টিগ্রের দখল তারা আগেই নিয়েছিল। এবার ঐতিহাসিক লালিবেলাও দখল করল টিগ্রে ফৌজ। ইথিওপিয়ার সেনা পালিয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন ধরে ইথিওপিয়ার টিগ্রে শহর নিয়ে লড়াই হয়েছে টিগ্রে বাহিনীর সঙ্গে ইথিওপিয়ার সেনার। ইথিওপিয়ার সেনা প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কার্যত টিগ্রে অবরুদ্ধ করে টিগ্রে ফৌজের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিল। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। টিগ্রে নিজেদের দখলে রেখেছে টিগ্রে ফৌজ। এবার টিগ্রে থেকে এগোতে শুরু করেছে তারা। ঐতিহাসিক লালিবেলা শহর বুধবার দখল করেছে তারা। এই লালিবেলাতেই আছে দ্বাদশ শতকের একটি পাথরের চার্চ। যা ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ। লালিবেলা দখলের পরেই ইউনেস্কো টিগ্রে ফৌজের কাছে আবেদন জানিয়েছে, তারা যেন গির্জাটির ক্ষতি না করে। সহিংসতার বর্জনের আর্জিও জানানো হয়েছে জাতিসংঘের তরফে।
যুদ্ধ নয়, খাদ্য চাই
ইথিওপিয়ার টিগ্রেতে সাড়ে তিন লাখ মানুষ অনাহারে মৃত্যুর অপেক্ষায়। ৫৫ লাখ মানুষ চরম খাদ্য সংকটে। জাতিসংঘের রিপোর্টে প্রকাশ।
ছবি: Omer Erdem/AA/picture alliance
মন্বন্তর পরিস্থিতি
জাতিসংঘের খাদ্য সংক্রান্ত সংস্থা একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, টিগ্রের সাড়ে তিন লাখ মানুষ মন্বন্তর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ৫৫ লাখ॥ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোমালিয়ায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ংকর।
ছবি: AP
খাবার নেই শিশুদের
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মন্বন্তরে সোমালিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল শিশু। টিগ্রের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
ছবি: Mahmoud Hjaj/AA/picture alliance
জি সেভেনে আর্জি
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান মার্ক লোকক বৃহস্পতিবার একটি উচ্চপর্যায়ের ভারচুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে জি সেভেন নেতাদের কাছে তিনি আর্জি জানান, টিগ্রে নিয়ে যেন আলোচনা করেন তারা। অনাহার কমানোর প্রস্তাব নেন।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
অর্থের প্রয়োজন
জাতিসংঘের বক্তব্য, টিগ্রের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। তবে এখনো পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের কাছে খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। শক্তিশালী দেশগুলি যেন সেই অর্থের ব্যবস্থা করে। নইলে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ছবি: Maria Gerth-Niculescu/DW
খাবার পৌঁছানো যাচ্ছে না
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গ্রামের ভিতর এখনো খাবার পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। অস্ত্র নিয়ে গ্রামের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মোকাবিলা করার জন্যও এগিয়ে আসতে হবে শক্তিধর দেশগুলিকে।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
ইথিওপিয়া সরকার এবং টিপিএলএফ
ইথিওপিয়ায় নতুন সরকার গঠনের আগে থেকেই টিগ্রের ক্ষমতা দখল করে রেখেছে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট। নতুন সরকারের সঙ্গে তাদের তীব্র লড়াই হচ্ছে। তারই জেরে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। অনাহারে ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ।
ছবি: Minasse Wondimu Hailu/AA/picture alliance
কবে থামবে যুদ্ধ
যুদ্ধ কবে থামবে, কেউ জানে না। পার্শ্বর্তী রাষ্ট্রগুলিও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচাতে হবে, এমনই সংকল্পের কথা বলা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। তার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছবি: Baz Ratner/REUTERS
7 ছবি1 | 7
স্থানীয় মানুষের বয়ান
স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, বুধবার কোনো রক্তপাত হয়নি। টিগ্রে বাহিনী প্রচুর অস্ত্র নিয়ে প্রথমে শহর ঘিরে ফেলে। তারপর ভিতরে ঢোকে। কিন্তু তাদের আটকানোর মতো কেউ ছিল না। স্থানীয় তরুণ এবং যুবকরা একটি বাহিনী তৈরি করেছিল। এতদিন তারা ইথিওপিয়া সেনা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করত। টিগ্রে বাহিনী আসছে শুনে তারা পালিয়ে যায়। পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স এবং অস্ত্র নিয়ে তারা পালায়। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, লালিবেলার মানুষ ওই বাহিনীর কাছ থেকে বন্দুক চেয়েছিল। কিন্তু তাও দেওয়া হয়নি তাদের। ফলে টিগ্রে ফৌজের কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়নি। ইথিওপিয়ার সেনাও ওই অঞ্চল ছেড়ে অনেক আগেই পালিয়ে গেছে।
ইথিওপিয়ার শাসকের কাছে টিগ্রের লড়াই ছিল সম্মানের লড়াই। এবার লালিবেলাও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে খানিকটা ব্যাকফুটে সরকার। নতুন করে সেখানে অভিযানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্য প্রায় তিন লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালানো হয়েছে। তীব্র অনাহার শুরু হয়েছে ইথিওপিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এর মধ্যে যদি ফের লড়াই শুরু হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরো খারাপ হবে।