আসন সমঝোতা নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসছেন 'ইন্ডিয়া' জোটের নেতারা। কিন্তু সেখানে থাকতে পারছেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দপ্তরে হাজিরা দিতে ঢুকেছেন তৃণমূল নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা অবশ্য এখন তার নেই। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অভিষেকের মৌখিক রক্ষাকবচ আছে। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ইডি এবিষয়ে আদালতে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তাই আলাদা করে অভিষেকের আর রক্ষাকবচের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু বুধবার অভিষেককে ইডি-র দপ্তরে ডেকে পাঠানো নিয়ে অন্য রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বস্তুত, এই দিনই দিল্লিতে আসন সমঝোতা নিয়ে বৈঠকে বসছেন 'ইন্ডিয়া' জোটের নেতারা। এ সংক্রান্ত যে কমিটি তৈরি হয়েছে তাতে তৃণমূলের প্রতিনিধি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ইডি তাকে ডেকে পাঠানোয় বৈঠকে তিনি যোগ দিতে পারছেন না।
কলকাতায় ইডি হানা দিলেই মিলছে টাকার পাহাড়
পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৫২ কোটি। এবার কলকাতায় ব্যবয়াসীর বাড়ি থেকে ১৭ কোটি পেল ইডি। এর আগে হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহনির বাড়ি থেকে পাওয়া গেছিল ৮০ লাখ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ব্যবসায়ী আমির খানের বাড়ি
কলকাতার গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খানের ছেলে আমির খানের বাড়ি থেকে উদ্ধার হলো ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগে থেকে খবর পেয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)-এর কর্মীরা আমির খানের বাড়ি, অফিস মিলিয়ে ছয় জায়গায় হানা দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাশি রাশি নোট
আমির খানের খাটের তলায় প্লাস্টিকের প্যাকেটে টাকা রাখা ছিল। সেই রাশি রাশি নোট উদ্ধার করে ইডি। বেশিরভাগ ৫০০ টাকার নোট। দুই হাজার ও দুইশ টাকার নোটও ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গুনতে মেশিন
টাকা গোনার জন্য স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার কর্মকর্তাদের সাহায্য নেয় ইডি। সেখান থেকে আসে টাকা গোনার মেশিন। আসেন ব্যাংক কর্মীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই আমির খান?
আমির খান ও তার সহযোগীরা মিলে একটি গেম অ্যাপ চালাত। 'ই নাগেটস' নামে এই মোবাইল গেমিং অ্যাপের সাহায্যে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিত তারা। গ্রাহকরা গেম খেললে কমিশন পেতেন। অ্যাপের ওয়ালেট থেকে কমিশনের টাকা তুলতে পারতেন। তার জন্য ওয়ালেটে টাকা রাখতে হত। বেশি কমিশন পাওয়া যাবে ভেবে গ্রাহকরা প্রচুর টাকা সেখানে রাখতেন। তারপর সেই টাকা হাতিয়ে নেয়া হত বলে ইডি সূত্র জানাচ্ছে। অনেক ভুয়া অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এর পিছনে কারা?
আমির খানের সঙ্গে এখনো কোনো রাজনৈতিক দলের যোগাযোগের কথা সামনে আসেনি। কিন্তু রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, রাজনীতিক থেকে ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে কী করে এভাবে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে? এভাবে উদ্ধার করা টাকার পাহাড় কলকাতা আগে দেখেনি। তৃণমূল বলছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে রাজ্যের ব্যবয়াসীদের টার্গেট করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মন্ত্রীর বক্তব্য
গার্ডেনরিচ হলো রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের এলাকা। প্রথমে ফিরহাদ বলেন, ''বন্দর এলাকা বলেই ব্যবসায়ীদের চেনা র দায় কি আমার নাকি? ইডি রাজ্যের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করছে।'' একদিন পরেই তিনি সুর বদল করে বলেন, ''ইডি তার কাজ করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।''
ছবি: picture-alliance/ZumaPress
বাড়ির মানুষ
তল্লাশি চালানোর সময় বাড়ির মানুষ তা দেখার চেষ্টা করেন। এক নারী তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তবে বাড়ির মানুষ এই টাকা নিয়ে মুখ খোলেননি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী
ইডি যখন তল্লাশি চালাচ্ছিল, তখন বাইরে মোতায়েন করা হয়েছিল সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্থানীয় মানুষ সেখানে আসেন। কিন্তু কেউই কিছু বুঝতে পারছিলেন না। পরে এত টাকা উদ্ধার হয়েছে জেনে তারা অবাক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সংবাদমাধ্যমের ভিড়
বাড়ির সামনে ছিল সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে টিভির সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের ভিড়। কেউ মুখ খুললেই তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন তারা। তাদের প্রশ্ন ছিল, কী করে এত টাকা পাওয়া গেল? ইডি কীভাবে জানল এই টাকার কথা? এর সঙ্গে কি কোনো রাজনৈতিক যোগ আছে? এই সব প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
মঙ্গলবার এনিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন তৃণমূলের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং পার্থ ভৌমিক। পার্থ বলেছেন, ''উনি তদন্তের মুখোমুখি হতে ভয় পান না। বুধবার তা প্রমাণ হয়ে যাবে।'' এবিষয়ে অভিষেক সমাজ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ''বুধবার 'ইন্ডিয়া' সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক দিল্লিতে। যে কমিটির আমিও একজন সদস্য। কিন্তু ইডি ওই দিনই আমাকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে। এইমাত্র সেই নোটিস পেলাম। ৫৬ ইঞ্চির ছাতির কাপুরুষতা ও অন্তঃসারশূন্যতা দেখে বিস্মিত না হয়ে পারছি না।''
এদিন ইডি দপ্তরে ঢোকার আগে গাড়ি থেকেই সাংবাদিকদের প্রতি নমষ্কার বিনিময় করেন অভিষেক। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।
এর আগেও ইডি এবংসিবিআইয়ের তলবে দিল্লি ও কলকাতায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন অভিষেক। প্রশ্ন উঠছে, এদিন কি জেনেবুঝেই তাকে তলব করা হলো? বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ইডি-র তলবের সঙ্গে নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেলার কোনো কারণ নেই। প্রশাসন তার নিজের কাজ করছে। এমন নয়, অভিষেককে এই প্রথম তলব করা হলো। তদন্তের প্রয়োজনে তাকে যে কোনো সময়ই তলব করা হতে পারে।''
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে 'ইন্ডিয়া' জোট তৈরি করেছে বিরোধীরা। তৃণমূল তার অন্যতম অংশ। সেই জোটের আসন সমঝোতা নিয়ে বুধবার দিল্লিতে প্রথম বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গে আসন সমঝোতা কীভাবে হবে, তা নিয়ে বহু আলোচনা এবং বিতর্ক হচ্ছে। 'ইন্ডিয়া' জোটে কংগ্রেস এবং সিপিএম আছে। পশ্চিমবঙ্গে তারা আবার শাসকদল তৃণমূলের বিরোধীপক্ষ। ফলে পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে জোট সমঝোতা হবে, তার দিকে সকলেরই দৃষ্টি আছে। এদিনের বৈঠকে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু অভিষেক বৈঠকে যোগ দিতে না পারায় এবিষয়ে এদিন আলোচনার সুযোগ নেই।