অ্যামেরিকার আসন্ন নির্বাচনে দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মধ্যে টেলিভিশন বিতর্কে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন৷ মাইক পেন্স প্রশাসনের সাফল্যগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে প্রথম টেলিভিশন বিতর্ক কাদা ছোড়াছুড়ি ও চরম আগ্রাসী মনোভাবের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ আগামী চার বছরের কার্যকালের জন্য দুই প্রার্থীর নীতি, পরিকল্পনা বা কর্মসূচি সম্পর্কে ভোটররা তেমন পূর্বাভাষ পাননি৷ ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দ্বিতীয় বিতর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে৷ তাই দুই শিবিরের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মাইক পেন্স ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে টেলিভিশন বিতর্ককে ঘিরে অভূতপূর্ব প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল৷ বিশেষ করে যেসব ভোটার এখনো মনস্থির করে উঠতে পারেননি, তাঁদের একটা বড় অংশ দুই শিবিরের যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন, এমনটা ধরে নেওয়া হচ্ছিল৷
বুধবার রাতে সল্ট লেক সিটিতে আয়োজিত বিতর্কে পেন্স ও হ্যারিস দর্শকদের হতাশ করেননি৷ তাঁরা নিজস্ব অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন৷ তবে দুই প্রার্থীই বেশ কিছু অপ্রিয় প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন৷ কমলা হ্যারিস ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক নীতির জোরালো সমালোচনা করেছেন৷ বিশেষ করে চলমান করোনা সংকটের মুখে অ্যামেরিকার জনগণের সুরক্ষায় চরম ব্যর্থতার জন্য তিনি ট্রাম্প ও পেন্সকে দায়ী করেন৷ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা ও পররাষ্ট্র নীতিরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি৷ হ্যারিস বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার জনগণ দেশের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার সাক্ষী হয়েছে৷''
সংবাদ মাধ্যমে ট্রাম্পের আয়কর সংক্রান্ত প্রতিবেদনের উল্লেখ করেও সোচ্চার হয়ে ওঠেন হ্যারিস৷ উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী ট্রাম্প বছরে মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়ে আসছেন৷ অন্যদিকে ট্রাম্প যেভাবে সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবায় কাটছাঁট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেন কমলা হ্যারিস৷ ট্রাম্পের মতো পেন্সও বার বার প্রতিপক্ষের কথার মাঝে বিরক্ত করার হ্যারিস প্রতিবাদ করেন৷
অন্যদিকে মাইক পেন্স গত চার বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ তিনি বর্তমান মহামারির জন্য চীনকে দায়ী করেন৷ এই রোগ মোকাবিলায় তিনি প্রশাসনের পদক্ষেপগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ পেন্স বলেন, ‘‘অ্যামেরিকার মানুষের জানা উচিত যে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দিন থেকে দেশের স্বাস্থ্যকে সবার আগে স্থান দিয়েছেন৷ চীন করোনা ভাইরাসের জন্য দায়ী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মোটেই সে বিষয়ে সন্তুষ্ট নন৷’’ সংক্রমণ মোকাবিলা করতে ট্রাম্পসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা মাস্কের ব্যবহার না করায় পেন্স সমালোচনার মুখে পড়েন৷ জবাবে তিনি বলেন, অ্যামেরিকার মানুষের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা থাকা উচিত৷
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে করের হার বাড়াবেন বলে মাইক পেন্স দাবি করেন৷ কমলা হ্যারিস অবশ্য এমন দাবি খণ্ডন করে বলেন, বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে বছরে চার লাখ ডলারের কম আয়ের কোনো মানুষের উপর তিনি বাড়তি কর বসাবেন না৷
বুধবারের বিতর্ক অনুষ্ঠানে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল৷ দুই প্রার্থীর মধ্যে তিন দশমিক ছয় মিটার দূরত্ব বজায় রেখে মাঝে প্লেক্সিগ্লাসের দেওয়াল বসানো হয়েছিল৷ বিতর্কের পর একাধিক জনমত সমীক্ষায় ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের জয় তুলে ধরা হয়েছে৷ তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে দুই শিবিরের মধ্যে ব্যবধান কম রয়েছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)
কমলা হ্যারিস: প্রথম নারী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস৷ জেনে নিন এই মার্কিন নারীর সাফল্যের গল্প৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
কমলার ইতিহাস
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকে নারীর জন্য একটি ঐতিহাসিক মোড় হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন অনেকে৷ নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনেক বাঁকের রচয়িতা হয়েছেন তিনি৷ প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট - সবই যোগ করা যায় তার নামের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/newscom/K. Dietsch
প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’
কমলা হ্যারিসের জয় মার্কিনিদের এক নতুন ভাবনায় ফেলেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের স্ত্রীকে বলা হয় সেকেন্ড লেডি৷ কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের স্বামী ডগলাস এমহফেরকেতো সেকেন্ড লেডি বলার সুযোগ নেই৷ তাই তার জন্য লাগবে হবে নতুন পদবি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ইতিমধ্যে তাঁকে ‘সেকেন্ড জেন্টলম্যান’ বলে সম্বোধন করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
জন্ম ও পরিবার
৫৫ বছর বয়সি কমলার বাবার জন্ম জ্যামাইকায় এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইন্ডিয়ান অ্যামেরিকান৷ অর্থনীতিবিদ বাবা ও জীববিজ্ঞানী মায়ের সন্তান কমলার রয়েছে মায়া নামের এক বোন৷ কমলার জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ড শহরে৷ কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় দীর্ঘদিন থাকার পাশাপাশি তামিল মা ও জ্যামাইকান বাবার মিশ্র ঐতিহ্যকে সাথে নিয়েই বেড়ে ওঠা কমলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
স্কুল জীবন
ক্যালিফোর্নিয়ার শহর বার্কলের কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাড়ায় বাস করলেও কমলা পড়তেন অভিজাত থাউজেন্ড ওকস স্কুলে৷ সেই স্কুলে এক সময় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ বর্ণভিত্তিক পৃথকীকরণের নীতি রদ হবার পর এই চিত্র বদলে যায়৷ কমলা যখন সেই স্কুলে ভর্তি হন, তখন সেখানে মোট শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ৷ কিছুদিন মায়ের সাথে ক্যানাডায় ছিলেন কমলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ
হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক হবার সময়ে নানা ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন কমলা হ্যারিস৷ ছবিতে বান্ধবী গোয়েন ভিটফিল্ডের সাথে তাকে দেখা যাচ্ছে অ্যাপারথাইড বা বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে৷ ছবিটি ১৯৮২ সালের৷ ১৯৮৬ সালে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন তিনি৷
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী ডগলাস এমহফকে ২০১৪ সালে বিয়ে করেন কমলা৷ ডগলাসের আগের পক্ষের দুই সন্তান রয়েছে, কোল ও এলা, যাদের কমলা হ্যারিসের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশেও দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Avelar
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০০৩ সালে প্রথম নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিযুক্ত হন তিনি৷ তখন থেকেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাথে তার সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে৷ পরে ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার জুনিয়ার সেনেটর পদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ও জয়ী হন৷
ছবি: Tasos Katopodis/Getty Images
উত্তরণ
সেনেটর হিসাবে তার ধারালো প্রশ্ন করার ক্ষমতা বারবার আলোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায়৷ টানা দুই টার্ম ধরে সফল অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তার কাজও আলোচিত হয়েছে এতদিন৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের মিশ্র ঐতিহ্য বিষয়ে সাবলীল আলাপ তাঁকে জনসাধারণের কাছে আরো জনপ্রিয় করে তোলে৷ এছাড়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তাঁর প্রতি সমর্থনও সাহায্য করেছে বলে মনে করেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Risberg
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
সেনেটর পদে নির্বাচিত হবার পর কমলা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন৷ সমকামীদের বিবাহের অধিকারের পক্ষে, মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে থাকার পাশাপাশি কমলা বিভিন্ন সময়ে পুলিশনীতিতে বদলের দাবি তুলেছেন৷ বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ ও পুলিশের অনৈতিকতা যেভাবে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আলোচনায় উঠে আসছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি অংশগ্রহণ যথাযথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷