৯৬৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এই বিমান প্রথম আকাশ ওড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boeing
আভিজাত্যের প্রতীক
এই বিমান শুধুই কারিগরি কৌশল ও বিশালতার কারণেই প্রশংসিত নয়৷ এই বিমানকে মনে করা হয় আভিজাত্যের প্রতীক৷ এই বিমানে রয়েছে ককটেল লাউঞ্জ৷ ৭০ মিটার লম্বা ও ৬০ মিটার প্রশস্ত এই লাউঞ্জে বসে আড্ডা দিতে দিতে বাড়ি ফেরার সুবিধা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Boeing
দুর্ঘটনা
জাম্বো জেট আর দুর্ঘটনা একে অপরের বন্ধু৷ ১৯৭৪ সালে লুফথানসার একটি বোয়িং ৭৪৭ নাইরোবিতে দুর্ঘটনায় পড়ে৷ এতে ৫৯ জন নিহত হয়৷ ১৯৭৭ সালে স্পেনের টেনেরিফে দুটো জাম্বো মুখোমুখী সংঘর্ষে ৫৮৩ জন নিহত হন৷ ১৯৮৮ সালে স্কটল্যান্ডের লকারবিতে বিমানে বোমা বিস্ফোরণ হয়ে ২৭০ যাত্রী নিহত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP
বিমানে কুঁজ
বিমানটির সামনের অংশের উপরিভাগের হাম্প বা কুঁজ একে বিশ্বের সবচেয়ে ভিন্নধর্মী বিমানে পরিণত করেছে৷ এই হাম্প স্টাইলটি আপার ডেক হিসেবেও পরিচিত৷ আলাদা করে এর একটি বো স্টাইলের দরজা রয়েছে, সেখান দিয়ে মালামাল লোড আনলোড করা হয়৷ বোয়িং গাড়িও বহন করেছে মালামাল হিসেবে৷
ছবি: Imago/Russian Look/L. Faerberg
বিমানের ওপর মহাকাশ যান!
এই বিমানের মহাকাশ যান বহনের অভিজ্ঞতাও আছে৷ ২০১২ সালে নাসার একটি স্পেস শাটল আনা নেওয়া করে বিমানটি৷ জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর থেকে ফ্লোরিডার নাসা কেন্দ্রে মহাকাশ যান বয়ে নিয়ে যায় বিশেষভাবে নির্মিত বোয়িং ৭৪৭-১০০এস৷ এটি অবতরণের জন্য নাসায় বিশেষ প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজাদের প্রিয় বিমান
বোয়িং ৭৪৭ বিশ্বনেতা ও রাজাদের প্রিয়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টকে বহনকারী পরবর্তী এয়ারক্রাফটটি যেন বোয়িং ৭৪৭ হয়, সে নির্দেশ দিয়েছেন৷ জাপানের রাজা, ব্রুনেইর সুলতানের বিমানও ৭৪৭৷ এই মডেলে অ্যামেরিকান বিমান বাহিনীরও বেশ কয়েকটি বিমান রয়েছে৷ সেগুলো ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ নামে পরিচিত৷
ছবি: picture-alliance/empics
দেড় হাজারের বেশি!
পৃথিবীতে বোয়িং ৭৪৭ কয়টি আছে– এমন প্রশ্ন করলে হিসাব করতে ঝামেলা হবে৷ কারণ, এটি বাজারে ছাড়ার পর ধারণা ছিল হয়তো সর্বোচ্চ ৪০০ টি বিমান তৈরির পরেই এটি আর চলবে না৷ কিন্তু ১৯৯৩ সালে এর উৎপাদন সংখ্যা ১০০০ অতিক্রম করার পর সমালোচকদেরও প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যায়৷ ২০১৫ সালের মে মাস নাগাদ ১৫০৮ টি বিমান তৈরি করা হয় এবং ৩২ টি ৭৪৭-৮ নির্মাণাধীন রয়েছে৷
ছবি: Imago/Rüdiger Wölk
8 ছবি1 | 8
তবে ওয়াশিংটন ইউরোপ থেকে উড়োজাহাজ আমদানিতে ১০% ও অন্য কৃষি ও শিল্পপণ্য আমদানিতে ২৫% কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউএস ট্রেড রিপ্রেসেন্টেটিভের দপ্তর৷
তবে এই শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য ইইউর সঙ্গে একটি মীমাংসায় আসা বলে জানায় তারা৷
‘‘বহু বছর ধরে ইউরোপ এয়ারবাসকে ভর্তুকি দিয়ে আসছে৷ এর ফলে মার্কিন বিমান ব্যবসা ও এর কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন,'' বিবৃতিতে বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহিজার বলেন৷
‘‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসতে চাই যাতে করে আমাদের কর্মীরা লাভবান হন,'' বলেন তিনি৷
তবে যেসব পণ্যোর ওপর কর আরোপ করা হয়েছে সেগুলো মূলত ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও যুক্তরাজ্য থেকে আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এই চারটি দেশই এয়ারবাসকে ভর্তুকি দেয়৷ সসেজ থেকে শুরু করে কুকিজ, এমনকি ক্যামেরার যন্ত্রাংশ সবকিছুতেই কর আরোপ করা হচ্ছে৷
তবে ডাব্লিউটিও পুরো সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলারের ওপরই কর বসানোর সুযোগ দিলেও ওয়াশিংটন আপাতত তা করছে না, যদিও অ্যামেরিকায় ইইউর বাৎসরিক ৬৮৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির তুলনায় এই অংক কিছুই নয়৷ মার্কিনিরা অবশ্য সতর্ক করে বলছেন যে, উড়োজাহাজের ওপর কর আরোপের ফলে এর খরচ বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে সব কিছুর ওপর৷
‘বাংলাদেশিদের এয়ারবাসে দেখতে চাই’
02:29
এদিকে, এই কর আরোপ আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনার আগুনে কিছুটা ঘি ঢেলেছে৷ ডাব্লিউটিওর ঘোষণার পর ২৮ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার সিসিলিয়া ম্যালমস্ট্রম বলেছিলেন, ‘‘যদি যু্ক্তরাষ্ট্র ডাব্লিউটিওর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর আরোপ করে, তাহলে ইইউকেও তারা এমন পরিস্থিতিতে ঠেলে দেবে যে, আমাদেরও তেমন কিছু করা ছাড়া উপায় থাকবে না৷''
ওয়াশিংটনের এমন সিদ্ধান্ত ‘অদূরদর্শী' হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
‘‘আমরা ডাব্লউটিও আইনে হেরে গেছি,'' বার্লিনে বুধবার সাংবাদিকদের বলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
‘‘এখন দেখা যাক অ্যামেরিকানরা কী করে,'' যোগ করেন তিনি৷
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিনিরা কর আরোপ করায় উত্তেজনা বেড়েছে৷ এখন দেখার বিষয় ইইউ এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়৷