1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ইতিহাস চর্চায় সরকারের মাথা না গলানো ভালো’

১২ মার্চ ২০২১

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ইতিহাস চর্চার বিষয়টি সরকারের হাতে চলে গেলে আর ইতিহাস চর্চা হয় না৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন সেটি আগে শোনেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ইতিহাস চর্চার বিষয়টি সরকারের হাতে চলে গেলে আর ইতিহাস চর্চা হয় না৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন সেটি আগে শোনেননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
ছবি: DW

ডয়চে ভেলের ইউটিউব টক শো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ এবারের বিষয় ছিল, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি৷ আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং মহিউদ্দিন আহমদ৷ অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়৷ শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ জিয়াউর রহমান অনেককে গুলি করে হত্যা করেন৷ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ঐতিহাসিক ৭ মার্চের আলোচনায় সভায় তিনি বলেন, ‘‘চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল ২৫ মার্চ, তাদের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিল, তার মধ্যে জিয়াউর রহমান একজন৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে যে বাঙালিরা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিল, জাতির পিতার নির্দেশে যারা সেদিন রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছিলো, তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে৷’’

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এই স্টোরিটা আমার নতুন মনে হলো৷ আমি এতদিন যেই স্টোরিটা জানতাম, সেটা হচ্ছে, অসহযোগ আন্দোলনের কারণে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্টাররা রাজি হচ্ছিল না৷ অস্ত্র খালাস তো আর মেজররা করে না৷ সেখানে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যে অফিসারদের ডিউটিতে পাঠানো হতো৷ ২৫ মার্চ সারাদিন ডিউটিতে ছিলেন মীর শওকত আলী৷ ...রাতের বেলা জিয়াকে সেখানে পাঠানো হয়৷ তিনি বন্দর পর্যন্ত যেতে পারেননি৷ যখন ঢাকা থেকে ক্র্যাকডাউনের খবর আসলো কর্নেল অলির কাছে (তিনি বিষয়টি অন্যদের জানানোর পর) ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান গেলেন, উনি পথের মাঝখানে জিয়াকে থামালেন, কারণ, জিয়া ব্যারিকেড সরাতে যাচ্ছিলেন৷’’ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সেখান থেকে জিয়াকে খালেকুজ্জামান ফিরিয়ে আনেন৷ এরপর তিনি পুরো ইউনিট নিয়ে বিদ্রোহ করেন৷’’ তিনি জানান, এমনটাই তিনি সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকারে জেনেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী ৭ই মার্চে যা বলেছেন তা এর আগে শোনেননি বলেও জানান তিনি৷

অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের ২৭ মার্চ রেডিওতে দেয়া ভাষণের প্রসঙ্গও উঠে আসে৷ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ১৯৭৪ সালে জিয়া লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা পেয়েছিলেন৷ ১৯৯১ সাল পর্যন্তও বিএনপি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করেনি৷ পরে বিএনপি এটি বদলোনোর উদ্যোগ নেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি তখন সংবাদ-এ কাজ করতাম৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার একটি লেখা নিয়ে আসলেন যে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন ২৬ মার্চ, ২৭ মার্চ নয়৷ সেখান থেকে পরিবর্তন হওয়া শুরু হলো৷’’ তার মতে, ‘‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে এর চেয়ে ইতিহাসের নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর কিছু হতে পারে না৷’’

মহিউদ্দিন আহমদও বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে কখনো দাবি করেননি তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ‘‘তিনি ২৭ মার্চের বিকাল বেলার কথাই বলেছেন৷ তার সহকর্মীরাও তাই বলেন৷ তবে কিছু কিছু অতিভক্ত আছে, তারা এগুলো করে৷ কিন্তু জিয়াউর রহমান জীবিত থাকাকালেও বিতর্কটা এমন ছিল না৷ আর ৭১ সালে তো এই বিতর্ক ছিলই না৷’’

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কেন চালু করতে চেয়েছিলেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মহিউদ্দিন আহমদ৷ বলেন, ‘‘একটা দলের সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ জন একটি দলের থাকার পরও একদল করতে হবে কেন? একদলীয় শাসন করতে হবে কেন? এর ব্যাখ্যা আমি আজ পর্যন্ত তাদের কাছে পাইনি৷’’

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা নিয়ে অজয় দাশগুপ্ত বলেন, এটি শুধু অসম্পূর্ণই নয় এমনকি প্রাথমিক কাজগুলোও করা হয়নি৷ সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ৷ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাত কোটি মানুষের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশগ্রহণ করেছিল৷ এক্ষেত্রে প্রকৃত গবেষণা হওয়া উচিত৷ সেটা ইতিহাস গবেষণা যেমন হয় তেমনভাবেই হওয়া উচিত৷ তিনি বলেন ‘‘ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস প্রয়োজন৷ প্রত্যেকটা পরিবারের কোনো না কোনো একটা দেখার, বলার রয়েছে৷ সেটা একটা বড় অংশ৷ নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস, রাজনৈতিক বিতর্ক পাল্টা বিতর্ক, ক্ষমতা দখলের জন্য মুক্তিযুদ্ধ যখন একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই সময়টা যখন অতিক্রম করে যাবে, প্রকৃত ইতিহাস আমাদের দেশে গড়ে উঠবে৷ প্রত্যাশা থাকবে তরুণ প্রজন্ম, তরুণ গবেষকরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন৷’’ 

অন্যদিকে মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চায় গবেষকরা তাদের হয়ে ক্রোড়পত্র লিখুক৷ ‘‘ইতিহাস চর্চার বিষয়টা সরকারের হাতে চলে গেলে আর ইতিহাস চর্চা হয় না৷ এখানে সরকারের মাথা না গলানোই ভালো,’’ বলেন এই গবেষক৷

এফএস/এসিবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ