মেসিডোনিয়া সীমান্তের কাছে ইডোমেনি শরণার্থী ক্যাম্প খালি করতে শুরু করেছে গ্রিস পুলিশ৷ সেদেশের কর্তৃপক্ষ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং ক্যাম্পের মধ্যে কয়েকশ' দাঙ্গা পুলিশ পাঠিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গ্রিক পুলিশ মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইডোমেনি ক্যাম্পের ৮ হাজার ৪০০-র মতো শরণার্থীকে সরিয়ে নিচ্ছে তারা৷ এজন্য পুলিশের অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে ৪০০ পুলিশ সদস্য এবং একটি হেলিকপ্টার৷ সরকারের মুখপাত্র গিয়র্গস ক্রিটসিস জানিয়েছেন, শরণার্থীদের সরিয়ে নিতে পুলিশ কোনো শক্তি প্রয়োগ করবে না৷ আর পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সপ্তাহখানেক লাগবে৷
Greek police begin evacuation of Idomeni camp
00:42
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে ক্রিটসিস বলেন, ‘‘যারা তাদের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে তারা চলে যাবে, কেননা, আমরা এই ইস্যুর ইতি টানতে চাচ্ছি৷ যদিও আমরা নির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ বলছি না, তবে মোটামুটি সপ্তাহখানেকের মধ্যে ক্যাম্প খালি করা হবে৷''
ইডোমেনিতে থাকা ডয়চে ভেলের প্রতিবেদক অলিভার সালেট এবং মারিয়ানা কারাকুলাকি জানিয়েছেন, পুলিশ পুরো এলাকা সিল করে ফেলেছে এবং সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেছে৷
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীদের সরিয়ে নতুন নির্মিত একটি ক্যাম্পে নেয়া হচ্ছে, যেটা গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর থেসালেনিকির কাছে অবস্থিত৷
সীমান্তে আটকে থাকা শরণার্থীরা
চলতি বছরের শুরুর দিকে মেসিডোনিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দিলে ইডোমেনিতে শরণার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে৷ বিশেষ করে যারা জার্মানি এবং সুইডেনসহ ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলোতে যেতে চাচ্ছিলেন তারা সীমান্ত বন্ধ থাকায় ইডোমেনিতে আটকে পড়েন৷
মেয়ের ক্যানভাসে যুদ্ধের বিভীষিকা
প্রতিদিন সিরিয়া ছাড়ছে অসখ্য মানুষ৷ আশ্রয় খোঁজা মানুষদের মধ্যে আছে শিশুরা, যারা যুদ্ধের বিভীষিকা নিজের চোখে দেখেছে৷ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে যাত্রা করা তেমনই এক মেয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
বাড়িটা যেমন ছিল
সিরিয়ার এক শরণার্থী মেয়ে কলম আর কাগজ বেছে নিয়েছে তার জীবনের গল্প বলতে৷ এই ছবির ক্যাপশনে সে লিখেছে, ‘‘এটা সিরিয়া, মৃত্যু দূত৷ সিরিয়ার রক্ত ঝড়ছে৷’’ মেয়েটির আঁকা ছবিতে দেখা যাচ্ছে ট্যাঙ্ক থেকে একটি শহরের দিকে গোলা ছোড়া হচ্ছে৷ একইসঙ্গে আকাশ পথে চলছে হামলা৷ ফলে বাড়িগুলো আগুনে পুড়ে যাচ্ছে আর একটি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একজন তা দেখছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
মৃত্যু এবং হতাশা
‘‘এটা আমার বাবা, মা এবং পরিবারের - এবং সিরিয়ার সকল পরিবারের কবর,’’ মেয়েটা লিখেছে৷ তার কথায়, ‘‘সিরিয়ার শিশুদের অবস্থা এমন৷’’ তার হাতে থাকা ছবিটিতে তিনটি কবর এবং শুয়ে থাকা কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
শিশুরা মারা যাচ্ছে
এখানে এজিয়ান সাগরে ডুবে প্রাণ হারানো আয়লান কুর্দির মরদেহ আঁকার চেষ্টা করেছে মেয়েটি৷ তার মৃত্যু গোটা ইউরোপকে নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে শিশুদের চরম দুর্দশা ফুটে উঠেছিল কুর্দির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘এটা সিরিয়ার মানুষের আসল ট্রাজেডি’
যুদ্ধ থেকে বাঁচতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে৷ অনেক শিশু হারিয়েছে তাদের অভিভাবক৷ অবৈধ পথে সিরিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা খুবই বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
থমকে যাওয়া জীবন
গ্রিসের ইডোমেনি শরণার্থী শিবিরে কিছু শিশু ছিল যারা তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হওয়ার আশায় ছিল৷ তাদের বাবা-মা সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগেই ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়েছিল৷ কিন্তু বাকিদের আশা ধীরে ধীরে ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হচ্ছে৷ ছবির ক্যাপশন, ‘‘শিশুদের সব আশা, স্বপ্ন এখন ময়লার বাক্সের মধ্যে আছে৷’’
ছবি: DW/M.Karakoulaki
হারানো স্বপ্ন
‘‘শিশুদের ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন হারিয়ে গেছে-’’ লিখেছে মেয়েটি৷ তার কথায়, শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক শিশু ইউরোপে শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখেছিল৷ কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছে, সেই স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তব হওয়ার আশা নেই৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
‘তাদের বুঝতে হবে যে তারা শিশু’
দশ বছর বয়সি এই শিশুটির মতো আরো অনেক শিশু ইডোমেনি ক্যাম্পে রয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, শরণার্থী শিবিরে শিশুদের দিকে আলাদাভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে না৷
ছবি: DW/M.Karakoulaki
7 ছবি1 | 7
সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ অভিবাসী দেশটি হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন৷ তবে গত মার্চে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক চুক্তির পর শরণার্থী এবং অভিবাসীদের ইউরোপমুখী স্রোতে টান পড়েছে৷ নতুন চুক্তি অনুযায়ী, গ্রিসে থাকা শরণার্থীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে যদি না তারা সফলভাবে গ্রিসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে সফল হন৷
মানবেতর জীবনযাপন
ইডোমেনিতে থাকা অধিকাংশ অভিবাসী সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাক থেকে আসা৷ শীত এবং বর্ষা তারা কাটিয়েছেন ছোট তাবুতে বসবাস করে৷ গ্রিসের কর্তৃপক্ষ গত কয়েকমাস ধরে ক্যাম্পটি বন্ধ করার চেষ্টা করছিল৷
এআই/এসিবি (এপি, ডিপিএ, এএফপি)
সীমান্তেই পথের শেষ
গ্রিক-ম্যাসিডোনীয় সীমান্তে শত শত উদ্বাস্তু আটকা পড়েছেন৷ গত সোমবার থেকে চালু হয়েছে এই নতুন কানুন: বিশেষ কয়েকটি দেশ থেকে না এলে, উদ্বাস্তুদের নিজের ভাগ্য নিজেদের হাতে৷
ছবি: Reuters/O. Teofilovski
সেকেন্ড ক্লাস রেফিউজি?
‘‘বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ইরানি, নেপালি বা মরোক্কানরা কি মানুষ নন?’’ এই স্লোগান দিয়ে কাঁটাতারের বেড়ার ওপার থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন উদ্বাস্তুরা৷ তারা সবাই গেভগেলিয়া সীমান্তে আটকা পড়েছেন৷ ম্যাসিডোনিয়া শুধুমাত্র সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
মূক প্রতিবাদ
এক উদ্বাস্তু ছুঁচসুতো দিয়ে নিজের ঠোঁট সেলাই করে রেখেছেন৷ এরা নাকি ইরান থেকে এসেছেন৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও স্লোভেনিয়া – বলকান অঞ্চলের এই চারটি দেশের জন্য ইরান থেকে আসা মানুষরা ‘অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু’৷ কাজেই তাদের দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Licovski
আমলাদের খামখেয়াল
এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রায় হাজার খানেক মানুষ সীমান্তের গ্রিক তরফে অপেক্ষা করছেন৷ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে এক নজর দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে; শুধু মুখ দেখেই আন্দাজ করা হচ্ছে, উদ্বাস্তু কোন দেশ থেকে এসেছেন৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
‘হেল্প!’
একটি ইরানি মেয়ের দুই গালে লেখা ‘হেল্প!’, ‘সাহায্য করো৷’ সীমান্তের পরিস্থিতি থমথমে৷ ম্যাসিডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট গিয়র্গে ইভানভ ঝগড়া-মারামারির ‘সমুচ্চ ঝুঁকির’ কথা বলেছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
অবরোধ
গ্রিক তরফে একাধিক মালগাড়ি গত কয়েকদিন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ শত শত উদ্বাস্তু থেসালোনিকি আর ম্যাসিডোনিয়ার মধ্যের রেললাইন অবরোধ করে রেখেছেন৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
ফেরার পথ নেই
‘আমাদের গুলি করে মারো, আমরা কখনো ফিরে যাব না৷’ বাংলাদেশি তরুণটি এই শীতেও জামা খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ জাতিসংঘের উদ্বাস্তু ত্রাণ সংস্থা ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ করেছে৷ সব দেশের মানুষেরই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার অধিকার আছে, বলেছে ইউএনএইচসিআর৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
আকুল প্রতিবাদ
প্রায় দু’শো উদ্বাস্তু অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন৷ উদ্বাস্তুদের অধিকাংশ উত্তর ইউরোপে যেতে চান৷ তাদের কেউই গ্রিসে থাকতে চান না৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
শীত আসছে
শরীর গরম রাখার থার্মাল ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে শীত আটকানোর চেষ্টা করছেন কিছু মহিলা ও একটি শিশু৷ এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি পড়ছে; রাত্রে তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে যায়৷
ছবি: Reuters/S. Nenov
ত্রাণের আশা
‘জার্মানি আমাদের সাহায্য করো’ – লেখা রয়েছে পিচবোর্ডের টুকরোয়৷ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় জার্মান সরকার হাঙ্গেরিতে যে সব উদ্বাস্তু আটকা পড়েছেন, তাদের নেবার সিদ্ধান্ত করেন৷ ‘নো-ম্যানস-বর্ডার’-এ আটক উদ্বাস্তুরাও ঠিক সেই আশা করছেন৷